কী ঘটেছিল সেদিন

আন্তর্জাতিক

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত ১৯ জঙ্গি চারটি উড়োজাহাজ ছিনতাই করে আত্মঘাতী হামলা করেন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি জায়গায়। দুটি উড়োজাহাজ আঘাত হানে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা টুইন টাওয়ারে। তৃতীয় উড়োজাহাজটি আক্রমণ করে পেন্টাগনে। আর চতুর্থ বিমানটি পেনসিলভানিয়ায়। ভয়াবহ এই হামলায় প্রাণ হারান প্রায় তিন হাজার মানুষ। ‘নাইন-ইলেভেন’ নামে পরিচিত এই সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই সন্ত্রাসবাদ দমনে আরও কঠোর হয় যুক্তরাষ্ট্র। কী ঘটেছিল সেদিন? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।

টুইন টাওয়ারে হামলা
সেদিন ছিল মঙ্গলবার। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ২০ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল ভর্তি আমেরিকান এয়ারলাইনসের বোয়িং-৭৬৭ উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর দিকের টাওয়ারে। উড়োজাহাজটি ১১০ তলা ভবনটির ৮০তম তলায় ঢুকে পড়ে। হামলার সঙ্গে সঙ্গেই নিহত হন শত শত মানুষ, ভবনের ভেতরে আটকে পড়েন আরও অসংখ্য মানুষ। ১৮ মিনিট পরে, সকাল ৯টা ০৩ মিনিটে দ্বিতীয় বিমানটি হামলা চালায়। ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ফ্লাইট ১৭৫-এর আরেকটি বোয়িং-৭৬৭ উড়োজাহাজ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ দিকের টাওয়ারের ৬০তম তলায় আঘাত হানে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টুইন টাওয়ারের উত্তর দিকের ভবনটি ভেঙে পড়ে। ভবনটি ধসে পড়ার সময় ভেতরে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ছয়জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছিল। প্রায় ১০ হাজার মানুষকে গুরুতর আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পেন্টাগনে হামলা
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর তৃতীয় হামলাটি হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগনে। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে পেন্টাগনের পশ্চিম দিকে আঘাত করে আমেরিকান এয়ারলাইনস ফ্লাইট ৭৭-এর বোয়িং-৭৫৭ উড়োজাহাজটি। পেন্টাগনে হামলায় ১২৫ জন সামরিক কর্মকর্তা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হন বলে জানানো হয়। জিম্মি করা বিমানটির ভেতরে থাকা ৬৪ জনও নিহত হন।ভয়াবহ এই হামলায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ মারা যান। ছবি: রয়টার্সভয়াবহ এই হামলায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ মারা যান। ছবি: রয়টার্স

চতুর্থ হামলা
চতুর্থ বিমান হামলাটি হয় সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। নিউজার্সি থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করার ৪০ মিনিট পর ইউনাইটেড ফ্লাইট ৯৩ নামের উড়োজাহাজটি ছিনতাই করা হয়। বিমানে থাকা অবস্থাতেই যাত্রীরা নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে হামলার বিষয়ে জেনে যান। পরে পশ্চিম পেনসিলভানিয়ার শ্যাংকসভিলের কাছে একটি ফাঁকা মাঠে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানে থাকা ৪৪ জনের সবাই নিহত হন।

কত মানুষ মারা গিয়েছিলেন
নাইন-ইলেভেনের হামলায় ১৯ জন হামলাকারীসহ মোট ২ হাজার ৯৯৬ জন নিহত হন। এর মধ্যে শুধু ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চালানো দুটি বিমান হামলায় মারা যান ২ হাজার ৭৬৩ জন। আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করতে গিয়ে ৩৪৩ জন দমকলকর্মী এবং ৬০ জন পুলিশ সদস্যও নিহত হন। ৪টি হামলায় সম্মিলিতভাবে ৭৮টি দেশের মানুষ নিহত হন।হামলার পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় ধসে পড়ে টুইন টাওয়ার। ছবি: রয়টার্সহামলার পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় ধসে পড়ে টুইন টাওয়ার। ছবি: রয়টার্সআল-কায়েদার সম্পৃক্ততা
ধারণা করা হয়, হামলাকারীদের আর্থিক মদদ দিয়েছিল ওসামা বিন লাদেনের সংগঠন আল-কায়েদা। হামলাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ এক বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে উড়োজাহাজ চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। বাকিরাও নাইন-ইলেভেনের আগে বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। ১৯ হামলাকারী সহজেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তাবেষ্টনী ফাঁকি দিয়ে ধারালো অস্ত্র নিয়ে উড়োজাহাজে ওঠেন। উড্ডয়নের পরপরই যাত্রীদের জিম্মি করে পাইলটদের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিলেন হামলাকারীরা।২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারের আশপাশে থাকা লোকজনকে এভাবেই নিরাপদে আশ্রয়ে নিয়ে যান উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: রয়টার্স২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারের আশপাশে থাকা লোকজনকে এভাবেই নিরাপদে আশ্রয়ে নিয়ে যান উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: রয়টার্সঅর্থনৈতিক প্রভাব

নাইন-ইলেভেনের হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। হামলার পর প্রথম দিনেই নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে বড় ধস নামে। এক মাসেই চাকরি হারান ১ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ। ধারণা করা হয়, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলায় আনুমানিক ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ক্ষতি হয়েছিল।

তথ্যসূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, সিএনএন, হিস্টরি ডট কম ও নিউইয়র্ক ম্যাগাজিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *