বাজারের চেয়ে গ্রাম মহল্লা বেশি ঝুকিপূর্ণতা,প্রশাসনের কঠোর সহযোগিতা চেয়েছেন, সাংবাদিক জুয়েল।

ভোলা

ভোলা জেলার প্রতিটি উপজেলার শহরের চেয়ে গ্রামের বেশি ঝুকিপূর্ণতা রয়েছেন। করোনা ভাইরাসের কঠিন সচেতনতায় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন সাংবাদিক জুয়েল।

এক এক করে মানুষকে মৃত্যুর মিছিলে যোগ করছে মরণঘাতী করোনা ভাইরাস। পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক, মৃত্যুর ভয়। উন্নত দেশগুলোতে মানুষজন স্বেচ্ছায় ঘর বন্দী। স্রষ্টার কাছে নতুন করে বাঁচার মিনতি করছে। সরকার বহির্বিশ্বের ন্যায় এ ভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। কিন্তু আমরা  ধুনটের মানুষ সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উৎসব আমেজে ঘোরাফেরা করে চলছি। আমাদের হুশ হবে কবে ?আমরা কবে সচেতন হবো?

পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তানের চিকিৎসক ডা. উসামা রিয়াজ তার মৃত্যুর ঠিক ৩০ মিনিট আগে হাসপাতালের বেডে শুয়ে নিজের মোবাইলে একটি ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন ‘এই ভাইরাস নিয়ে একেবারেই রসিকতা নয়। এ ভাইরাস ভয়ংকর। সাবধানে থাকুন। সচেতন থাকুন।’

অন্যদিকে ইতালিতে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে অনেক চিকিৎসক ও নার্সদের। এটি শুধু ইতালির নয় বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের চিত্র। সম্প্রতি ইতালির লোম্বার্দির একটি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত  হয় ডেনিয়েলা ট্রেজি (৩৪) নামের এক নার্স । তিনি তার শরীর থেকে যেন এ ভাইরাস অন্যদের মাঝে না ছড়ায় সে জন্য আত্মহত্যা করেন।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কেউ এগিয়ে না আসায় নিহতের চার মেয়েই বাবার লাশ কাঁধে তুলে নিয়ে গেছেন শ্মশানে।

শুধু তা-ই নয়, করোনায় আক্রান্তদের মৃত্যু হলে স্বজনরাও আজ হয়ে যাচ্ছেন পর। বাবার লাশ হাসপাতালে ফেলে রেখে সন্তান পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। পথে-ঘাটে মৃতের লাশ পড়ে থাকে। করোনা আতঙ্কে কেউ এগিয়ে আসছে না।

এদিকে মৃত্যু ঝুঁকি জেনে অসুস্থ রোগীদের সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বগুড়া ধুনটের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হয় এই জনপদের মানুষ করোনা কে ভয় করেনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিবিসির বরাত দিয়ে বিভিন্ন প্রজেকশনে বলা হচ্ছে করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে ২০ লাখ লোক মারা যাবে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এটিকে গুজব ও অতিরঞ্জিত বলে দাবী করেছেন। এতসব কিছুর পরও আমাদের হুঁশ হবে না!

এ ভাইরাস প্রতিরোধে জনসমাগম এড়াতে সরকার কলকারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। ঘরবন্দী মানুষের জন্য ব্যবস্থা করেছেন ত্রান সরবরাহের। সরকার, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দেয়া এ ত্রান সামগ্রী সংগ্রহে চলে উৎসবের আমেজ। ঘটে বড় ধরনের জনসমাগম।বগুড়া ধুনটে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করলেও সামাজিক দুরত্ব মানছে না সাধারন মানুষ।কাজ না থাকলেও বাহিরে বের হচ্ছে অনেকেই।উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে পৌর মেয়র সহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য।কিন্তু ধুনটের মানুষদের কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছেনা।তারা এই করোনাকে অবহেলার চোখেই দেখছে।
অথচ দেশে প্রতিদিনই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৃত্যুর মিছিলে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে কেউ না কেউ। আক্রান্ত হচ্ছে দেশের নতুন নতুন অঞ্চল। তারপরও ফেসবুক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি নিয়ে নানা রসিকতা করতে দেখা যায়।
হাট-বাজার, মাঠে ঘাটে এখনো বসে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাদের আড্ডা। অথচ সেই আড্ডায় আলোচনার বিষয়বস্তু মরণঘাতী এ করোনাভাইরাস। এ যেন এক ছেলেখেলা।
এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশের পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো হয়েছে। তাদের চোখ ফাঁকি দিতে পারলে মনে হয় অনেক কিছু জয় করে ফেলেছি। কিন্তু মরণঘাতী করোনা ভাইরাসকে কি জয় করতে পেরেছি। নাকি ভয়ঙ্কর বিপদকে আমন্ত্রন জানাচ্ছি।বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় যে, ইটালিতে করোনা সনাক্ত হওয়ার ৪৫ দিনে, স্পেনে ৫০তম দিনে যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ দিনে মহামারী রূপ নেয়। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হওয়ার ২৮তম দিন শেষ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২৪তম দিনে রোগী ছিলো ১১ জন। আর বাংলাদেশে ৬০ জন, মৃত্যুবরণ করেন ৮ জন। অনেকে মনে করেন, এই ভাইরাস সনাক্ত হতে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। আমাদের দেশের জনগণের সামাজিক নিরাপত্তার নিয়ম মেনে চলার আগ্রহ খুব দেখা যাচ্ছে না। আমরা কেন সাবধান হচ্ছি না, যেখানে বিশ্বের ২৩০টি দেশের মধ্যে ২০৫ ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। আমরা কবে সচেতন হবো, সতর্ক হবো। আমরা জানি বাঙালি হুজুগে জাতি। এরা যুক্তি তর্কের ঊর্ধ্বে থেকে আবেগ দ্বারা তাড়িত হন। সামাজিক মাধ্যমে একজন রসিকতা করে স্টেটার্স দিয়েছেন, ‘বাঙালি বেহেস্ত গেলেও বিকেলে দোযখটা দেখার জন্য ঘুরতে বের হবে’। যদিও রসিকতা, কিন্তু এটাই বাঙালির ক্ষেত্রে বাস্তব।
লকডাউন অবস্থায় শহরে ও গ্রামে হাটবাজার বন্ধ থাকার কথা কেবল ওষুধ, খাদ্যপণ্যের দোকানগুলো ছাড়া। সরকার খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য গতকাল ঘোষণা দিয়েছে কৃষি উপকরণ, কীটনাশক, সার প্রভৃতির দোকান খোলা রাখতে।
শহর ও গ্রামে নিম্ন আয়ের বিশেষ করে যারা দিনে এনে দিনে খায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কাজ না থাকলে যা হওয়ার কথা। তাদের তো কাড়ি কাড়ি টাকা নেই যে, খাদ্য মওজুত করবে। তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থায়। ধুনটে এমপি পুত্র,উপজেলা প্রশাসন,পৌরসভা,গুটি কোয়েক শিক্ষক সমাজ,স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলো প্রতিদিন সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করলেও  বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও দানশীল ব্যক্তিবর্গ খাদ্য সহায়তার নামে করোনা ছড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। যা অতি লজ্জাকর। দেখা গেছে, তারা খাবার নিয়ে যাওয়া মাত্র শত শত মানুষ খাদ্যের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আবার এমনও দেখা গেছে একটি সাবান দেওয়ার জন্য পাঁচজন দাঁড়িয়ে ফটোসেশন করছে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এ ধরনের ফটোসেশনের ছবি ভাইরাল হচ্ছে। অন্যদিকে, টিসিবির নায্যমূল্যে খাদ্যদ্রব্য কেনার জন্য শত শত মানুষের ভিড়। এসব ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্বের বালাই নাই।এতসব কিছুর পরও আমাদের হুঁশ হবে না!আমরা কবে সচেতন হবো।আসুন আমরা অবহেলা না করে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *