এসএমএসকে বিদায় দিতে আসছে আরসিএস

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

এখনকার সেলফোন ব্যবহারকারীরা হয়তো এসএমএস নিয়ে খুব একটা গুরুত্ব দেন না বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু বাস্তব বিষয়টা অন্য। কেউ কেউ এখনো মাসে হাজার হাজার এসএমএস সেন্ড ও রিসিভ করেন। যাইহোক, এসএমএস অনেক পুরাতন প্রযুক্তি, ১৯৯২ সালে এই প্রযুক্তি বের হওয়ার পরে এর উপরে মারাত্মকভাবে নির্ভরশীল হই আমরা।

 

কিন্তু এর এক লিমিটেশন হচ্ছে মাত্র ১৬০ কারেক্টর টেক্সট আঁঁটানো যায় এক মেসেজে। আপনি এর চেয়েও বেশি টেক্সট আটাতে পারবেন বর্তমান অপারেটরগুলোতে কিন্তু সেক্ষেত্রে একাধিক ম্যাসেজের চার্জ প্রদান করতে হয়। পুরাতন এসএমএস সিস্টেমকে রিপ্লেস করার জন্য ২০০৭ সালে রিচ কমিউনিকেশন সার্ভিস (আরসিএস) -এর প্রস্তাবিত করা হয়। কিন্তু খুব বেশি সারা পাওয়া যায়নি আরসিএস নিয়ে। মানুষ হয়তো এসএমএস নিয়েই বেশি সুখী!

কিন্তু বর্তমান যুগে এসে এসএমএস যেন সত্যিই লিমিটেশন তৈরি করেছে। তাই এবার গুগল সকলের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছে আর মেজর ইউএস মোবাইল অপারেটরগুলো এটিঅ্যান্ডটি, টি-মোবাইল, স্প্রিন্ট বলেছে তারা ২০২০ এর মধ্যে এসএমএসকে সম্পূর্ণ আরসিএস দ্বারা রিপ্লেস করে দেবে।

শুধু ১৬০ কারেক্টর থেকেই মুক্তি নয়, পাশাপাশি আরসিএস অনেকটা ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং অ্যাপের মতো কাজ করবে। ঠিক যেমনটা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসআপ, টেলিগ্রাম, বা অ্যাপেলের আই-মেসেজ এ হয়ে থাকে। আপনি গ্রুপ চ্যাট করতে পারবেন, অডিও বা ভিডিও ম্যাসেজ সেন্ড করতে পারবেন, হাই কোয়ালিটি ইমেজ শেয়ার করতে পারবেন, তাও আবার মোবাইলের ম্যাসেজিং অ্যাপ থেকেই।

নতুন এই মেসেজিং সিস্টেমে সবকিছুই মিষ্টি কেকের মতো হলেও একটি জিনিষ কিন্তু কেকের মধ্যে পোকার মতো ব্যাপার, আর সেটা হচ্ছে এতে অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড এনক্রিপশন সিস্টেম সাপোর্ট করে না। আপনার যদি সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি প্রধান ফোকাস হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে হয়তো আরসিএস ইউজ না করে হোয়াটসঅ্যাপের মতো ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ক্লায়েন্টে চিপকে থাকতে হবে।

এক মোবাইল অপারেটর থেকে আরেক মোবাইল অপারেটরেও এই সিস্টেম কাজ করবে। আপনি জাস্ট আপনার বন্ধুর মোবাইল নাম্বারেই ইনস্ট্যান্ট মেসেজ সেন্ড করতে পারবেন, চ্যাট করতে পারবেন। আলাদা কোন ক্লায়েন্ট বা অ্যাকাউন্ট দরকারি হবে না। সামনের বছরের অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলোতে এই ফিচার বিল্ডইনভাবে পাওয়া যাবে সাথে ইউএসের মোবাইল অপারেটরগুলো আরসিএস এর সাপোর্ট চালু করবে। বাংলাদেশের অপারেটর গুলো কবে এসএমএস থেকে মুভ করে আরসিএসে এ আসবে এই ব্যাপারে কোন আপডেট নেই। হাজার বছর খানেক অপেক্ষা করলে হয়তো দেখা যেতেও পারে।

এসএমএস কী?

এসএমএস কথাটির পূর্ণরূপ হচ্ছে শর্ট ম্যাসেজ সার্ভিস বা শর্ট ম্যাসেজিং সার্ভিস (short message/messaging service)। বাংলায় একে বলা যায় সংক্ষিপ্ত বার্তা সেবা। মোবাইল থেকে মোবাইলে কোনো বার্তা বা ম্যাসেজ টাইপ করে পাঠানোর যে সেবাটি এখন বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত, তার নামই এসএমএস।

শুরুর কথা

১৯৯২ সালের ৩ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম এসএমএসটি পাঠানো হলেও এর ধারণাটি অনেক আগের। মোবাইল এসএমএস-এর জনক হিসেবে যাকে অভিহিত করা হয়, তার নাম ম্যাট্টি ম্যাক্কোনেন। ফিনল্যান্ডের এই প্রকৌশলী নকিয়া, টেলি ফিনল্যান্ড, ফিনেট নামে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি কর্মরত ছিলেন ফিনল্যান্ডের টেলিকম ও পোস্টাল এজেন্সিতে এবং ওই সময়েই এসএমএস সার্ভিস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯৮৮ সালে ইউরোপিয়ান টেলিকমিউনিকেশন স্ট্যান্ডার্ড ইনিশিয়েটিভ প্রথম ডিজিটাল প্যান-ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড জিএসএম বাজারে নিয়ে এলে এসএমএস নিয়ে জোর গতিতে কাজ শুরু হয়। তখন পর্যন্ত ভয়েসমেইল সম্পর্কে জানতে হলে ভয়েস-মেইল সেন্টারে ফোন দিতে হতো গ্রাহককে। ভয়েস মেইল আসা মাত্রই যেন গ্রাহকরা জানতে পারে, সেই তথ্য জানাতেই প্রথম এসএমএস পাঠানোর চিন্তা শুরু হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৯২ সালের ৩ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম টেক্সট ম্যাসেজটি প্রেরণ করেন নেইল পাপওয়ার্থ। ভোডাফোন তখন তাদের গ্রাহকদের জন্য এই সার্ভিসটি চালু করতে চাচ্ছিল। তারই পরীক্ষামূলক প্রস্তুতি হিসেবে পাঠানো এই ম্যাসেজে লেখা ছিল ‘Merry Christmas’। পাপওয়ার্থ ম্যাসেজটি পাঠান ভোডাফোনেরই রিচার্ড জারভিসের কাছে।

শুরুতে জনপ্রিয়তা পায়নি এসএমএস

এসএমএস সার্ভিসটি সময়ের সাথে সাথে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও শুরুতে এটি তেমন একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। ১৯৯৪ সাল থেকেই এই সেবা সব টেলিকম অপারেটর চালু করে। তারপরেও ১৯৯৫ সালেও একজন মোবাইল ব্যবহারকারী মাসে গড়ে এসএমএস পাঠাতেন ০.৪টি। তার মানে গড়ে আড়াই মাস পর পর পাঠানো হতো এক একটি এসএমএস। পরবর্তীতে টেলিকম কোম্পানিগুলো প্রি-পেইড সার্ভিস বাজারে ছাড়া শুরু করলে এবং এর জন্য ‘রিয়েল-টাইম চার্জিং’ শুরু করলে তা ক্রমেই ছড়িয়ে সকলের মাঝে। ১৯৯৪ সালে নকিয়া বাজারে নিয়ে আসে ‘নকিয়া ২০১০’ মডেলের হ্যান্ডসেট। এটিই মূলত সহজে এসএমএস লেখার জন্য তৈরি করা প্রথম মোবাইল ফোন। এভাবে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে এসএমএস।

হারিয়ে যাবেএসএমএস?

সমায়ের সাথে সাথে মোবাইলেও ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় অনেকেই এসএমএস-যুগের অবসান দেখতে শুরু করেছেন। স্কাইপি ইন্সট্যান্ট ম্যাসেজিং এখন এসএমএসকে কিছুটা প্রাচীন প্রযুক্তিতে পরিণত করেছে বটে, তবে সার্বিকভাবে এখনও তা এসএমএস-এর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকা ছাড়া এশিয়া-আফ্রিকার মতো দেশগুলোতে এখনো মোবাইল ইন্টারনেট খরচের দিক থেকে সকলের নাগালের মধ্যে আসতে পারেনি। আর এ ছাড়াও টিনএজারদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত এসএমএস করার পরিমাণ অনেক বেশি। সব মিলিয়ে এসএমএস আরও অনেকদিন টিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশাবাদী প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *