বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জুতা পায়ে স্বাধীনতা স্তম্ভে দুই মুক্তিযোদ্ধা।

বাংলাদেশ

শাহীন সুলতানা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :

শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে জুতা পায়ে স্বাধীনতা স্তম্ভে উঠে বিজয় দিবসের পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করলেন দুই মুক্তিযোদ্ধা। ঘটনাটি ঘটেছে ১৬ ডিসেম্বর সোমবার কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর বাজার কেন্দ্রীয় শহীদ সেলিম স্মৃতি সংসদ প্রাঙ্গনস্থ স্বাধীনতা স্তম্ভে। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি সহ এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

বিজয় দিবস। বাঙ্গালী জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় অর্জন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী এবং ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে বাঙ্গালী জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। গৌরবোজ্জ্বল বিজয় অর্জনের চিরস্মরণীয় এই দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সকল বীর শহীদদের স্বরণে সারাদেশের ন্যায় কুলিয়ারচরে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০১৯ উদযাপিত হয়।

এ উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর সোমবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে থানা প্রাঙ্গণ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবস উদযাপনের সূচনা করা হয়। দিনব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি ভবন সমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল পনে ৯টার দিকে ক্রমান্বয়ে উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা, রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, থানা প্রশাসন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপজেলা সরকারী কর্মজীবী কল্যাণ পরিষদ, সামাজিক সংগঠন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কুলিয়ারচর জেনারেল হাসপাতাল, হেলথ্ কেয়ার ডায়াগনষ্টি সেন্টারের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক ভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ সেলিম স্মৃতি সংসদ প্রাঙ্গনে স্বাধীনতা স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

সর্বশেষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আলহাজ্ব মোঃ জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে এক দল বীর মুক্তিযোদ্ধা পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে ওই স্বাধীনতা স্তম্ভে এসে প্রথমেই হৈ চৈয় করে। পরে তাঁরা নির্ধারিত স্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ না করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে জুতা পায়ে নিয়েই দুই মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভের উপরে উঠে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। এমনকি কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার পায়ের কাছেই ফুলের একটি স্তবক পড়ে থাকলেও তা কেউ তুলে সন্মান দেখাননি বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মোঃ আব্দুল হাই এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জুতা পায়ে স্মৃতিস্তম্ভে ওঠার কথা স্বীকার করে বলেন, অজান্তে আমরা জুতা পায়ে উঠেছি। বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিবেননা।

এদিকে, জুতা পায়ে স্মৃতিস্তম্ভে ওঠার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাঁদের এ কর্মের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অনেকেই বলেন, দেশের শ্রেষ্ট সন্তান হয়ে তাঁরা শহীদদের প্রতি চরম অবমাননা করেছে। যা খুবই দুঃখজনক।

এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আলহাজ্ব মোঃ জিল্লুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দিবসটি পালন উপলক্ষে আমাদের মানষিক অবস্থা ভালো ছিলনা। কখন দু’জন মুক্তিযোদ্ধা জুতা পায়ে স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভে ওঠেছে তা খেয়াল করিনি। আমার নজরে আসলে এমন হতোনা।

এব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাউসার আজিজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে আমি খেলার মাঠে চলে যাই। মুক্তিযোদ্ধাগণ কখন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে তা আমি দেখিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *