গাড়ি ছিনতাই করে চোরাই মার্কেটে বিক্রিই ছিল উদ্দেশ্য

বাংলাদেশ

গাড়ি ছিনতাই করে চোরাই মার্কেটে বিক্রির উদ্দেশ্যেই রাজধানীর উত্তরায় উবার চালক আরমানকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ঢাকা, হবিগঞ্জ এবং শেরপুর থেকে তিনজনের গ্রেফতারের পর এ কথা জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ বলছে, হত্যাকারীদের উদ্দেশ্যে ছিলো অ্যালিয়ন মডেলের একটি গাড়ি চুরি করা। আর এ লক্ষ্যে উবারে বেশ কয়েকটি রাইড অনুরোধ পাঠানোর পর আরমানের গাড়িটি পেলে তাকে টার্গেট করে তারা।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ঘটনার দিন রামপুরা থেকে আরমানের গাড়িতে উঠে এই চক্রটি। উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কে গিয়ে রাইড শেষ হলে চালককে টাকা না দিয়ে অপেক্ষা করতে বলে তারা। বলে বাসা থেকে টাকা নিয়ে নামবে কেউ একজন। বিশ্বাস অর্জনের জন্য কানে ফোন লাগিয়ে কথা বলার ভান করতে থাকে। আসলে তারা অপেক্ষা করছিলো চালক আরমানকে খুন করার উপযুক্ত পরিবেশের জন্য। এক পর্যায়ে রাস্তা কিছুটা জনশূন্য হয়ে পড়লে সিজানের নির্দেশে শরীফ আরমানের গলায় ছুরি চালিয়ে দেয়। এই অবস্থায় আরমান গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিছুদূর গিয়ে আর পারে না। অচেতন হয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। সেখানেই মারা যান তিনি।

পুলিশ বলছে, হত্যাকারী চক্রের প্রধান সিজান। খুলনায় তার এক বন্ধু সাব্বির চোরাই গাড়ির ব্যবসা করে। সেখান থেকে সিজানের কাছে অর্ডার আসে একটি অ্যালিয়ন মডেলের গাড়ি দিলে আট লাখ টাকা দেয়া হবে।এরপরেই গাড়ি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনায় নামে তারা। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, চক্রটি নিউ মার্কেট থেকে পাঁচশ টাকা দিয়ে কিনে দুটি সুইচ গিয়ার চাকু। ঘটনার দিন উবারে পরপর চারটি রাইড অনুরোধ পাঠানোর পরও অ্যালিয়ন মডেলের গাড়ি না পাওয়ায় প্রতিটি অনুরোধ বাতিল করে তারা। পঞ্চমবারে কাঙ্ক্ষিত মডেলের গাড়ি নিয়ে আসেন আরমান। আর সেটিই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্যে।

গ্রেফতারের পর আসামিদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। পাশের দুটি আলাদা ড্রেন থেকে উদ্ধার করে আলাদা দুটি ছুরি। পুলিশ বলছে, আহত অবস্থায় আরমান গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আসামিরা চাকুগুলো ড্রেনে ফেলে পালিয়ে যায়।

এক আসামী বলেন, ‘বাসার ছাদে আমরা অপারেশনের প্ল্যান করি। পরদিন উবারে চারটা কল দিই। তারপর এলিয়েন গাড়িটা নিয়ে এখানে আসি।’

আরেক আসামী বলেন, ‘গাড়িটা আসার পর সেজান ভাই আমাকে ডেকে বলে শরীফ নিচে আয়। তারপর নিচে গেলে উনি বলে যা করার তাড়াতাড়ি কর।’

পুলিশ বলছে, প্রথমে তাদের পরিকল্পনা ছিলো চেতনানাশক খাইয়ে অজ্ঞান করে গাড়ি ছিনতাইয়ের। কিন্তু জ্ঞান ফিরলে আরমান পুলিশে অভিযোগ করতে পারেন এই থেকে হত্যা করার কথা বলে সজিব। সিজানও তাতে সায় দেয়।

পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘এরা আসলে রামপুরা বনশ্রী এলাকায় থাকে। এরা বখাটে যুবক। এদের কোন কাজকর্ম নেই। নেশাও করে মাঝে মাঝে। এরা গাড়ি ছিনতাই করার কাজে জড়িত হওয়ার পরিকল্পনা করছিল।’

এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে গ্যাং কালচারের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানায় পুলিশ। সূত্র: সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.