আজ ২৮ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৩ তম জন্মদিন ।১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী তীরের প্রত্যন্ত পাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ঐতিহ্যবাহী শেখ পরিবারে জন্ম নেয়া শেখ হাসিনা সময়ের পরিক্রমায় আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। পিতার রাজনৈতিক উত্তরসূরি হয়ে তিনি পূরণ করে চলেছেন জাতির পিতার স্বপ্ন। বলিষ্ঠ নেতৃত্বগুণে শেখ হাসিনা এখন বিশ্ব নেতাদের অন্যতম একজন। পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার প্রথম সন্তান শেখ হাসিনার ডাক নাম হাসু। দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দাদা-দাদির কোলে-পিঠে মধুমতি নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায়। তারা পাঁচ ভাইবোন। অপর চারজন হচ্ছেন শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। ভাইবোনদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মানসকন্যা,উজ্জল নক্ষত্র ও এ যাবৎ কালের সবচাইতে সফল রাষ্ট্রনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের উপমহাদেশের একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি রয়েছে।সেটি হল উত্তরাধিকারের রাজনীতি। শেখ হাসিনা এই সংস্কৃতির বাইরে ছিলেন।
এক রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা হওয়া সত্বেও তিনি রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী ছিলেন না।সবসময় চাইতেন সাধারণভাবে জীবনযাপন করতে।বাংলাদেশের আর দশজন সাধারণ মেয়ে যেমন স্বামী-সন্তান নিয়ে জীবন কাটায় তিনিও ওইরকম জীবন-যাপনে আগ্রহী ছিলেন। কিন্ত নিয়তি তাঁর জন্য অন্য কিছু লিখেছিল।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনের ঘৃণ্যতম কালো অধ্যায়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হল।দেশ, জাতি ও রাজনীতি অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ল। দিকভ্রষ্ট হল আওয়ামী লীগ।সে সময় দেশ ও জাতির কাণ্ডারী হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন জননেত্রী শেখ হাসিনা।১৯৮১ সালে তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সেদিন অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছিল কোনোরকম রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাহীন শেখ হাসিনা কি পারবেন দলের নেতৃত্ব দিতে? কিন্তু সবার ভ্রান্ত ধারণা দূর করে শেখ হাসিনা দেশ ও দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।দেশকে পৌঁছে দিয়েছেন উন্নতির শীর্ষ স্থানে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিন দশকের উজ্জল নক্ষত্র শেখ হাসিনা।তবে তাঁর এ সফলতা একদিনে আসেনি। ’৭৫-এর পর তিনি ও তাঁর দল বারবার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। সেনা শাসকদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছেন। তবুও পিছু হঠেননি।পঁচাত্তরের পর তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ হারানো গৌরব ফিরে পায়। দীর্ঘ ২১ বছর সংগ্রামের পর তিনি নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। বর্তমানে শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘ।তিনি ক্ষমতায় থাকার চেয়ে রাজপথে ছিলেন বেশি।বাংলার মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনের তিনি ছিলেন শীর্ষে।
শেখ হাসিনা রাজনীতি করতে গিয়ে সামরিক শাসক কর্তৃক কারাভোগও করেছেন।তিনি ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হন।এর পরের বছর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে।এ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগ ২৬০টি আসন লাভ করে।নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ৩২ আসন।২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত টানা দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। বর্তমানে শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তা অবিশ্বাস্য।
শেখ হাসিনার বড় গুণ তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো দেশকে ভালোবাসেন।তিনি দৃঢ় প্রত্যয় রেখে বাংলাদেশের উন্নতি চান এবং দেশের জন্য মৃত্যুকেও পরম প্রাপ্তি বলে মনে করেন। বঙ্গবন্ধুর পর বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল রাজনীতিবিদ নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর মতই তিনি প্রত্যয়ী,অবিচল ও সাহসী। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। বারবার তিনি স্বাধীনতাবিরোধী শত্রুদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছেন। বিদেশী শক্তির কাছে তাঁর মাথা অবনত হয়নি। তাই ২১ আগস্টের মত ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পরও তিনি দেশসেবার পথ থেকে একবিন্দু পিছু হটেননি।বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু নির্মাণে দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলেছিল,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা ভিত্তিহীন প্রমাণ করেছেন।পদ্মা সেতু নির্মাণে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ আর বিশ^ব্যাংকের কাছে দ্বারস্থ হয়নি।যেখানে অন্যরা ভেবেছিল বিশ্বব্যাংক ছাড়া পদ্মাসেতু হবে না,সেখানে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা।বিশ্ব অবাক দৃষ্টিতে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে রইলো।হেনরি কিসিঞ্জারের মত মানুষ স্বাধীন বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন।আজ পৃথিবীর মানুষের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ এক অপার সম্ভাবনাময় দেশের নাম।
বাংলাদেশ কেবল পৃথিবী নয়, মহাকাশও জয় করেছে।পৃথিবীর মধ্যে মাত্র ৫৭টি দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট রয়েছে।বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। এটি সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের আন্তরিকতা ও দক্ষ নেতৃত্বের কারণে। আরো আনন্দের বিষয় হলো, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২-এর নির্মাণ কাজ চলছে।
একসময় বাংলাদেশ জঙ্গী,সন্ত্রাস, মাদকের আখড়া ছিল।ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়া এ দেশ দুর্নীতিতে টানা ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।রাজনৈতিক সন্ত্রাস তো ছিল মহামারির মত।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থানের কারণে দেশ থেকে জঙ্গীবাদ দূর হয়েছে। মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা বহুগুণে কমে এসেছে। রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে কমেছে জ্বালাও-পোড়াও আগুন সন্ত্রাস।কেবল দেশে নয়, বিদেশেও বাংলাদেশের অগ্রগতি রোধ করার জন্য ষড়যন্ত্র কম হয়নি।
ফ্লাইওভার নির্মাণ, মহাসড়ক ৪ লেন থেকে ৮ লেনে উন্নতিকরণ,সেতু নির্মাণসহ নানা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে নতুন করে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শুরুও হয়েছে।রাজধানীতে স্বপ্নের মেট্রোরেল নির্মান কাজ শুরু হয়েছে।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। যেখানে আগে বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি থাকতো সেখানে এখন বাংলাদেশ খাদ্য রপ্তানি করছে। এটি দেশবাসীর জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। এ প্রাপ্তি সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে।
শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে সরকার। নতুন করে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজকে সরকারিকরণ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি স্কুল কলেজে তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য ডিজিটাল ক্লাসরুম, কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে, পাশাপাশি শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাবও দেয়া হয়েছে। অসংখ্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারি করা হয়েছে। এ সরকারের আমলে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৫শ’ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আসনসংখ্যা ২৫ হাজার থেকে ১ লাখে উন্নীত করার কাজ চলছে। চারটি সরকারি মহিলা পলিটেকনিক ও ২৩টি বিশ্বমানের নতুন পলিটেকনিক স্থাপনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে।বস্ত্রশিল্পে বিশে^ রোল মডেল হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের তৈরিকৃত পোশাক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে পোশাকশিল্পের অবদান।সেই গার্মেন্টস শ্রমিকদের উন্নয়নেও কাজ করেছেন শেখ হাসিনা।তিনি তাদের বেতনভাতা বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেটি বাস্তবায়িতও হয়েছে। ঔষধ শিল্পেও বিশ্বে বাংলাদেশ স্থান করে নিয়েছে। দেশের বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করেছে সরকার।
জননেত্রী শেখ হাসিনার বড় সফলতা হচ্ছে সেবা মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া।সেবা প্রদান পদ্ধতি সহজ হয়েছে অনেকগুণ।প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ সেবা অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রচুর ভোগান্তির শিকার হতো সাধারণ মানুষ।ভূমি সংক্রান্ত সেবার আধুনিকায়ন করার কারণে এ ভোগান্তি এখন নাই বললেই চলে। জমির পর্চা থেকে শুরু করে ভুমি সংক্রান্ত সেবা অনলাইনে দেয়া হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কারণে আর্থিক লেনদেন সহজ হয়েছে। আবেদন, ফরম, ই-টেন্ডারিং, ই-জিপি, জরুরি সেবা এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। মানুষের তথ্য প্রাপ্তি অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে কমেছে দুর্নীতি। বাংলাদেশ এখন আর দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় না। এখন বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার বাস্তবায়ন করছেন শেখ হাসিনা।
দিন বদলের সাথে সাথে জননেত্রী শেখ হাসিনার নামের সাথে যুক্ত হয়েছে কৃতিত্বের সাক্ষর। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও তিনি এখন আলোচিত ব্যক্তিত্ব।আমেরিকা,যুক্তরাজ্যের মতো দেশের রাজনীতিবিদরা তাঁকে সম্মানের চোখে দেখে।শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম মানবিক প্রধানমন্ত্রী।তিনি রোহিঙ্গাদের দুঃসময়ে তাদেরকে বাংলাদেশে স্থান দিয়ে বহির্বিশ্বে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিশ্ব মিডিয়া এ কারণে শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিধায় সিক্ত করেছে।
আজ জননেত্রী,গণমানুষের নেত্রী, জাতির উন্নয়নের কাণ্ডারী,গণতন্ত্রের মানসকন্যা ও দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মদিন। এ দিনে তাঁর প্রতি আমাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানাই। তাঁর সুখী ও দীর্ঘজীবন কামনা করি।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি সুস্থ থাকুন ও আমৃত্যু প্রধানমন্ত্রী থাকুন।আমরা যেন তাঁর আলোয় আলোকিত হই,বাংলাদেশও যেন তাঁর আলোয় আলোকিত হয়। বাংলাদেশের মানুষ তাঁর পাশে ছিল,পাশে আছে এবং আগামীতেও পাশে থাকবে ইনশাল্লাহ্।
আজ তাঁর ৭৩ তম জন্মদিনে বাংলাদেশকে দিয়েছেন শুধু ভালো সময়গুলোকে সামনে এনে,মনে রেখে আনুষ্ঠানিকভাবে বলতেই প্রশান্তিকার পক্ষ থেকে লিখতে বসা… ”শুভ জন্মদিন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা”। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন, সুন্দর রাখুন এবং বাংলাদেশ আরো আরো উজ্জ্বলতর হয়ে উঠুক আপনার সময়টুকুতে, আরো বেশী… জয়তু।