মেঘনা ইউএনও এর সাক্ষাৎকার

কুমিল্লা চট্টগ্রাম বিভাগ মেঘনা

রিপোর্টার ঃ আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন স্যার?
ইউএনও, মেঘনা ঃ ওয়া আলাইকুম আস সালাম। আলহামদুুলিল্লাহ, ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
রিপোর্টার ঃ জ্বি স্যার, ভালো। আপনি তো এবার জাতীয় প্র্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৩ এ জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাচিত হয়েছেন। কেমন লাগছে ?
ইউএনও, মেঘনা ঃ আসলে জীবনে কিছু কিছু অর্জন দায়বদ্ধতা ও কাজের উদ্দীপনা এবং স্পৃহা বাড়িয়ে দেয়। এটি তেমনই একটি অর্জন। আমি আমার এই অর্জন মেঘনাবাসীকে উৎসর্গ করছি।
রিপোর্টার ঃ আপনি তো ইতোমধ্যে মেঘনা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন। এতো ব্যস্ততার মাঝেও প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করছেন, ক্লাস নিচ্ছেন। এই বিষয়টি আপনি কীভাবে উপভোগ করেন?
ইউএনও, মেঘনা ঃ প্রাথমিক শিক্ষা হলো শিক্ষার মূল বুনিয়াদ । একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল বা সম্ভাবনাময় হবে তা নির্ভর করে প্রাথমিক শিক্ষার উপর। তাই প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা যতটা মজবুত বা যুগোপযোগী হবে, শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবন, যেমন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষা ততটা মজবুত ও টেকসই হবে। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা কাদা মাটির মতো। কাদা মাটি দিয়ে আমরা যেমন সহজে কোনো আকৃতি দিতে পারি, কোনো জিনিস সহজে তৈরি করতে পারি। তেমনি প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আমরা আমাদের ইচ্ছামতো তৈরি করতে পারি। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই কাজ করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষাকেই আমি বেছে নিয়েছি।
রিপোর্টার ঃ প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে আর কী কী পরিকল্পনা আছে?
ইউএনও, মেঘনা ঃ প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে আমার পরিকল্পনা না, বরং স্বপ্ন আছে। এরই অংশ হিসেবে আমি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে নানামুখী কর্মকান্ড হাতে নিয়েছি। এছাড়াও, মানসম্মত শিক্ষার বিষয়টি আমাদের টেকসই উন্নয়নেরও অংশ। যেহেতু, প্রাথমিক শিক্ষাই একজন শিক্ষার্থীর মূল ভিত্তি বা সম্বল, সেহেতু আমার সকালটা শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষার ভাবনা নিয়ে। দিনের একটা বড় অংশ আমার ব্যয় হয় প্রাথমিক শিক্ষায় আমার করনীয় সম্পর্কিত পরিকল্পনা করা নিয়ে। এই জায়গাটি আমার অত্যন্ত ভালোলাগার এবং ভালোবাসার একটি জায়গা। বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রকাশ করতে বদ্ধ পরিকর। এজন্য জোর দেয়া হচ্ছে গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি এবং আইসিটি শিক্ষার উপর। আর এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে শুরু করতে হবে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই। তাই, আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমার উপজেলার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসব বিষয়গুলোর প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃদ্ধি এবং দক্ষতা অর্জনের জন্য সূ² পরিকল্পনা করেছি এবং ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করছি। ইতোমধ্যেই আমি কার্যকরভাবে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে প্রতিদিন কমপক্ষে দুটি ক্লাস পরিচালনা করা নিশ্চিত করেছি। উপজেলা প্রশাসনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শিক্ষকদের আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছি। বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহী ও পারদর্শী করে গড়ে তোলার জন্য উক্ত বিষয়গুলোর উপর বিশেষভাবে জোর দেয়া হচ্ছে। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিটি জেলায় নির্ধারিত কিছু ইন্ডিকেটর নির্ধারণ করেছেন। কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলাটি বিজ্ঞান শিক্ষার ইন্ডিকেটর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। এজন্য আমি আমার মেঘনা উপজেলায় বিজ্ঞান বিষয়ের প্রতি জোর দিয়েছি এবং নিয়মিত বিজ্ঞান- কুইজসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ইংরেজি, গণিত এবং আইসিটি বিষয়ে নিয়মিত কুইজ প্রতিযোগিতা পরিচালিত করছি। কাবিং কার্যক্রম জোরদারও আমার পরিকল্পনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিদ্যালয়ে কাবিং কার্যক্রম পরিদর্শন এবং শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার জন্য মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য ৪টা ভিত্তি ঠিক করা হয়েছে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি।’ এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমি শিক্ষক, অভিভাবক এবং সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিয়ে কাজ করছি। আমার এই কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
রিপোর্টার ঃ আপনাকে ধন্যবাদ স্যার
ইউএনও, মেঘনা ঃ আপনাকেও ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *