গোপালগঞ্জের সীমান্তবর্তী রাজৈরের কদমবাড়ি দিঘীরপাড় গ্রাম এখন ভয়ংকর খুন ও গুমের
জনপদে পরিনত হয়েছে। গত দুই বছরে ওই এলাকায় একের পর এক ৬টি খুনের ঘটনা ঘটে।
এলাকার মানুষেরা খুন ও গুম আতঙ্কে দিন কাটাছে। স্থানীয় আধিপত্য ও সাতন্ত্র রাজনৈতিক
বলয় সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি মহল এসব অপকর্মের নেপথ্যে মদদ দিচ্ছেন বলে এলাকার নিরীহ
মানুষের অভিযোগ। গোপালগঞ্জের সাতপাড় ইউনিয়নের ভেন্নাবাড়ি সম্মিলিত উচ্চ
বিদ্যালয় মাঠে দিঘীরপাড় গ্রামের নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার ধনঞ্জয় বাড়ৈর মা কবিতা
বাড়ৈ শনিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার পর থেকে তারা হত্যাকারিদের
ভয়ে ঘর-বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এলাকায় তাদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। ফলে
তারা পার্শ্ববতী গোপালগঞ্জের হিন্দু অধ্যুষিত সাতপাড় ঐ এলাকায় আত্মীয়-স্বজনদের
কাছে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। নিহত ধনঞ্জয়ের স্ত্রী সঙ্গীতা বাড়ৈ বলেন, তার স্বামী
পেশায় একজন স্বর্ণকার। প্লাবন নামে তার দেড় বছরের একটি সন্তান রয়েছে। কদমবাড়ি
ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার গোলক সরকার বেশ কিছুদিন ধরে দিঘীরপাড়া এলাকায়
তার ঘেরের মধ্যে অবৈধ নারী ব্যবসাসহ অসামাজিক কার্যকালাপ চালিয়ে আসছিল।
মেম্বারের এসব অপকর্ম তার স্বামী ধনঞ্জয় দেখে ফেলেন ও লোকজনের কাছে বলে দেন। এছাড়া
জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধনঞ্জয়ের চাচাতো ভাই সুজন বাড়ৈর সাথে তার
বিরোধ চলছিল। এসব কারনে ধনঞ্জয়কে গোলক মেম্বারের সহযোগিতায় পরিকল্পিতভাবে
হত্যা করা হয়েছে। একমাত্র সন্তান ও বৃদ্ধ শশুর-শ্বাশুড়িকে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে
বর্তমানে তাদের দিন কাটছে। হত্যাকারিরা মামলা তুলে নিতে তাদের বিভিন্ন রকম ভয় ভীতি
প্রদর্শন ও চাপ দিচ্ছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের স্মরণাপন্ন হলেও তাদের অসহায়ত্বের কথা কেউ
প্রকাশ করেননি। অদৃশ্য কারনে তাদের কোন খবর মিডিয়ায় আসেনা। হত্যাকারিরা
প্রভাবশালী হয়ায় স্বামীর হত্যাকারিদের সুষ্ঠু বিচার পাবেন কিনা, এনিয়েও তার সংশয়ের
কথা জানান তিনি। নবালক সন্তানসহ তার পরিবারের নিরাপত্তা ও স্বামীর হত্যাকারিদের
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। কদমবাড়ি ইউনিয়নের
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দীনেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, কদমবাড়ি এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত
একটি এলাকা। বর্তমানে জনপদটি খুন, গুম ও সন্ত্রাসের অভয়অরণ্যে পরিনত হয়েছে। এলাকায়
গত দুই বছরে ৬টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। একসময় এলাকায় শান্তির পরিবেশ বিরাজ করত।
স্থানীয় অধিপত্য সৃষ্টি ও সতন্ত্র রাজনৈতিক বলয় সৃষ্টি করে ফয়দা লুটতে এলাকায় কয়েক জন
গড ফাদারের জম্ম হয়েছে। বর্তমানে তারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রন করছে। এদের লাগাম টেনে
ধরার কেউ নেই। এমনকি ভয়ে নাম বলতেও চায় না কেউ। ফলে খুন, হত্যা ও গুম এখন
নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। ওইসব গডফাদারদের অপকর্মের প্রতিবাদ করতে
গিয়ে ধনঞ্জয় বাড়ৈসহ আরও ৬ ছজনের প্রাণ দিতে হয়েছে। এসব হত্যাকান্ডের সাথে
জড়িত গড ফাদারদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।কদমবাড়ি
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অপূর্ব কুমার গাইন বলেন, ধনঞ্জয় বাড়ৈ
হত্যাকান্ডের সাথে কদমবাড়ি ইউপি’র একজন মেম্বার জড়িত। ওই মেম্বারের অপকর্মের
পিছনে কাদের মদদ আছে তারও তদন্ত হওয়া দরকার। কদমবাদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
বিধান বালা বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে খুনের সমর্থন করি না। খুনি যেই হোক না কেন,
তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে।