মেঘনায় গ্রামীন বাজার উন্নয়ন কাজে অনিয়ম উপজেলা প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ।

কুমিল্লা চট্টগ্রাম বিভাগ মেঘনা

মোঃ শহীদুজ্জামান রনি: কুমিল্লা মেঘনায় উপজেলা প্রকৌশলী খন্দকার মাহমুদুল আশরাফের বিরুদ্ধে ঠিকাদার ১৭টি আইটেমের কাজ না করার পরেও চূড়ান্ত বিল দেয়ার জন্য সুপারিশ করে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে ফাইল পাঠানের অভিযোগ উঠেছে। এলজিডির নির্বাহী প্রকৌশলী কুমিল্লা এবিষয়ে তদন্ত করে ১৭টি আইটেমে কাজ না করার বিষয়টি নিশ্চিত হলে, নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা মোহাম্মদ ইফতেখার আলী উপজেলা প্রকৌশলীকে কর্তব্যকাজের অবহেলা অদক্ষতা ও সরকারি কর্মচারি শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দিয়েছেন। এঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে,উপজেলার বড়কান্দা ইউনিয়নে গ্রামীন বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রামপুর বাজার উন্নয়নের প্রায় ২কোটি টাকা ব্যায়ের কাজ পান রফিক কন্সট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বাজার উন্নয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে উপজেলা প্রকৌশলী খন্দকার মাহমুদুল আশরাফ এই কাজের সকল আইটেম সম্পন্ন হয়েছে এই মর্মে সুপারিশ করে এলজিডির নির্বাহী প্রকৌশলী কুমিল্লাকে বিল প্রস্তুত করে পাঠান। নির্বাহী প্রকৌশলী তার কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন ও সাইফুদ্দিন আজম গত ১৬ই আগস্ট সরেজমিন তদন্ত করে রামপুর বাজার উন্নয়ন কাজের ১৭টি স্থানে অনিয়ম দেখতে পান। এবিষয় গুলো উল্লেখ করে নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে উল্লেখ করা হয় ভবনের সাফ ফেস ড্রেন বাস্তবে ৮০মিটার থাকলেও বিলে ১শ মিটার দেখানো হয়। ভবনের ফলস সিলিং বাস্তবে না থাকলেও পরিমাপ বহিতে দেখানো হয়। ভবনের ইউনি ব্লক কাজের কার স্টোন বাস্তবে না থাকলেও বিল প্রস্তুত করা হয়। ভবনের সিড়িও ছাদের রেলিং এর উচ্চতা বাস্তবে ২ফুট ৯ইঞ্চি থাকলেও দেখানো হয় ৩ফিট। ভবনের বাথরুমের ডোর ফ্যান চারটি থাকলেও দেখানো হয় ছয়টি। ভবনের বাথরুমের ডোর সাটার বাস্তবে চারটি থাকলেও দেখানো হয় ছয়টি। ভবনের বাথরুমের লং প্লান বাস্তবে দুটি থাকলেও দেখানো হয় ৪টি। ভবনের বাথরুমের বিব কক বাস্তবে ৪টি থাকলেও দেখানো হয় ৮টি। ভবনের বাথরুমের পেপার হোল্ডার বাস্তবে দুটি থাকলেও দেখানে হয় ৪টি। ভবনের ছাদে পানির ট্যাংক বাস্তবে একটি পরিমাপ বহিতে দুটি দেখানো হয়। ভবনের ইন্সপেকশন পিট বাস্তবে নাই কিন্তু পরিমাপ বহিতে ১৬টি দেখানো হয়। ভবনের ইন্সপেকশন পিট কভার বাস্তবে নাই কিন্তু পরিমাপ বহিতে ১৬টি বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। ভবনের বাথরুমের টাওয়েল রেইল বাস্তবে নাই কিন্তু পরিমাপ বহিতে ২টি বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। ভবানের বাথরুমের গ্লাস সেলফ বাস্তবে নাই কিন্তু পরিমাপ বহিতে ২টি বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। ভবনের বাথরুমের সাবান দানি বাস্তবে নাই কিন্তু পরিমাপ বহিতে ২টি বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। ভবনের ফায়র এক্সটিনগুইসার বাস্তবে নাই কিন্তু পরিমাট বহিতে ৪টি বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। ভবনে নীতলার এলইডি লাইট বাস্তবে নাই কিন্তু পরিমাপ বহিতে ৬৫টি বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়াও মার্কেট ভবনের ডিজাইনে দোতলার দুই পাশে ২টি করে মোট ৪টি বাথরুমের ব্যবস্থা থাকলেও বাস্তবে দোতলার দুই পাশে ১টি করে মোট ২টি বাথরুম করা হয়েছে যাহা ডিজাইন বহির্ভূত। রফিক কন্ট্রাকশনের মালিক মো: রফিক এর সাথে মুটোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের নির্দেশে আমরা রামপুর বাজার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করি। এসময় আমরা ১৭টি আইটেমে কাজ না করেও কাজ করা হয়েছে এই মর্মে চূড়ান্ত বিল দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিলো বিষয়টি আমরা একচেঞ্জ স্যারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। মেঘনা উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল আশরাফ জানান, ঠিকাদার অসুস্থ থাকার কারনে কাজ করে দিবে বলায় আমি কাজ সম্পন্ন হয়েছে এই মর্মে চূড়ান্ত বিল প্রদান করতে একচেঞ্জ স্যারের কাছে সুপারিশ করি। স্যার তদন্ত করে কিছু কাজের ত্রুটি পাওয়ায় আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। এখনও আমি জবাব দেইনি। কাজের স্বার্থে আমি এমনটা করেছি। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কুমিল্লা মির্জা মোহাম্মদ ইফতেখার আলী জানান, মেঘনার রামপুর বাজারের কাজের চূড়ান্ত বিলের জন্য উপজেলা প্রকৌশলী একটি সুপারিশ করে আমার কাছে পাঠিয়েছিলো। বিষয়টি আমার দুই প্রতিনিধির মাধ্যমে তদন্ত করে ১৭টি আইটেমের অনিয়ম পাওয়া গেছে। এঘটনায় কর্তব্য পালনে অবহেলা সরকারি কর্মচারি শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা লঙ্গন করা হয়েছে, একারণে উপজেলা প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হলেই চূড়ান্ত বিল দেয়া হবে। এদিকে গত ১৩ এপ্রিল লাইভে এসে উপজেলা ঠিকাদার মোহাম্মদ সেলিম আহমেদ এই প্রকৌশলী নামে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন তিনি বলেন ঘুষ ছাড়া এ প্রকৌশলী একটা ফাইলে সাইন করে না, আমরা কাজ করেও বিল পাইনা এদিকে কাজ না করেই বিল দিয়ে দেন সব টাকার খেলা, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ঠিকাদার বলেন আমরা ওর বিরুদ্ধে কথা বলতেও ভয় লাগে আমাদের বিল আটকে দিবে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার করবে। নাম বলাতে অনিচ্ছুক উপজেলা এলজিডি অফিসের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী উনার বিরুদ্ধে খারাপ আচরণ সহ নিজের দোষ মোচনের জন্য শোকজ করেন স্টাফদের । গত ৩ এপ্রিল স্যার না ডাকায় উপজেলার এক সাংবাদিকের সাথেও করেন খারাপ আচরণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *