রাজধানীতে জমে উঠেছে নতুন টাকার বাজার।

ঢাকা বিভাগ
পবিত্র রমজান মাসে ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে জমে উঠেছে নতুন টাকার বাজার।ঝকঝকে-চকচকে বিভিন্ন অঙ্কেরে এসব নোট কিনতে সাধারণ মানুষ ভীড় করছেন মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে, গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটের পাশে ও পুরান ঢাকার জজ কোর্ট পাশে।
ছবি সংগ্রহীত

ছোটদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে ঈদে সালামির জন্য কড়কড়ে ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০ টাকার নতুন নোট কিনছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ক্রেতারা।
আর এসব নতুন টাকার সর্বজনীন চাহিদা মেটাতে রাজধানীর ফুটপাতে নতুন নোটের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছে শতাধিক লোক।দেখা যায়, মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের সেনা কল্যাণ ভবনের সামনে টাকা বিক্রি করছেন রহিমা বেগম।
একজন ক্রেতার কাছে তিনি একশো টাকার বান্ডেল বিক্রি করে বেশি দিয়ে নিচ্ছেন ৮০ টাকা।
জানতে চাইলে রহিমা জানায়, তিনি একজনকে সাথে নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাউন্টারে দাড়িয়ে ১০ হাজার টাকার নতুন নোট সংগ্রহ করেছেন সকালে। তার বয়স এখন ত্রিশ পেরিয়েছে। তার রোজগারেই চলে সংসার। কোনদিন আয় হয় ৫০০ টাকা আবার কোনদিন ১ হাজার বা ১২’শ টাকার মতো।

আরো পড়ুনঃ ঢাকার ডিআইজি হলেন হাবিবুর রহমান।

বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনের ফটকে টাকা বেচাকেনার বাজার বসতে দেয়া হলেও রমজানের শুরু থেকে নিরাপত্তা বিবেচনায় বসতে দেয়া হচ্ছে না আর। তবে একটু দূরে সেনা কল্যাণ ভবনের সামনে গিয়ে বসছেন তারা।
দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের নিচতলার তিনটি কাউন্টারে ও মূল ভবনের নিচ তলায় একটি কাউন্টারে নতুন টাকা দেয়া হচ্ছে।
তার মধ্যে একটি কাউন্টার রাখা হয়েছে ব্যাংকের কর্মকর্তা ও ভিআইপিদের জন্য। এসব কাউন্টার থেকে যে কেউ পুরনো টাকা দিয়ে ৫ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত নতুন নোট নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এবার ঈদে তাদের নতুন নোট ছাড়ার লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার কোটি টাকা। বাছাই করা পুরনো ছোট নোট ছাড়া হচ্ছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। এসব নতুন ও বাছাই নোট ইতোমধ্যেই দেয়া হচ্ছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে যেমন নতুন নোট দেয়া হচ্ছে তেমনি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকেও এই নতুন নোট বদলি করে দেয়া হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের কাছে যে কেউ আসলে নির্ধারিত পরিমাণ নতুন টাকা সংগ্রহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সবারই সমান অধিকার।
একাধিক ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে বেশি দাম হচ্ছে ৫ টাকার নোটের। ৫ টাকার একটি বান্ডেল কিনতে হচ্ছে ৬৫০ টাকা দিয়ে। তাতে প্রতিটি ৫ টাকা কিনতে হচ্ছে সাড়ে ৬ টাকা।
দুই টাকার বান্ডেল মিলছে ২৮০ টাকায়। ১০ টাকার বান্ডেল মিলচে বাড়তি ৭০ বা ৮০ টাকায়। আর ৫০ বা ১০০ টাকার বান্ডেল কিনতে বাড়তি গুণতে হচ্ছে ১২০ থেকে ২০০ টাকা পযন্ত।

এসব নতুন টাকার ব্যবসা আইন সিদ্ধ না হলেও রাস্তার পাশে ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে নতুন টাকার কড়কড়ে নোট।
ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাড়িয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা ঝমেলার কাজ তাই ফুটপাত থেকেই নতুন টাকার নোট সংগ্রহ করছেন বলে জানান একাধিক ক্রেতা। নতুন টাকার ব্যবসার বিষয়ে কোন কথাও বলতে চান না এসব ব্যবসায়িরা।

রাজধানীর মতিঝিলে নতুন টাকা কিনতে আসা জহির উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদে বাড়ি যাব। ছোটদের জন্য নতুন নোট নিতে আসলাম। ৫ টাকার একটি বান্ডেল নিলাম বাড়তি ১৫০ টাকা বেশি দিয়ে।

ব্যাংক থেকে নিলে তো বাড়তি লাগতো না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওখানে দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থাকতে হয়। হাতে সময় নেই।
আবার কোন কোন সময় পাওয়া ও মুশকিল হয়ে পড়ে। মূলত ছোটদের হাতে দিতেই এসব নতুন টাকার নোট সংগ্রহ করছেন বলে জানান জহিরুল।
অপর এক ক্রেতা জানান, শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে যদি নতুন টাকা পাওয়া যেত তাহলে আরো অনেক বেশি মানুষ ব্যাংক থেকে নতুন টাকা নিত।
তার অভিযোগ, কিছু কিছু বেসরকারি ব্যাংক থেকে নতুন টাকা দেওয়ার কথা বলা হলেও ব্যাংকে গিয়ে শেষ পর্যন্ত খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নিবার্হী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, এবারের ঈদে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কিছু কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে নতুন টাকা সংগ্রহ করে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী।তারা মূলত সারা বছর ধরে পুরনো ছেঁড়া-ফাটা টাকার বদলে নতুন টাকার ব্যবসা করেন।
ঈদ এলে আবার তারাই বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে নতুন টাকার ব্যবসা করেন। দাম নেন চড়া। সময় ও সুযোগ বিবেচনায় ক্রেতাদের তাদের কাছ থেকেই অতিরিক্তি মূল্যে সংগ্রহ করতে হচ্ছে নতুন টাকার নোট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *