রাজাপুরের শাহাবানুর দর্বিসহ জীবন, হামাগুড়ি দিয়ে পথ চলা।

বরিশাল বিভাগ ঝালকাঠি
২৫ বছর আগে ৩বছর বয়সী শাহজাহানকে রেখে মারা যান পিতা শ্রমজীবী ইয়াছিন হাওলাদার। বসতভিটার সাথে সামান্য কিছু জমি (বাগান) ছাড়া আর কিছুই রেখে যেতে পারেননি ইয়াছিন হাওলাদার। মা শাহাবানু অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে পুত্র সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন। দুঃখ কষ্টে চলছিলো মা-ছেলের সংসার। প্রতিবেশীরা চাহিবা মাত্রই সাহায্য করতেন। ১০ বছর সাহায্য করে তার হিসাব রেখে বড় একটি অংক যোগ করেন সাহায্যকারী প্রতিবেশী। এরপর সেই সাহায্যের টাকা ফেরত চাইতে শুরু করে। নিরুপায় শাহাবানু সেই সাহায্যের টাকা ফেরত দিতে অসামার্থ হয়ে পড়েন। জমির প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ওই প্রতিবেশীর। শাহাবানু অসহায় হওয়ায় তাকে টাকা পরিশোধ করতে না পারায় জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে হয় তাকে। ছাড়তে হয় বসতভিটা ও বাগানটুকু। সেই ক্ষোভে ১৪বছর বয়সী পুত্র শাহজাহান মাকে ফেলে চলে যান। অন্যের ঘরে ঝিয়ের কাজ করতে গিয়ে পুকুরঘাটে হোচট খেয়ে পড়ে কোমড়ে আঘাত পান। সেই থেকে আর কোমড় সোজা করে দাড়িয়ে স্বাভাবিকভাবে হাটা ও চলাফেরা করতে অক্ষম হন তিনি। বর্তমানে শাহাবানুর বয়স ৭০ পেরিয়েছে। এখন সে দু’পায়ের হাটুতে ও দু’হাতে ভর করে চলাফেরা করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য তাঁকে একটি বয়স্কভাতার কার্ড করে দেন। চলাফেরায় অযোগ্য হওয়া এক প্রতিবেশীকে ১২০টাকা দিয়ে বয়স্কভাতার টাকা উত্তোলন করান। অন্যের বাড়িতে থেকে যা দেয় তাই খেয়ে-না খেয়ে, কখনো অর্ধাহারে আবার কখনো অনাহারে জীবনযাপন করছেন তিনি। ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার পুটিয়াখালী গ্রামের শাহাবানু এভাবেই নিজের জীবনের দুঃখ-কষ্ট গাঁথা দুর্বিসহ জীবন কাহিনী তুলে ধরেন প্রতিবেদকের কাছে। শাহাবানুর কাছে আরো জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাকে ছেড়ে ছেলে শাহাজাহান চলে গেছে। থাকে পাশের গ্রামেই। বিয়ে করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে শান্তিতেই এখন থাকছে। কিন্তু আমার কোন খোঁজ নেয় না। পড়নে একটা ভালো কাপড়ও নেই। পুরান ও ছেড়া কাপড় দিয়েই গা (শরীর) ঢেকে চলতে হচ্ছে। দাড়িয়ে হাটতে পারি না, পশুর মতো চলতে হচ্ছে। ছেলে আমার খোঁজ নেয় না। সন্তান তো পেটে ধরেছিলাম, কষ্ট করে বড়ও করেছি। এখন অভিশাপ দিয়ে লাভ কি? শাহাবানুর দাবী কেউ যদি অসহায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে থাকার জায়গা, খাবার এবং পড়নের কাপড়ের ব্যবস্থা করতো তাহলে মরার আগে একটু হলেও শান্তিতে থেকে মরতে পারতাম। পুটিয়াখালীর স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ শাহাদাত ও সদস্য মেহেদি হাসান জানান, শাহাবানুর ছেলে থাকতেও নেই। ছেলে শাহজাহান মাকে ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে থাকছে। শ্রমজীবির কাজ করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভালোই সুখে আছে। কিন্তু মা শাহাবানু আছে বিপরীতমুখী। তাঁর থাকার স্থান, খাবার ব্যবস্থা ও পড়নের কাপড় কোনটাই নেই। হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হচ্ছে তাকে। একটু পথ অতিক্রম করলেই কষ্টে হাফিয়ে ওঠেন তিনি। সঠিক চিকিৎসা ও সেবাযতœ করলে তিনিও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ফারুক মোল¬া জানান, শাহাবানু দারুন অসহায় একজন বৃদ্ধা মানুষ। চলতে পারে না, খেতে পারে না, নেই পড়নের কাপড়ও। তাই তাকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। এমন অসহায়ের পাশে দাড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *