বিশ্বকাপে যে স্মৃতি ভুলে যেতে চায় বাংলাদেশ

খেলাধুলা

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মন ভালো করা স্মৃতি অনেক। সেই সঙ্গে আছে কিছু অপ্রত্যাশিত স্মৃতি, যা ভুলে যেতে চায় বাংলাদেশ। কিন্তু তা হলে কি হবে। সেই দুঃস্বপ্নগুলো যে তাড়া করে বেড়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসকে!

১৯৯৯ সাল থেকে শুরু। এরপর ২০০৩, ২০০৭, ২০১১ আর ২০১৫—পাঁচটি বিশ্বকাপ ইতিমধ্যেই খেলা হয়ে গেছে বাংলাদেশের। ২০০৩ বিশ্বকাপটা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের দুঃসহ এক স্মৃতি। সেবার কানাডা-কেনিয়ার বিপক্ষে হার সঙ্গী হয়েছিল বাংলাদেশ। এখনো অনেক ক্রিকেটপ্রেমীই দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০৩ বিশ্বকাপের কথা মনে করে শিউরে ওঠেন। বাজে পারফরম্যান্সেরও একটা সীমা থাকে। সেবার সব সীমাই অতিক্রম করে গিয়েছিল খালেদ মাসুদের দল।

যতই ভুলতে চান, বিশ্বকাপের আরেকটি আসরের আগে অতীতের বাজে স্মৃতিগুলো কিন্তু মনে পড়বেই…

শত্রু যখন কড্রিংটন
দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল কানাডা। জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা যাবে। এমন কথাবার্তা মোটামুটি লেখাও হয়ে গিয়েছিল পত্র-পত্রিকায়। ম্যাচের দিনটিও ছিল চমৎকার। ঈদুল আজহার ঠিক আগের দিক সন্ধ্যা। ঈদের আনন্দের মধ্যে বিশ্বকাপের ম্যাচে জয়—দুর্দান্ত একটা চিত্রনাট্য। কিন্তু সেদিন বাংলাদেশ হেরে গিয়েছিল আইসিসির সহযোগী এই সদস্য দেশের কাছে, তাও ৬০ রানের বড় ব্যবধানে। প্রথমে ব্যাটিং করা কানাডার ইনিংস শেষ হয়েছিল ১৮০ রানে। আরও অল্প রানে গুটিয়ে যেতে পারত তারা, কিন্তু শেষ উইকেটে ২১ রান যোগ করে তারা। ১৮১ রানের লক্ষ্য, আহামরি তো কিছু নয়। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ পুরোপুরি দিগ্ভ্রান্ত। অস্টিন কড্রিংটন নামের এক পেসার ডারবানের উইকেটে সেদিন হয়ে উঠেছিলেন ভয়ংকর। ২৭ রানে ৫ উইকেট নিয়ে তিনি একাই হারিয়ে দেন বাংলাদেশকে। আউট করেন—হান্নান সরকার, অলক কাপালি, মোহাম্মদ রফিক, তাপস বৈশ্য ও মাশরাফি বিন মুর্তজাকে।

চামিন্ডা ভাসের সেই ওভার
২০০৩ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে কানাডার কাছে হারের স্মৃতি তখনো তরতাজা। তিন দিনের মাথায় পিটারমারিজবার্গে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি বাংলাদেশ। সেই ভাস-মুরালিদের লঙ্কান দল। কঠিন প্রতিপক্ষ। কানাডার বিপক্ষে হার ভুলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ লড়াই করবে, এমন প্রত্যাশা নিয়েই টেলিভিশনের সামনে বসেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু একী! দুঃস্বপ্ন দিয়ে শুরু হলো সে ম্যাচ। চামিন্ডা ভাস ইনিংসের প্রথম তিন বলেই তুলে নিলেন হান্নান সরকার, মোহাম্মদ আশরাফুল ও এহসানুল হকের উইকেট। ইনিংসের প্রথম তিন বলেই হ্যাটট্রিক করে ইতিহাস গড়লেন তিনি। এক বল বাদে পঞ্চম বলে ফেরালেন সানোয়ার হোসেনকে। ৫ বলে ৪ উইকেট। সে ম্যাচে ভাসের প্রথম বলেই যেভাবে বোল্ড হয়েছিলেন, সেটির ভিডিও ফুটেজ দেখে বোধ হয় ১৫ বছর পরেও আঁতকে ওঠেন হান্নান নিজে! সে ম্যাচে ১০ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ।

হরিষে বিষাদ: আয়ারল্যান্ডের কাছে হার
২০০৭ বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য অর্জনের। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব পেরোনোর আনন্দ যখন দলকে ঘিরে আছে, ঠিক সে সময়ই সুপার এইটে অপ্রত্যাশিত এক হারের মুখোমুখি হয় হাবিবুল বাশারের দল। প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড। যে দল সৌরভ-শচীন-রাহুল-কুম্বলে-ধোনির ভারতকে হারিয়ে সুপার এইটে উঠেছে তারা আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে যাবে, সেটি ছিল পুরোপুরি অভাবনীয় এক ব্যাপার। যদিও আয়ারল্যান্ড কিন্তু সেবার পাকিস্তানের মতো দলকে বিদায় করে দিয়েই সুপার এইটে জায়গা করে নিয়েছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে আইরিশদের কাছে হারার পরপরই দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবারের মতো হারিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল বাংলাদেশ।

ঘরের মাঠে ‘৫৮’ আর ‘৭৮’ লজ্জা

২০১১ সালে ভারত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথ স্বাগতিক বাংলাদেশ। গোটা দেশ উৎসবমুখর। লাল-সবুজ রঙে রাঙা। বাংলাদেশের প্রতিটি ম্যাচই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে—হাজার হাজার মানুষের উন্মত্ত অপেক্ষা। কিন্তু এই উৎসবের আবহেই গ্রুপ পর্বের দুটি ম্যাচে এই মিরপুরেই ৫৮ ও ৭৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জা মাথায় নিতে হয়েছে সাকিব আল হাসানের দলকে। প্রথমটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, দ্বিতীয়টিতে প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল শুক্রবার। জুমআর নামাজ আর ছুটির আয়েশি আবহ। কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমীরা সেদিন জুমআর নামাজ পড়ে এসে ঠিকমতো টেলিভিশনের সামনে বসতে না বসতেই দেখলেন ক্যারিবীয় বোলারদের তোপ। যাদের খেলা দেখার টিকিট ছিল, তারা যানজট পেরিয়ে স্টেডিয়ামে যেতে যেতেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। গ্রুপের শেষ ম্যাচেও একই অবস্থা। দক্ষিণ আফ্রিকার ২৮৪ রানের জবাবে ৭৮-এই শেষ! মিরপুরে শেষ বিকেল সেদিন ভয়ংকর হয়ে উঠেছিলেন দুই প্রোটিয়া পেসার লনওয়াবো সতসোবে আর রবিন পিটারসন। অথচ, এর আগেই চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল তামিম-মাহমুদউল্লাহরা।

RP:-Mohammad Kayum

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *