আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজটা ছিল বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মতো ঢিলেঢালা। প্র্যাকটিস সুবিধাদি এতটাই অপ্রতুল যে টুর্নামেন্ট শুরুর চার দিন আগে ডাবলিনে উড়ে আসার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডে, এ নিয়ে জনমনে গমগমে আগ্রহ না থাকলেও অবকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে। তবে কার্ডিফ তো আর লন্ডন নয়, ইংল্যান্ডের কোলে ঠাঁই খুঁজে নেওয়া ওয়েলসের রাজধানী। সোফিয়া গার্ডেন পয়মন্ত বটে, তবে সে মাঠে গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার প্রস্তুতি ম্যাচ থাকায় বাংলাদেশ দলকে অনুশীলন করতে হয়েছে এখানকার ক্যাথিড্রাল স্কুল গ্রাউন্ডে। এ মাঠে অনুশীলন করে নাকি ভীষণ বিরক্তি প্রকাশ করেছিল পাকিস্তান, মাঠ অসমতল যে!
সে সূত্রেই খবরটি চাউর হয়ে যায় বাংলাদেশ দলে। তাতে খানিক উদ্বেগ দেখা গেছে দলের ভেতরে। আইসিসির নিয়োগ দেওয়া লিয়াজোঁ অফিসারকে বারবার বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ জিজ্ঞাসা করছিলেন, ‘মাঠ নাকি ঠিক নেই?’ অন্য প্রান্ত থেকে আশ্বস্ত করা হলেও তাতে ভরসার ছাপ পড়েনি ম্যানেজারের অবয়বে। তবে ক্যাথিড্রাল স্কুল গ্রাউন্ডের প্রবেশপথ থেকেই বাংলাদেশ দলের মন থেকে উদ্বেগ মুছে ফেলার শুরু। এমনিতে যেকোনো মানদণ্ডে ডাবলিনের চেয়ে কার্ডিফের অনুশীলন সুবিধাদি উন্নতমানের। বাড়তি বোনাস ছিল ক্যাথিড্রাল স্কুলের পড়ুয়াদের ভালোবাসা। মাঠ আর স্কুলের ব্যবধান গ্রিলের দেয়াল। তো, ওই গ্রিলে বাদুড়ঝোলা হয়ে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের অভিবাদন জানিয়েছে স্কুলটির শিক্ষার্থীরা। সাকিব আল হাসান এগিয়ে গিয়ে হাতের ছোঁয়াও দিয়েছেন কিশোর বয়সীদের। অলরাউন্ডারের মেজাজ-মর্জি বলছে, আয়ারল্যান্ডে পাওয়া সামান্য চোটে সেই ‘কিক’টা হারিয়ে ফেলেননি!
বাংলাদেশ দলের প্র্যাকটিস মানেই প্রতিদিন একজন করে দলীয় প্রতিনিধিকে হাজির হতে হয় সংবাদমাধ্যমের সামনে। সে পালায় গতকাল এসেছিলেন রুবেল হোসেন। ‘সাকিব ভাই ভালো আছে। পুরোদমে নেটে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং করছেন। উনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনি বলেছেন যে উনি পুরোপুরি সুস্থ, কোনো সমস্যা নেই’, প্রথমে এ আশ্বাসই দিতে হলো এ পেসারকে। তবে সাকিবের চেয়ে তাঁর ফিটনেস নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন দেখা গেছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। গতকাল ওই উদ্বেগও মুছে দিয়েছেন রুবেল, ‘আমি এখন সম্পূর্ণ ফিট আছি। গত চার-পাঁচটি সেশন আমি পুরোদমে বোলিং করছি। এখন আমি সম্পূর্ণ ফিট। আমারই একটু সমস্যা ছিল। এখন সেটা নেই। দলের সবাই ফিট আছে।’ কার্ডিফ যদি রোমাঞ্চকর হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য তবে বিশ্বকাপের ময়দানে বাড়তি মনোযোগ দাবি করতেই পারেন রুবেল হোসেন। গত আসরে তো তাঁর দুটি বলেই ইংল্যান্ড ম্যাচ মুখ ফিরে তাকিয়েছিল বাংলাদেশের দিকে। তবু সেই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এবার বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে নিশ্চিত নন। যে ‘ডেথ বোলিং’য়ের জন্য রুবেলকে ডেকে পাঠাতেন অধিনায়ক, এখন সে ভরসার জায়গায় মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ভাগ বসিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। এই দুজনের সঙ্গে মাশরাফি বিন মর্তুজা স্বয়ং এবং সাকিব আল হাসান আর মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়েই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ বোলিং কম্বিনেশন। তাতে পেস আক্রমণে আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঢুকে পড়া হচ্ছে না রুবেলের।
সেটি আঁচ করতে পারছেন তিনি নিজেও, ‘এখন অনেক টাফ কম্পিটিশন দলের মধ্যে। এর পরও যদি আমাকে সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে আমি অবশ্যই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। বিশ্বকাপে সবাই ভালো করতে চায়, আমিও চাই। তাই আমিও সুযোগের অপেক্ষায় আছি।’
কার্ডিফেই দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ আছে। তাতে রুবেল একটি সুযোগ আশা করতেই পারেন। তিনি করছেনও, ‘প্রস্তুতি ম্যাচে সুযোগ পেলে চেষ্টা করব এমন পারফরম্যান্স করতে, যাতে করে মূল ম্যাচেও সুযোগ পাই।’ অতটুকু পথ পাড়ি দিতে অবশ্য এর কোনো বিকল্পও নেই রুবেল হোসেনের।
RP:-Mohammad Kayum