করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইরানে ২১০ জন নিহত হয়েছেন। দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালের উদ্ধৃতি দিয়েছে বিবিসি পারসিয়ান এমন খবর দিয়েছে।
মৃত্যুর সংখ্যায় কুয়ামের পরেই রয়েছে রাজধানী তেহরান। ইরানের এমপি গোলামআলী জাফরাজাদেহ ইমেনাবাদি শুক্রবার বলেন, উত্তর ইরানে তার শহর রাশতের বিভিন্ন কবরস্থান থেকে ভয়ঙ্কর সংখ্যা মৃত্যুর খবর তার কাছে এসেছে।-খবর আল-আরাবিয়াহ এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) আতঙ্কে জুমার নামাজ পড়েনি ইরানের অধিকাংশ মানুষ। শুক্রবার দেশটির জুমার নামাজের বেশির ভাগ জামাত বাতিল করা হয়।
রাজধানী তেহরানসহ দেশটির ৩১টি প্রদেশের ২৩টির প্রাদেশিক রাজধানী শহরে জামাত বাতিল ঘোষণা করে দেশটির কর্তৃপক্ষ। প্রদেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সর্বাধিক করোনাপীড়িত পবিত্র নগরী কোম ও মাশাদ। করোনার মোকাবেলায় ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে তেহরান। তারই অংশ হিসেবে জুমার নামাজ বাতিল করা হয়। এছাড়া দেশটির কারাগারগুলোতে বেশকিছু বন্দিকেও মুক্তি দেয়ার কথা ভাবছে কর্মকর্তারা। ইরানের রাষ্ট্রীয় চ্যানেল প্রেস টিভির বরাত দিয়ে রয়টার্স ও আলজাজিরা এ খবর দিয়েছে।কভিড-১৯-এ ইরানে মৃতের সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের তালিকায় শীর্ষ ধর্মীয় নেতা ও ভ্যাটিকানে ইরানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হাদি খোসরোশাহিও রয়েছেন।
আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮৮ জনে। এর মধ্যে ৬৪ জন তেহরানে। আক্রান্তদের মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসৌমেহ এবতেকারসহ অন্তত ৭ শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন।প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি নারীবিষয়ক ডেপুটি ও ইরানের সবচেয়ে উচ্চপদস্থ নারী কর্মকর্তা তিনি। বৃহস্পতিবার তার আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
তবে শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক না হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়নি। উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ইরাজ হারিরচি জানান, শেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১০৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন।ভাইরাসটির মোকাবেলায় ইতিমধ্যে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে ইরান সরকার। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সব ধরনের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান আপাতত বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছে।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুশ জাহানপোরের বরাত দিয়ে ইরনা জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের গণজমায়েত বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসায় আগামী সপ্তাহে অন্তত ১৫টি মেডিকেল ল্যাব চালু করা হবে। করোনার কারণে আর্থিক মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব।
২০০৮ সালে বৈশ্বিক মন্দার পর শুক্রবার বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারগুলোতে সবচেয়ে ভয়াবহ দরপতন ঘটেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ আর সরবরাহ ব্যবস্থায় সংকট দেখা দেয়ায় ধারণা করা হচ্ছে মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো।
বৃহস্পতিবার মার্কিন শেয়ারবাজারে সূচক পড়েছে ৪ শতাংশ। শুক্রবার পতনের রাস্তা ধরে এশিয়ার শেয়ারবাজারও। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক পর্যটন খাতেও।
২ হাজার ২০০ কোটি ডলার ক্ষতির সম্ভাবনার মুখে পড়েছে এ খাত। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮০৫ জন, আক্রান্ত ৮০ হাজার ৩২০ জন। এর মধ্যে শুধু চীনেই আক্রান্ত ৭৮ হাজার ৪৯৭ জন, মারা গেছেন ২ হাজার ৭৪৪ জন। বিশ্বের অন্তত ৪৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। বুধবার প্রথমবারের মতো নতুন আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ কোরিয়া।