সংসদীয় আসনের সীমানার শুনানিতে দুই গ্রুপের হাতাহাতি

কুমিল্লা চট্টগ্রাম বিভাগ তিতাস উপজেলা দাউদকান্দি উপজেলা হোমনা

মোঃ আলাউদ্দিন :জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া তালিকা নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রথম দিনের শুনানিতে দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-১ আসন এবং হোমনা ও তিতাস নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-২ আসনের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এসময় এক নারীর আঘাতে অন্য এক নারীর কপাল কেটে যায়। তবে বড় কোনো ঘটনার আগেই পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ কমিশনের সদস্যরা শুনানি গ্রহণ করেন। এতে কুমিল্লা অঞ্চলের ১৩টি আসনের পক্ষে-বিপক্ষের আবেদনকারীরা অংশ নেন।
শুনানির পর ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, দাউদকান্দি এবং মেঘনা উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-১ আসন থেকে মেঘনাবাসী হোমনার সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছেন। মেঘনাবাসীর পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিক এবং তার পক্ষে অনেক জনপ্রতিনিধিরা আবেদন করেছেন। মেঘনার বাসিন্দারা প্রশাসনিক এবং ভৌগোলিকভাবে দাউদকান্দি এবং হোমনার সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাই হোমনা ও তিতাস নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-২ আসন থেকে তিতাস উপজেলাকে বাদ দিয়ে দাউদকান্দির সঙ্গে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটার পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা, স্থানীয় সুশীল সমাজ এবং তাদের আইনজীবিরা বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।


তিনি বলেন, দাউদকান্দি উপজেলা থেকেই হোমনা উপজেলা হয়েছে। মেঘনা উপজেলা হয়েছে পরবর্তীতে তিতাস উপজেলা হয়েছে। ২০০৮ সালে বিভক্তির মাধ্যমে দাউদকান্দির সঙ্গে মেঘনা উপজেলা সংযুক্ত করে কুমিল্লা-১ আসন করা হয়েছে এবং হোমনা উপজেলার সঙ্গে তিতাস উপজেলা সংযুক্ত করে কুমিল্লা-২ আসন সংযুক্ত করা হয়েছে।
‘মেঘনাবাসীর বক্তব্য হচ্ছে, যেহেতু হোমনা থেকে বেশিরভাগ অংশ নিয়ে মেঘনা উপজেলা গঠিত হয়েছে, এতে দাউদকান্দি উপজেলা দূরবর্তী হওয়ার কারণে তাদের যাতায়াতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই তারা হোমনার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছে।’
সচিব বলেন, কুমিল্লায় এক সময় ১২টি আসন ছিল। ২০০৮ সালে একটি আসনকে সমন্বয় করে ১১টি করা হয়েছে। নাঙ্গলকোটের পক্ষে একজন সাবেক সংসদ সদস্যসহ একাধিক আবেদন পড়েছে। এখানে একটি নতুন আসন অন্তর্ভুক্তির আবেদন পাওয়া গেছে। নাঙ্গলকোট একসময় স্বতন্ত্র আসন ছিল, সেটাকে পুনর্বহালের আবেদন জানান হয়েছে।
জাহাংগীর আলম বলেন, আরও তিন দিন শুনানি গ্রহণ করা হবে। এরপর সবগুলো আসনের বিষয়ে একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গেজেট আকারে চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করবে। এই সীমানায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।


প্রথম দিনে ১৩টি সংসদীয় আসনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তবে চাঁদপুর জেলার সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনের আবেদন করা হলেও শুনানিতে কেউই অংশ নিতে উপস্থিত হননি।
এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫, কুমিল্লাা-১, ২, ৮, ৯ ও ১০ এবং নোয়াখালী-১ ও ২ আসনের ওপর শুনানি শেষ হয়। পরে নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম জানান, যেসব আসনের ওপর আবেদন জমা পড়েছে সবগুলো কমিশন শুনবেন। যেসব তথ্য-উপাত্ত আসছে, তা কমিশন বিশ্লেষণ করবে। এ বিষয়ে ইসির নীতিমালা রয়েছে। প্রশাসনিক অখণ্ডতা, ভৌগলিক অখণ্ডতা, জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা, অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জুলাইয়ের মধ্যে এটা শেষ করার কথা রয়েছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, সারাদেশের ৩০০ আসনের সীমানার খসড়া গেজেট আকারে প্রকাশ করা হলেও ৩৮টি আসনের সীমানা নিয়ে ইসিতে মোট ১৮৬টি আবেদন জমা পড়েছে। আগামী ৭ মে রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জের আপত্তিগুলোর শুনানি হবে। ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও ঢাকা অঞ্চলের সীমানার ওপর আবেদনের শুনানি হবে ১১ মে। আর বরিশাল, খুলনা এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের আবেদনগুলোর শুনানি হবে ১৪ মে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *