প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘বিশেষ উদ্যোগ’ বাস্তবায়নে যুক্ত হচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা। নিয়মিত দায়িত্বের পাশাপাশি বিশেষ উদ্যোগের আওতাভুক্ত প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের তদারকিও করতে হবে তাদের। জনগণের কাছে এ উদ্যোগগুলো সম্পর্কে প্রচারের দায়িত্ব পালন করবে তথ্য মন্ত্রণালয়।
চলমান এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে সংশ্নিষ্ট দপ্তর ও সংস্থা। মাঠ প্রশাসনে এসব সংস্থা উপজেলা পরিষদের অধীন। যদিও প্রকল্প বাস্তবায়নে চেয়ারম্যানের কোনো সংশ্নিষ্টতা নেই। এতে অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব দেখা দেয়। বাস্তবায়নেও নানা জটিলতায় পড়তে হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পগুলোকে আরও বেগবান করতে উপজেলা চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমান সরকারের উদ্ভাবনী বিশেষ উদ্যোগের আটটি ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে- একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, নারীর ক্ষমতায়ন কার্যক্রম, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, আশ্রয়ণ প্রকল্প, শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম, সবার জন্য বিদ্যুৎ ও কমিউনিটি ক্লিনিক-শিশু বিকাশ। এসব বাস্তবায়নে কয়েকটি বিশেষ পদক্ষেপও নিয়েছে সরকার। এসব উদ্যোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান সমকালকে বলেন, শেখ হাসিনার বিভিন্ন অঙ্গীকার ও গণমুখী উদ্যোগের মধ্যে এই আটটি ক্ষেত্রকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এগুলো বাস্তবায়ন ও ব্র্যান্ডিয়ে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়কে কর্মপরিকল্পনা তৈরির নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি মন্ত্রণালয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করে এর সুফল যাতে জনগণের কাছে পৌঁছানো যায় সে বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগে জনপ্রতিনিধিদেরও যুক্ত করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া আটটি কর্মসূচি ‘শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ’ হিসেবে চিহ্নিত। এসবের মধ্যে রয়েছে- পল্লীর দারিদ্র্য বিমোচনে দক্ষতা ও আয়বর্ধক কর্মসূচি হিসেবে ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’ এবং ছিন্নমূল, গৃহহীন মানুষদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। এ ছাড়া ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার পথে সরকারের সর্বস্তরে ই-গভর্ন্যান্স বাস্তবায়নে সরকারি উদ্যোগ, বিনামূল্যে বই বিতরণ ও উপবৃত্তি দেওয়ার ‘শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম’ এবং সর্বক্ষত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নে ‘নারীর ক্ষমতায়ন কার্যক্রমসমূহ’ কর্মসূচিও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত।
ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’, গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে ৬ হাজার মানুষের জন্য ‘একটি করে ক্লিনিক স্থাপন’ এবং যুবসমাজকে স্বাবলম্বী করতে ১২৮টি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম সংবলিত ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’ও শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগের অন্তর্ভুক্ত।
কর্মসূচিসংশ্নিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য সন্দেহাতীতভাবে প্রশংসনীয়। শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন গণমুখী উদ্ভাবনী উদ্যোগের মধ্যে ৮টি ক্ষেত্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই আটটি কর্মসূচি গত দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময় নেওয়া হয়। এগুলো সম্পূর্ণই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবনার ফসল। তবে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ এসেছে। কোনো কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ধীর গতিও রয়েছে। তবে কয়েকটি প্রকল্পের ব্যাপক সফলতাও রয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন প্রসারিত হয়েছে।
এমতাবস্থায় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে উপজেলা চেয়ারম্যানদের সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি আরও নয়টি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- উদ্যোগগুলোর সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো এ বিষয়ে একটি মনিটরিং ডেস্ক স্থাপন; নিজ নিজ বিষয়ে মন্ত্রণালয়গুলোকে একটি ধারণাপত্র বা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো; নারীর ক্ষমতায়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ‘জয়িতা ফাউন্ডেশন’কে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া; আগামী কত বছরের মধ্যে প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব, তা নিরূপণ করা ইত্যাদি। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি পার্টনারশিপ হতে পারে। এর বাইরে শান্তি ও নিরাপত্তার নামেও একটি উদ্যোগ নেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে।
এসব উদ্যোগের সুফল গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জনগণের মাঝে প্রচারে কাজ করবে তথ্য মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছে। এ বিষয়ে তথ্য সচিব আব্দুল মালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণমুখী উদ্ভাবনী উদ্যোগের মধ্যে আটটি ক্ষেত্র বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে সরকারি গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ উদ্যোগে সম্ভাব্য সব সহযোগিতা দেবে তথ্য মন্ত্রণালয়।
https://www.facebook.com/900990400065696/posts/1208449219319811/