কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ভূঞা বাড়িতে জমিসংক্রন্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে মৃত কামরুজ্জামান ভূঞার পুত্র বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুর্যসেন হলের সভাপতি, ৯০-এর দশকের রাজপথ কাঁপানো ছাত্রলীগ নেতা এডভোকেট ইকবাল হোসেন ভুঞা ও তার চাচাতো ভাই মৃত শামসুজ্জামান ভূঞার পুত্র ফরিদপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ হেদায়েত উল্লাহ ভূঞা ও তার অপর চাচাতো ভাই মৃত আক্তারুজ্জামান ভূঞার পুত্র আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ সানাউল্লাহ ভূঞার জমি একই বাড়ির ফরিদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মৃত জহিরুল ইসলাম ভূঞার পুত্র সাইফুল ইসলাম ভূঞা ওরুফে সুমন স্থানীয় ও বহিরগত লোকজন দিয়ে দখল করে টিন দিয়ে একচালা একটি ঘর বানিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ নাম ব্যবহার করে ঘরে একটি ব্যানার টানানোর দু’দিন পরেই তা গুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় জনতা।
জানা যায়, এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ৮ টার দিকে উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ভূঞা বাড়ি সংলগ্ন দ্বারিয়াকান্দি-বেলাব সড়কের পাশে ভূঞা বাড়ির মৃত কামরুজ্জামান ভূঞার পুত্র এডভোকেট ইকবাল হোসেন ভূঞা ও তার চাচাতো ভাই মৃত শামসুজ্জামান ভূঞার পুত্র ফরিদপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ হেদায়েত উল্লাহ ভূঞা ও তার অপর চাচাতো ভাই মৃত আক্তারুজ্জামান ভূঞার পুত্র আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ সানাউল্লাহ ভূঞার জমি একই বাড়ির ও তাদেরই চাচাতো ভাই মৃত জহিরুল ইসলাম ভূঞার পুত্র সাইফুল ইসলাম ভূঞা সুমন স্থানীয় ও বহিরাগত লোকজন নিয়ে হামলা চালিয়ে জমিতে রোপিত কলাগাছসহ নানান ফলফলাদির গাছ কেটে ফেলে দিয়ে এ জমিতে কয়েকটি টিন দিয়ে একটি একচালা ঘর বানিয়ে এ ঘরে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ নাম ব্যবহার করে একটি ব্যানার টানিয়ে দেয়। এই ঘটনার দু’দিন পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে ইউপি সদস্য মোঃ হেদায়েত উল্লাহ ভূঞা ও আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ সানাউল্লাহ ভূঞাসহ স্থানীয় জনতা একচালা ওই টিনের ঘর ও ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ এর নাম ব্যবহার করে টামানো ব্যানার জমি থেকে সরিয়ে পুকুরে ফেলে দিয়ে অবৈধ দখলমুক্ত করেন। পরে দখল বেদখলের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে ফরিদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কিছু নের্তৃবৃন্দ।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে সাইফুল ইসলাম ভূঞা সুমনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘর ভাঙ্গার সত্যতা স্বীকার করে এ বিষয়ে কোনো কথা না বলে সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিনিধিকে অনুরোধ করে বলেন, এ ঘটনায় অনলাইনে যেসব সংবাদ প্রকাশ হয়েছে আমি তাদেরকে সংবাদগুলো ডিলিট করার জন্য বলে দিয়েছি। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিষয়টি আপোষ-মিমাংসার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুছা জিসান উদ্যোগ নিয়েছেন।
ইকবাল হোসেন ভূঞার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার দিন আমি বাড়িতে ছিলাম না, পরে টেলিফোনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি সাইফুল ইসলাম ভূঞা সুমন স্থানীয় কিছু লোক ও ২০/২৫ জন বহিরাগত লোক নিয়া আমাদের জমিতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে কলাগাছসহ নানান ফলফলাদির গাছ কেটে ফেলে দিয়ে একচালা একটি টিনের ঘর বানিয়ে এ ঘরে বঙ্গবন্ধু পরিষদ নামে একটি ব্যানার টানিয়ে দেয়। এ ঘটনার দু’দিন পর স্থানীয় জনতা ব্যানারসহ এ ঘর ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে আমাদের ৭০ বছর ধরে দখলকৃত জমিটি অবৈধ দখলমুক্ত করেন।
ইউপি সদস্য হেদায়েত উল্লাহ ভূঞা ও সানাউল্লাহ ভূঞার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, জমিটি ৭০ বছর যাবৎ তারা ভোগদখল করে আসছেন। ইদানিং হঠাৎ করেই সাইফুল ইসলাম ভূঞা সুমন জমিটি তাদের বলে দাবি করে। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আমরা বাপ-দাদার পৈত্তিক সূত্রে পেয়ে এ জমিতে আছি এবং আমাদের নামে এস.এ আছে।
ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শাহ্ আলম বলেন, জমিটি নিয়ে দখল বেদখলের যে তাণ্ডব হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি শুরু থেকেই আমি মিমাংসার জন্য যথাযথ চেষ্টা করেছি এবং সে চেষ্টা এখনও অব্যাহত আছে।
ফরিদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আজিজুউল্লাহ’র ব্যবহৃিত মুঠোফোন নাম্বারে একধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও নাম্বার বন্ধ থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক কাশেম এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি তাদের পারিবারিক বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে চায় না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ মুক্তি মাহমুদ খোকা বলেন, ভূঞা বাড়ির দখল বেদখলের ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে এর চেয়ে বেশি দুঃখজনক হলো, ফেসবুকে দেখলাম বঙ্গবন্ধু পরিষদ ভেঙে নাকি জায়গা দখল করেছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এডভোকেট ইকবাল হোসেন ভূঞা। আসলে ফেসবুক হাতে থাকলেই যা খুশি তা লেখা ঠিক না। যে ইকবাল হোসেন ভূঞাকে ১৯৯৬ সালে তার অসুস্থ বাবা কামরুজ্জামান ভূঞাকে দেখতে এসে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব জিল্লুর রহমান নিজের পুত্র বলে হাত ধরে টেনে নিয়ে ছিলেন সেই ইকবাল হোসেন ভূঞার দ্বারা বঙ্গবন্ধু পরিষদ ভেঙে ফেলা বা ব্যানার ছিড়ে ফেলা কখনোই সম্ভব না। যারা এসব লিখেছে বা লেখিয়েছে আমার ধারণা তারা ইকবাল হোসেন ভূঞা সম্পর্কে কিছুই জানেনা, অথবা জানার মতো সুভাগ্যও তাদের হয়নি। আমার জানা মতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ইকবাল হোসেন ভূঞা শুধু একটি নাম নয়, তিনি আওয়ামী লীগের দুর্শময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন ২০০২ সাল হইতে ২০০৬ সাল পর্যন্ত লিয়াকত-বাবু কমিটিতে। তাছাড়া তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন ১৯৯৮ সাল হইতে ২০০২ পর্যন্ত বাহাদুর-অজয় কমিটিতে। এর আগে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুর্যসেন হল শাখার প্রভাবশালী সভাপতি ছিলেন ১৯৯৪ সাল হইতে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত শামীম-পান্না কমিটির সময়ে।
আর বর্তমানেও তিনি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা পরিষদের সহ-সভাপতি, সুপ্রিম কোর্টের একজন সনামধন্য আইনজীবী এবং আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের অন্যতম সদস্য হিসেবে আছেন। আর এই ইকবাল হোসেন ভূঞার মতো ব্যক্তির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু পরিষদ ভেঙে জমি দখল ও ব্যানার গুড়িয়ে দেয়ার মতো অভিযোগ হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই না। কারণ ইকবাল হোসেন ভূঞার সম্পর্কে শুধু ফরিদপুর ইউনিয়ন ও কুলিয়ারচরের মানুষ নয়, গোটা বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জানে তিনি কেমন মানুষ। এ সময় আরো বলেন, যারা অন্যের জায়গা দখল করে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নামে ব্যানার করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিতর্তকিত করেছে আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা হিসেবে তাদের বিচার দাবি করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমার বিনীত অনুরোধ, জাতির পিতাকে বিতর্কিত করার পিছনে যারা জড়িত তাদেরকে তদন্তপূর্বক খোঁজে বেড় করে বিচারের আওতায় আনা হোক। জমিসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলাকার প্রবীণদের কাছে শুনেছি জমিটি দীর্ঘ ৭০ বছর যাবৎ ইকবাল হোসেন ভূঞা গংদের দখলে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুলিয়ারচর পৌর মেয়র ইমতিয়াজ বিন মুছা জিসানের মধ্যস্থতায় চলমান সমস্যাটি সমাধানের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।