পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার অনুপস্থিতির বিপর্যয় গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত মনে করছেন গণতন্ত্রে বিশ্বাসীরা। সিটি নির্বাচনে অনুপস্থিত ভোটাররা নির্বাচন কমিশনকে লাল কার্ড দেখিয়েছেন বলে মনে করে অভিজ্ঞমহল।
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকে সর্বস্তরের মানুষের মুখে কথা একটাই- এত ভোটার গেল কই? উপস্থিতি কেন এত কম! আওয়ামী লীগের ভোটারাইবা এল না কেন? পোস্টার-মাইকিংসহ প্রচার-প্রচারণার তো মোটেও কোনো ঘাটতি ছিল না।
কারো মতে, ভিন্নমতের অনেকে ভয়ে ভোট কেন্দ্রে আসেননি। তাদের অনেকের মতে, ভোট দিয়ে কী লাভ, যে যেতার সে-ই তো জিতবে! আবার ক্ষমতাসীনদের অধিকাংশের নাকি মত- কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে কী লাভ, আমাদের প্রার্থী তো এমনিতেই জিতবে।
কারো কারো মতে, কেন্দ্রের আশপাশে বহিরাগতদের পেলে আটক করা হবে- এ ভয়ে অনেকে কেন্দ্রমুখী হননি। এরকম নানা কারণ আলোচনা-সমালোচনায় সামনে নিয়ে আসছেন বিশ্লেষকরা। ঘটনা যা-ই হোক না কেন, ভোটার উপস্থিতি ৩০ শতাংশের কম ছিল এটাই বাস্তবতা।
নির্বাচনের দিন একজন সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান সুমন মারাত্মক যখম হন। আরো অনেকে আহত হন। ভিন্নমতের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগও আছে। অনেককে বলা হয় ভোট দেওয়া হয়ে গেছে, আপনি চলে যান। এরকম অনেক অভিযোগ একশ্রেণীর মুখে মুখে।
মজার ব্যাপার হলো, ইবিএম প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে চরম রসিকতা করেছে। তার আঙ্গুলের চাপ সত্যায়িত করেনি তারই পরম আরাধ্য ইবিএম মেশিন। তার এত সাধের ইবিএম তার সঙ্গেই বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। বিষয়টি সচেতন মহলে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে।
কারণ যা-ই থাকুক না কেন, রাজধানী ঢাকার ৭০ শতাংশ ভোটার এবার ভোট দিতে যাননি, এতটাই চূড়ান্ত সত্য। এর ব্যর্থতা শতভাগই নির্বাচনের কমিশনের বলে মনে করেন সাবেক একাধিক নির্বাচন কমিশনার, পর্যবেক্ষক, সচেতন জনগোষ্ঠীসহ অভিজ্ঞ মহল।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, প্রবীণ রাজনীতিক ও স্বচ্ছ গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের মতে, ভোটারদের বড় অংশ অনুপস্থিতির মধ্য দিয়ে বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি সরাসরি অনাস্থা প্রদর্শন করেছে। তাদের মতে, এটা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকত, যার দ্রুত অবসান হওয়া অতীব জরুরি।
এক সাগর রক্ত ও লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার সুপ্রতিষ্ঠার জন্য। সে দেশে নাগরিকদের ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের খাঁটি পদ্ধতি যখন বিপর্যস্ত, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটাররা যখন এর প্রতি বিমুখ; তখন বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সময়ের দাবি।
গণতন্ত্রের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা থাকলে, সব রাজনৈতিক দলের এ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছা দরকার। অন্যথায় গণতন্ত্র নিয়ে মায়াকান্না আর নির্বাচন কমিশন নিয়ে অভিযোগের পাহাড় জমতেই থাকবে। আসল কাজ অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অধরাই থেকে যাবে। যে কারণে দ্রুত ঐকমত্যের বিকল্প নেই।
প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস