স্ত্রীর অনুরোধে শাশুড়িকে ‘ডুপ্লেক্স বাড়ি’ উপহার দেন মতিউর

জাতীয় বাংলাদেশ

ছেলের ‘ছাগলকাণ্ডে’ ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য ড. মতিউর রহমান সোনাগাজীতে শ্বশুরবাড়িতে ১০ বছর আগে একটি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়ে শাশুড়িকে উপহার দেন। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের মিয়া বাড়িই মতিউর রহমানের শ্বশুরবাড়ি। ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীর অনুরোধে তিনি এ বিলাসবহুল বাড়ি বানান। 

এদিকে ঈদুল আজহার আগে ১২ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ইফাত-ই মতিউর রহমানের ছেলে বলে ইফাতের একাধিক নিকটাত্মীয় নিশ্চিত করেছেন। যদিও মতিউর রহমানের দাবি, ইফাত তার ছেলে নয়। এ বিষয়ে পরিবারটির ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার কারণে মতিউর রহমান ছেলেকে অস্বীকার করছেন। কারণ, ১২ লাখের ছাগলকে কেন্দ্র করে ভাইরাল হওয়ার পর ইফাতের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপনের নানা বিবরণ গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবী বাবার বেতনের টাকা দিয়ে ছেলে কীভাবে এমন ব্যয়বহুল জীবনযাপন করতে পারে, তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ছেলের পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।

শ্বশুরবাড়িতে মতিউরের বানিয়ে দেওয়া বিলাসবহুল বাড়িটি জসিম উদ্দিন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি এই বাড়িটি দেখাশোনা করছেন। সর্বশেষ গত দুই মাস আগেও এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান, স্ত্রী, শাম্মী আখতার শিভলী, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও শাশুড়িকে নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন। দু-একদিন থাকার পর আবার ঢাকায় ফিরে যান। মতিউর রহমানের শাশুড়ি বর্তমানে ঢাকায় মেয়েদের বাসায় থাকেন, পাশাপাশি বাড়িতেও আসা-যাওয়া করেন। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি জসিম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, গত বছর কুরবানির ঈদে মতিউরের ছেলে ইফাত প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করে ১৪টি গরু-ছাগল কিনেছিল। এর মধ্যে আটটি গরু ও দুটি ছাগল ঢাকায় কুরবানি দিয়েছে। বাকি চারটি গরু নানার বাড়িতে নিজে এসে জবাই করে আত্মীয়স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেছে।

স্থানীয়রা জানান, মতিউর রহমান ও তার শ্যালক মো. নকিবের নামে ফেনী ও সোনাগাজীতে বেশ কিছু জমিজমা রয়েছে। যা মতিউরের স্ত্রী শাম্মী আখতারের জ্যাঠাতো ভাই মো. আরিফুর রহমান তাদেরকে কিনে দিয়েছেন। তিনি এই সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। আরিফুর রহমান বলেন, এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান তার চাচাতো বোনের স্বামী। মুশফিকুর রহমান ইফাত তাদের সন্তান। শাম্মী আখতারের এক বোন ও এক ভাই রয়েছে। ২৫ বছর আগে মতিউরের সঙ্গে শাম্মীর বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর শাম্মীর বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মিল্লাত মিয়া মারা যান।

এরপর শাম্মীর অনুরোধে মতিউর শাশুড়ি, শ্যালিকা লাভলী আক্তার ও শ্যালক মো. নকিবকে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে লাভলীকে পড়ালেখা শেষে বিয়ে দেন। আর শ্যালক মো. নকিবকে বাসায় রেখে লেখাপড়া করান। সম্প্রতি নকিব চীন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা ও চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তারা রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নিজস্ব বাসায় থাকেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, শ্যালক নকিব ঢাকাসহ বিদেশে মতিউরের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আনুষঙ্গিক কাজকর্ম দেখাশোনা করেন।

সোনাপুর এলাকায় মিয়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়িটির দরজা বন্ধ। ঘরে কেউ নেই। কথা হয় মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীর জ্র্যাঠাতো ভাই ও আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সোনাগাজী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমান তার চাচাতো বোনের স্বামী। ইফাত তাদের সন্তান। শাম্মী আখতারের ছোট ভাই ঢাকাতে ব্যবসা করেন। তারা বনেদি পয়সাওয়ালা। বিভিন্ন সময়ে মতিউর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সোনাগাজীতে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসতেন। শ্বশুরবাড়িতে মতিউরের বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার চাচা মিল্লাত মিয়া ও তার সন্তানরা শুরু থেকেই ধনী। মিয়া বাড়িতে কেন জামাইকে ঘর করে দিতে হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.