মোঃ আলাউদ্দিন:
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাসের অপসারণ ইস্যুতে মানববন্ধনের প্রতিবাদে পাল্টা মানববন্ধন করেছে উপজেলার সকল দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী বৃন্দ। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়।
জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সম্মুখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাসের বিরুদ্ধে ‘মেঘনা নাগরিক সমাজ’ নামীয় ব্যানারে কথিত মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মানববন্ধনে ইউএনও’র বিরুদ্ধে মেঘনা উপজেলা হতে ভাটেরচর পর্যন্ত প্রধান সড়ক মেরামতে অসহযোগিতা করা, আওয়ামী নেতাকর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা ও ভারতীয় “র” এজেন্ট মর্মে মানববন্ধনে অভিযোগ আনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায়, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে উপজেলার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পাল্টা মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাসের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। তিনি এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে অদ্যাবধি কোন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেননি, আমরা কখনো দেখি নাই। দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি মোতাবেক দাপ্তরিক কার্যক্রমসহ সকল দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া তাঁকে ভারতীয় “র” এজেন্ট হিসেবে যে অপবাদ দেয়া হয়েছে তাও ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক। তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় ওনার বিরুদ্ধে এই ধরণের মিথ্যা অপবাদ ও হয়রানি মূলক মানববন্ধন করা হয়েছে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাসের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগসহ উপজেলায় যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয় সেজন্য সকাল ১১টার দিকে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে উপজেলা পরিষদের সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। এতে উপজেলা শান্তি রক্ষায় বিশৃঙ্খলাকারিদের উদ্দেশ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. নাদিমুজ্জামান বলেন- আপনারা হয়তো অনেকে অবগত আছেন, কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে মানববন্ধন করে অপসারণ করা যায় না। যা ইতিপূর্বে সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। বেশ ২ দিন যাবৎ অনেকেই বিভিন্নভাবে ইউএনও মহোদয়ের বিরুদ্ধে অ্যালিগেশন দিয়েছেন। তা যদি সত্যি হয় আপনাদের সাধুবাদ জানাই। আর যদি মিথ্যা হয় তাহলে আমরা এই অভিযোগের কঠোর বিরোধিতা করছি। আজকে দেখলাম আপনারা লাঠিসোঁটা নিয়ে আন্দোলন করছেন, আমরা এর কঠোর বিরোধিতা করছি। যদি কারও কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে আইনি ভাবে ব্যবস্থা নিন। আমরা চাই না মেঘনায় কোনো অরাজকতার সৃষ্টি হোক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের শিক্ষার্থী সিফাতুল ইসলাম বলেন- আজকে আমাদের এখানে অবস্থানের কারনটা ক্লিয়ার করতে চাই। গতকাল একটি বিএনপির মানববন্ধন হয়েছিল, তাকে নিয়ে অনেকেই অ্যালিগেশন দিয়েছেন। অ্যালিগেশন থাকতেই পারে, থাকবে না যে-তা না। যদি তার বিরুদ্ধে যৌক্তিক দাবী ও প্রমাণ থাকে তাহলে আমরাও আপনাদের পাশে আছি। পাশে থেকে তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থা নেবো। আর যদি অযৌক্তিক অভিযোগ হয় তাহলে আমরা এর বিরুদ্ধে কঠোর বিরোধিতা করছি। ইতিমধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছি এক পক্ষ ইউএনও মহোদয়কে চায় আরেক পক্ষ চায় না। এমনকি তিনি হিন্দু ধর্মালম্বী হওয়ায় তাকে ভারতের “র” এজেন্ট বলা হচ্ছে। এমন হবে কেন মেঘনায়? কেউ নৈরাজ্য সৃষ্টি করবেন না। এই পর্যন্ত যা হয়েছে তো হয়েছে, সামনে যেন আর মানববন্ধন না হয় আপনাদেরকে আহ্বান করছি।
অন্যদিকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনদের বক্তব্য নিলে তারা জানান, আমাদের ইউএনও মহোদয়ের বিরুদ্ধে যে মানববন্ধন হয়েছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তিনি খুবই ভালো মানুষ এবং দক্ষ, বিচক্ষণ, মানবিক ও সদালাপী। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আওয়ামী পন্থী নামীয় বিএনপির ষড়যন্ত্র চলছে। তার বিরুদ্ধে আনিত অযৌক্তিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।