দিত্বীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেঘনায় বিদ্রোহীদের কাছে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে।
১১ নভেম্বর অনুষ্টিত নির্বাচনে ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪ টিতে বিদ্রোহী ৪ টিতে নৌকা বিজয়ী হয়, এই ৪ টির মধ্যে চন্দনপুর ইউনিয়নে আহসান উল্যাহ নৌকার প্রাথী হিসেবে বিনাপ্রতিদ্ধন্ধীতায় নির্বাচিত হন। ১১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্টিত হয়।
২ টি ইউনিয়নে ব্যাপক সহিংসতা হয় কিছু জায়গায় মেম্বার সমর্থকদের মধ্যে দাওয়া পাল্টাদাওয়ায় হতাততের ঘটনায় ২৪ জন আহত ও ২ জন নিহত হয়। ২নং মানিকারচর ইউনিয়ন ও ৪নং চালিভাঙ্গা ইউনিয়নে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। মানিকারচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টার দিকে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে একজনের মৃত্যু হয়। নিহত শাওন আহমেদ (২৫) ভল্লবেরকান্দি গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে। দুপুর আড়াইটার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সালাউদ্দিন মোল্লা তিনি জানান, এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ অন্যদের অবস্থাও আশংকাজনক।
স্থানীয়রা জানান, দুপুর ১ টার দিকে একদল বহিরাগত হঠাৎ করেই ভোটকেন্দ্রের সামনে এসে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে, এ সময় পুলিশ বাঁধা দিলে বহিরাগতদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে জয় মিয়া, শাওন আহমেদ ও নাজমুল নামের তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এ তিনজনসহ আহতরা হলেন মানিকারচর গ্রামের শামিম, শুভ, আবুল, নাজমুল, রিপন, আলাউদ্দিন, সাহেদ সহ অনেকেই আহত হয়।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ঘটনার সময় মানিকারচর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা নাজমুল হাসান মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেন যে ভোটকেন্দ্রে বহিরাগতরা প্রবেশ করে ভোট দিছে। এ ঘোষণার পরই ভোটকেন্দ্রে উত্তেজনা শুরুহয়। তারপরই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই ইমামকে আটক করেছে পুলিশ।
মানিকারচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম জানান, হঠাৎ একটি মিছিল কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে আসে। তখন মিছিল থেকে এলোপাতাড়ি ঢিল ছোড়া শুরু হয়। ভোটারেরা ভয়ে পালিয়ে যান। এ সময় হামলাকারীরা স্কুলে ভাঙচুর চালায় এবং ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। হামলার পর ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত করা হয়। পরে দুপুর ২টায় আবার ভোট নেওয়া শুরুহয়।
অপরদিকে ভাওরখোলা ইউনিয়নের খিরারচর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেম্বার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সানাউল্লাহ ঢালী (৭০) নামে আরেক জন নিহত হয়েছেন। তিনি খিরারচর এলাকার বাসিন্দা। জানা যায়, সংঘর্ষের সময় তিনি আহত হন উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তায় তিনি মারা যান। স্থানীয় অনেকের বক্তব্য ঘটনা স্থলে তিনি স্টোক করেন।
৪নং চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের রামপ্রসাদের চর কেন্দ্রে সতন্ত্রপার্থী হুমায়ুন কবির ও নৌকা প্রার্থী লতিফ সরকার এর সমর্থদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, এতে হুমায়ুন কবির ও উপজেলা শেখ রাসেল শিশু কিশর পরিষদের সভাপতি কাইয়ুম হোসাইন সহ অনেকেই আহত হয়। তা ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৪ জন ও নিহত ২। নিহতের বিষয়টি কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জালাল হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
মেঘনায় ৮ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটের ফলাফল।
১নং রাধানগর ইউনিয়নঃ- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নৌকা মনোনীত আব্দুল বাতেন- ২৮৫৭, বিদ্রোহী প্রার্থী মজিবুর রহমান মজিব আনারস মার্কা ৫৩৪৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী।
২নং মানিকারচর ইউনিয়নঃ- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নৌকা মনোনীত মোঃ জাকির হোসেন ৫৩০৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী, বিদ্রোহীপ্রার্থী মোঃ হারুন অর রশিদ আনারস মার্কা ২৬৫৭ ভোট।
৩ নং চন্দনপুর ইউনিয়নঃ- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নৌকা মনোনীত মোঃ আহসান উল্যাহ বিনাপ্রতিদ্ধন্ধীতায় নির্বাচিত হন।
৪ নং চালিভাঙ্গা ইউনিয়নঃ- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নৌকা মনোনীত মোঃ লতিফ সরকার ২৮৬২, বিদ্রোহী প্রার্থী হুমায়ুন কবির আনারস মার্কা ৫৬৬৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী।
৫ নং বড়কান্দা ইউনিয়নঃ- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নৌকা মনোনীত মোঃ আবুল কাশেম ১৯৬০, স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মোঃ সফিকুল হক আনারস মার্কা ২১৩৭, বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ ফারুক হোসেন ঘোড়া মার্কা ২৩৬৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী।
৬ নং গোবিন্দপুর ইউনিয়নঃ- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নৌকা মনোনীত মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন (তপন) ৬৫৭৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী, বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ শফিউল্লাহ ঘোড়া মার্কা ৩০২৩, স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম রেজা আনারস মার্কা ৩১০৬।
৭ নং লুটেরচর ইউনিয়নঃ- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নৌকা মনোনীত মোঃ সানাউল্লাহ শিকদার ৩২৫৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী, বিদ্রোহী প্রার্থী মোজাম্মেল হক আনারস র্মাকা ৩২১৮।
৮ নং ভাওরখোলা ইউনিয়নঃ- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নৌকা মনোনীত মোঃ সিরাজুল ইসলাম ২৬১৫, বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ সিরাজুল ইসলাম ঘোড়া মার্কা ৩০৬৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী।