সোনারগাঁয়ে মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসন।

নারায়ণগঞ্জ

দৈনিক আজকের মেঘনা, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনা নদীর তলদেশের মাটি ড্রেজারের সাহায্যে লুট করে নিচ্ছে স্থানীয় বালু সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট।

সরেজমিন ঘটনাস্থলে গেলে এলাকাবাসী জানান,উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নে আমানগ্রুপ বরাবর রান্দিরখাল মুখে সরকারের কোনো ইজারা ছাড়াই ১৫/২০ টি ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন ও রাতের আধারে মেঘনা নদীর বালু কেটে বড় বড় বাল্কহেট দিয়ে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে সংঘবদ্ধ একটি বালু সন্ত্রাসী চক্র।স্থানীয়রা বাধা দিলে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত থাকা ওই সিন্ডিকেটের লোকজন হামলা চালায় তাদের উপর।

প্রকাশ্যে নদীর বালু কেটে লুটপাট করলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।বালু লুট করে সন্ত্রাসীরা কোটিপতি বনে যাচ্ছে,এদিকে ঐতিহাসিক সোনারগাঁ চলে যাচ্ছে মেঘনা নদীর করাল গ্রাসে,আর জেনেও না জানার ভান করছে প্রশাসন।এমনটাই বলছিলেন এলাকার সাধারণ জনগন।

ইতিমধ্যে নদীর তীরবর্তী এলাকায় বালু কাটার ফলে নদীগর্ভে বিলীন হতে যাওয়া গ্রামবাসী বালু সন্ত্রাসীদের বাধা দেওয়ার কারণে সন্ত্রাসীরা গ্রামবাসীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করার ঘটনাও ঘটেছে।প্রতিবছরই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলে বালু সন্ত্রাসীদের রাজত্ব।

গেলো বছরও বালু সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে নুরু মিয়া, আমজাদ হোসেন, আলমগীর মিয়া, নুর হোসেন সহ ১০-১৫ জনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করাসহ তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানী করছে বলেও এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।বালু সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে গোপনে আতাঁত করে প্রকাশ্যে বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তারা।আনন্দবাজার এলাকার বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে তার ছেলে রকি মিয়া ও সহযোগী মামুন,নজরুল, রুবায়েত হোসেন শান্ত-সহ ২০/২৫ জনের একটি চক্র স্থানীয় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে নদীর বালু অবৈধ ভাবে লুট করছে।

অবৈধভাবে বালু কেটে নেওয়ার কারণে বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী গ্রাম আনন্দবাজার, মামরকপুর, হারিয়া, সোনাময়ী, সাতভাইয়াপাড়া সহ সাতটি গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়িঘর ও ফসলি জমি ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, যারা আমাদের নিরাপত্তা দিবে সেই জনপ্রতিনিধিরাই অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আমাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন করে দিচ্ছে।তারা বলেন,আমাদের বসত ভিটা রক্ষার দাবীতে একাধিকবার ইউএনওকে স্মারকলিপি, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছি।আন্দোলন করার পর প্রশাসন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।অভিযোগের পর প্রশাসনের লোকজন মোবাইল কোট বসিয়ে ড্রেজার শ্রমিকদের সামান্য জড়িমানা করেই দায়িত্ব শেষ করছেন। ড্রেজার জব্দ না করায় তারা ঐ স্থান ত্যাগ করার সাথে সাথেই আবার বালু কাটা শুরু করে বলে জানান তারা।

এ ব্যাপারে বৈদ্যের বাজার ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন জানান, প্রতিদিন ১০-১৫ টি ড্রেজার অবিরামভাবে বালু উত্তোলন করছে।আমিও আমার ছেলে রকি এই বালু কাটার সাথে জড়িত না।তবে আমার একটি মাত্র আনলোডিং ড্রেজার রয়েছে।

এব্যপারে ইসমাইল মেম্বারের ছেলে রকি বলেন,আমাদের একটা ড্রেজার রয়েছে যা (আমান গ্রুপ) কোম্পানির অনুমতি সাপেক্ষে বালু কাটছে।তিনি বলেন,কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা রোবায়েত হোসেন শান্ত তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে মেঘনা নদী থেকে এই বালু অন্যত্র বিক্রি করছে।

প্রশ্ন থেকে যায় আমান গ্রুপ কোন ক্ষমতার বলে নদীতে বালু কাটার অনুমতি দিতে পারে?
জানতে চাইলে রোবায়েত হোসেন শান্ত বালু কাটার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন,আমি এই কাজের সাথে জড়িত নই,বালু কাটছে ইসমাইল মেম্বার,তার ছেলে রকি ও নজরুলের সন্ত্রাসী বাহিনী।

সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) অঞ্জন কুমার সরকার বলেন,গতকাল আমরা কোস্টগার্ডদের নিয়ে বালু সন্ত্রাসীদের ফ্রেফতার করতে গেলে তারা পালিয়ে গেছে,তিনি বলেন,সন্ত্রাসীরা যতই প্রভাবশালী হোক অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তথ্যসূত্র,সোনারগাঁও সংবাদ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.