কুমিল্লার মাঠে ঘুরে ফিরে কৃষকদের নিরাপত্তার বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষক বন্ধু মতিন সৈকত

কুমিল্লা দাউদকান্দি উপজেলা

১৯ এপ্রিল ২০২০, করোনা ভাইরাসে বিশ্ব এখন স্তব্ধ। বাংলাদেশ ও চরম ঝুঁকির মধ্যে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে কয়েক হাজার লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। ৮৪ জন মারা গেছে। সরকার জনগণের নিরাপত্তায় সারাদেশ লকডাউন করে দিয়েছে। বৈশ্বিক কৃষি উৎপাদন হুমকির মধ্যে। ১৪৭৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের বাংলাদেশে জনসংখ্যা প্রায় বিশ কোটি। সারাদেশের মানুষ লকডাউনে থাকলেও তাদের খাদ্য উৎপাদনের কাজ করে কৃষক। ক্ষেতে-খামারে ফসল উৎপাদনের জন্য বিপদ উপেক্ষা করে ও কৃষক কাজ করছে।কৃষক যেনো নিরাপদে থেকে ফসল উৎপাদন করতে পারে তাদের সহযোগিতা দিচ্ছেন মতিন সৈকত। তিনি ফসলের মাঠে ঘুরে ফিরে তাদেরকে নিরাপত্তার বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন।

কৃষকবন্ধু মতিন সৈকত একজন বহুমাত্রিক সমাজকর্মী। ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে বিষমুক্ত ফসল নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, খাল-নদী পূনঃখনন আন্দোলন, মাত্র দুইশ টাকা বিঘাপ্রতি মৌসুমব্যাপী বোরোধানে সেচ প্রদান, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ, বন্যপ্রাণী উদ্ধার এবং অবমুক্ত ও জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা এবং কল্যাণমূলক কাজে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

বিশেষ করে বোরোধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অসাধারণ। তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুর নিজের গ্রাম এবং পাশের গ্রাম পুটিয়া ও সিংগুলা তিন গ্রামের মধ্যবর্তী ১৫০ বিঘা বোরোধানের জমিতে পৌষ থেকে জৈষ্ঠ্য ৬ মাস। ধান লাগানো থেকে পাকা ধান কাটা পর্যন্ত মৌসুমব্যাপী যার যতোবার সেচের পানির প্রয়োজন ততবারই সেচের পানি সরবরাহ করে যাচ্ছেন বিঘাপ্রতি এককালীন মাত্র দুইশ টাকার বিনিময়ে।
তার আশেপাশে অনান্য সেচ প্রকল্পে কৃষক সেচের পানির জন্য ১০০০থেকে ২০০০ টাকা দিতে হয়। সেখানে মতিন সৈকত প্রায় বিনামূল্যে ত্রিশ বছর যাবত দুইশ টাকায় সেচ দিয়ে জাতীয়ভাবে দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছেন।

বোরোধান চাষে সেচের পানির বিকল্প নেই। সেচের জন্য তার এলাকার নদী কালাডুমুড় পূনঃখননের জন্য বিশ বার মানববন্ধন, সংবাদ সন্মেলন, কোদাল মিছিল, প্রতীকি অনশনের পাশাপাশি নিজের উদ্যোগে এবং খরচে দাউদকান্দির গৌরীপুর থেকে ইলিয়টগন্জ পর্যন্ত ৪১৮৫০ ফুট প্রায় তের কিলোমিটার নদী’র দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে খননের জন্য জমা দিয়েছেন।
২০০৭ সালে এবং ২০১৫ সালে তার উদ্যোগ আড়াই কিলোমিটার নদী পূনঃখনন করা হয়।
নদীটি পূনঃখনন হলে চারটি উপজেলার আনুমানিক ৫০,০০০ বিঘা জমির প্রায় ১২৫০,০০০ মণ বোরোধান ফলনে সহায়ক হবে। তিনি কালাডুমুর নদী পূনঃখননের জন্য উপজেলা এবং জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্হানীয় এম,পি মহোদয়, বিএডিসি চেয়ারম্যান, জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান, সচিব মহোদয়, কৃষি মন্ত্রী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে দাবি জানিয়েছেন।

তার নিরলস প্রচেষ্টায় কালাডুমুর নদী পূনঃখননের জন্য সরকার অর্থ বরাদ্দ এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করেছে। শিঘ্রই খনন কাজ শুরু হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে নতুন নতুন জাত নিজে চাষ এবং কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করেন। তিনি আই,পি,এম, আই,সি,এম, আই,এম,এফ এবং সি,আই,জি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কৃষক সংগঠক। F,A,O কর্তৃক বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে মাস্টার ট্রেইনার।
দাউদকান্দি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠিত ১৫৪ টি আই,পি,এম- আই,সি,এম ক্লাবের সমন্বয়ে মতিন সৈকত বিষমুক্ত মডেল উপজেলা বাস্তবায়নে জন্য দাউদকান্দি উপজেলা কেন্দ্রীয় আইপিএম- আইসিএম ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে ২০০৬ সাল থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। সে থেকে দাউদকান্দি উপজেলাকে বিষমুক্ত মডেল উপজেলা বাস্তবায়নে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। ২০১৫ সালে উপজেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সমন্বয়ে জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা F,A,O দাউদকান্দিতে নিরাপদ খাদ্য উপজেলা ঘোষণা করে।

মতিন সৈকত প্রত্যেক বছর ফসলের মৌসুমে ঢোল পিটিয়ে, মাইকিং করে বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং ক্ষেতে খামারে কৃষকের ঘরে গিয়ে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনের আহবান জানান। কৃষকের ধানের জমিনে পার্চিং এবং অনান্য ফসলে সেক্সফেরোম্যান ট্যাপের ব্যবস্হা করে দেন।
দাউদকান্দি প্লাবন ভূমিতে মৎস্য চাষে মডেল। শুকনো মৌসুমে এক ফসলী জমিতে বোরোধানের আবাদ শেষে হাজার হাজার হেক্টর জমি বর্ষায় পরিত্যক্ত, অনাবাদি থাকে। মতিন সৈকত এলাকার কৃষক শ্রমিক জনগণকে সাথে নিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গণশেয়ারের ভিত্তিতে সমাজভিত্তিক আদমপুর, পুটিয়া,সিংগুলা তিন গ্রামের মধ্যবর্তী ২৫০ বিঘা বোরোধানের মাঠে চারদিকে নতুন রাস্তা তৈরি করে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আপুসি মৎস্য চাষ প্রকল্প। একই ভাবে আদমপুর, পুটিয়া, বিটমান তিন গ্রামের মাঝখানের ৪০০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেন আপুবি মৎস্য প্রকল্প।
পুটিয়াতে ১০০ বিঘা প্লাবন ভূমিতে করেন বিসমিল্লাহ মৎস্য চাষ প্রকল্প।

এসব মৎস্য প্রকল্পগুলো প্রতিষ্ঠার ফলে ধানের পাশাপাশি মাছ উৎপাদন বেড়েছে। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমেছে। স্হানীয় জনসাধারণের অর্থ -পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় জীবনে যোগান দিচ্ছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি বেকারত্ব দূরীকরণ হয়েছে। কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন রাস্তা-ঘাট হাট-বাজারের সৃষ্টি হয়েছে। অপরাধ প্রবনতা কমেছে। মাছে ভাতে বাঙ্গালী কথাটির স্বার্থক প্রতিফলন ঘটেছে। এককথায় স্হানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে মতিন সৈকতের অবদান অনস্বীকার্য।

মতিন সৈকত তার কাজ কে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছেন। কাজের স্বকৃীত হিসাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অভিনন্দন পত্র পেয়েছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দুইবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকে ভূষিত করেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে চারবার চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্হান অর্জন করেন। জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা F,A,O – কানাডা বাংলাদেশ সেন্টার কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছেন।
বিবিসি টেলিভিশন তাকে নিয়ে ডকুমেন্টারি নির্মাণ করে। বাংলাদেশের প্রায় টেলিভিশন এবং জাতীয় দৈনিক তার উপর প্রতিবেদন প্রচার করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *