মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম বারের মতো ভারত সফরের মধ্যেই নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে রাজধানী নয়াদিল্লি।সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার সংঘর্ষ চলকালে নয়াদিল্লির একটি প্রাচীন মসজিদে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। ‘জয় শ্রী রাম’ এবং ‘হিন্দুওকা হিন্দুস্তান’ স্লোগান দিয়ে একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায়। ওই দুর্বৃত্তরা মসজিদের মিনার থেকে মাইক ফেলে দিয়ে সেখানে ভগবান হনুমানের ছবি সম্বলিত পতাকা লাগায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্য দ্য ওয়ারের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ওই ঘটনার একটি ভিডিও। ওই ভিডিওটিতে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, সিএএ ইস্যুতে মোদি সরকার অসাম্প্রদায়িক ভারতকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।টুইটারে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ভারতের পতাকা হাতে এক ব্যক্তি মিনার বেয়ে উঠছেন। তিনি লাথি মেরে মিনারের একটি অংশ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছেন।
এ সময় সহিংসকারীরা মসজিদ কম্পাউন্ডে থাকা বেশ কয়েকটি দোকানে লুটপাট চালায় বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা।মসজিদে আগুন লাগার পর সেখানে সাংবাদিকরা পৌঁছে দেখেন, দমকলকর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন দোকানের সাটার ভেঙে লুটপাট করা হয়েছে। জিনিসপত্র রাস্তায় এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। কিন্তু সেখানে কোনো পুলিশের উপস্থিতি নেই।
লুটপাটের বিষয়ে স্থানীয়রা গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, লুটপাটকারীরা স্থানীয় নন। এই অঞ্চলটি হিন্দু অধ্যুষিত কিন্তু বেশ কয়েকটি মুসলিম পরিবার বসবাস করে। পুলিশ একবার এসে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকদের এলাকা থেকে সরিয়ে নিরাপদে নিয়ে গেছে।
ভিডিওটি দেখুন –
উল্লেখ্য, দিল্লিতে নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে ভুক্তোভোগী হয়েছেন দেশটির সনামধন্য সংবাদমাধ্যমগুলোর সাংবাদিকরাও।
সংঘর্ষ চলাকালে সাংবাদিকদের বেধড়ক মারধর করা হয়েছে, মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। দুই সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এমনকি সাংবাদিক মুসলমান কিনা তা নিশ্চিত করতে প্যান্ট খুলে যাচাই করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার গুর তেজ বাহাদুর হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেন্ডেন্ট সুনিল কুমার আলজাজিরাকে বলেন, সংঘর্ষে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন বলে আমি নিশ্চিত করেছি। এছাড়া আরো অনেক আহত আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
অন্য একটি হাসপাতালের চিকিৎসক রাজেশ কার্লা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, মঙ্গলবার আমাদের হাসপাতালে ৩১ জন ভর্তি হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতরা বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ। আহতদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন।
অনিল মিত্তাল নামে এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত দুই দিনে দিল্লির সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১৫০ জন আহত হয়েছেন। কারাওয়াল নগর, মাউজপুর, ভজনপুরা, বিজয় পার্ক ও যমুনা বিহারে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।