শাহীন সুলতানা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তোফাজ্জল হক বলেছেন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐতিহাসিক ভাষনে “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ” এই ভাষনে উদ্ধেলিত হয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। আমরা মুক্তিযোদ্ধা। আমরা আমাদের এই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এটা এই বিশ্বের সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেন ও করবেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া আমাদের বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতো না। কিন্তু ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের কয়েকজন সেক্টর বা সাবসেক্টর কমান্ডার আর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ব্যতিত আর কারও নাম উল্লেখ নেই এবং কোন দিন থাকবেও না। আমরা প্রত্যেকে এই রাষ্ট্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই।
আর এই স্বীকৃতি দিতে পারেন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। বর্তমানে জাতীয় সংসদে তার দল ও জোটের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার কারণে তাঁর কাছে আমাদের বিনীত নিবেদন সংবিধান সংশোধন করে পরিশিষ্টে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা সংযোজন করুন।
আমরা মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট সন্তান” এই বাক্যটি স্বাধীনতার পর থেকে সকলের মূখে বার বার শুনেছি। কিন্তু জাতির সর্বশ্রেষ্ট সন্তান হিসেবে রাষ্ট্র আমাদের কতটুকু সম্মান আর শ্রদ্ধা দিয়েছে? রাষ্ট্র তথা সরকার বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা প্রদান করছে, সরকারী হাসপাতালে বিনা ব্যয়ে চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এটি যে গরীব নিঃস্ব মুক্তিযোদ্ধাদের কত বড় উপকার হচ্ছে তা ভাষায় বর্ণনাতীত। এই জন্য আমরা সরকার তথা রাষ্ট্রের এবং জনগনের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞ।
আমরা সম্মান চাই, জীবিত অবস্থায় সম্মান ভোগ করতে চাই। জীবিত অবস্থায় আমরা কি যথাযথ সম্মান পাচ্ছি? রাষ্ট্র অবশ্য মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের শেষ বিদায়ের সময় গান স্যালুট প্রদানের ব্যবস্থা করে থাকেন। পুলিশের একটি দল এসে সশস্ত্র সালাম জানিয়ে যায়। কিন্তু পৃথিবীর কোন ধর্মেই উল্লেখ্য নেই যে মৃত ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর তাকে কি সম্মান বা খেতাব বা পুরস্কার দেওয়া হলো তা কি জানতে পারেন, মৃত্যুর পর যে সম্মানেই ভূষিত করা হউক না কেন সেটি মৃত ব্যক্তি দেখা বা জানার কোন সুযোগ নাই।
যারা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের ৮০ শতাংশেরও বেশি ছিলেন গ্রামের নিরক্ষর কৃষক বা ভূমিহীন কৃষক অথবা তাদের সন্তান। জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের কারও বর্তমান বয়স ৬৫ এর কম হওয়ার কথা নয়। ইতিমধ্যে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি হয়ে যাবে মৃত্যুবরন করেছেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা শুধু এই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাই নয়, বর্তমানে এই দেশের সিনিয়র নাগরিকও বটে। অথচ বড় অফিসারদের কথা বাদই দিলাম একজন মুক্তিযোদ্ধা কোন উপজেলায় কোন কাজে গেলে সংশ্লিষ্ট অফিসে যথাযথ সম্মান পান না, অনেক অফিসাররা বসতে বলার মত সৌজন্যও সব সময় প্রর্দশন করেন না। আমাদের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে আমাদের রাষ্ট্রের বেতনভোগী কর্মকর্তা, কর্মচারী পর্যন্ত আমরা জীবিত থাকা মুক্তিযোদ্ধা কে অনেক সময় নুন্যতম সম্মানটুকু দেন না বা দিতে চান না। মৃত ব্যক্তির প্রতি কতটুকু রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদর্শন করা হল তার চেয়ে জীবিত এবং বর্তমানে এই বৃদ্ধাবস্থায় একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রতি কি আচরণ করা হচ্ছে সেটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আমরা রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে ভি.আই.পি মর্যাদা চাই, জীবিত অবস্থায় সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। অনেক সময় বড়লোক ব্যবসায়ী সি.আই.পি এবং উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ভি.আই.পি হিসেবে পথে, ঘাটে, বিমানে, রেলে, বাসে, সার্কিট হাউজে ও রেষ্ট হাউজে কত সম্মান ও সুবিধা পান। আমাদের জীবিত অধিকাংশ (ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সবাই) মুক্তিযোদ্ধারা বিমানে চড়াতো দুরের কথা, ভূমিতে বিমানই দেখেননি। তারা যেন অন্তত রেলে, বাসে চড়া বা সরকারী কর্মকর্তার সাথে দেখা করা, অতি প্রয়োজনে রেষ্ট হাউজ বা সরকারী সার্কিট হাউজে থাকার মতো ভি.আই.পি মর্যাদা পান, রাষ্ট্রীয় বা সরকারী কোন অনুষ্ঠানে বসার জন্য একখানা সংরক্ষিত চেয়ার পান এর জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আর্কষন করছি। এতে সরকার বা রাষ্ট্রের কোন আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই। যার ফলে অর্থ দপ্তরে ফাইল গেলেই আমলারা তা আটকে দেবেন বলে এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা দৃঢ়ভাবে জানি ও বিশ্বাস করি যে, প্রধানমন্ত্রীর মুখের একটি কথায় আমরা অনেক সম্মানজনক অবস্থায় চলে যাবো। কোন ফাইল চালাচালি করতে হবে না। কেবল একটা সার্কুলার বা গেজেট নোটিফিকেশেনই যথেষ্ট। আমরা শুনেছি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে দেশের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেওয়া সৈনিক এবং অফিসার সর্বত্র রাষ্ট্রীয়ভাবে অত্যন্ত সম্মান ও সুযোগ পেয়ে থাকেন। দেশের শ্রেষ্ট সন্তান ও সিনিয়র সিটিজেন হিসাবে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ভি.আই.পি মর্যাদায় বাস্তবে অভিষিক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবিনয় আবেদন জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী অনেক লোক-লস্কর নিয়ে বিদেশ সফর করেন। এর মধ্যে সকলেই যে ওই সফরে অবদান রাখেন তা কিন্তু নয়। আমি প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন জানাব আপনার প্রতি সফরে একেবারে তৃনমূল পর্যায়ের (উপজেলা) ৫/৭জন মুক্তিযোদ্ধাকে সফরসঙ্গী করার জন্য। যারা অন্তত আপনার কল্যাণে বিমানে করে বিদেশে গিয়ে পাঁচ তারা হোটেলে অবস্থান করে গর্বিত হবেন এবং আপনাকে চিরজীবন মনে রাখবেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মুক্তিযোদ্ধাদের জীবিত থাকাবস্থায় বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়ে দেশ ও জাতির কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।