জবির তিন বিভাগে তীব্র সেশনজট, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ
ইমরান হুসাইন, জবি প্রতিনিধিঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন, নাট্যকলা ও চারুকলা বিভাগে সেশনজট কাটছে না। এতে করে শিক্ষার্থীদের ছয় মাস সময়ের এক সেমিস্টার শেষ করেতে সময় লাগছে আট থেকে দশ মাস। ফলে শিক্ষার্থীদের চার বছর মেয়াদি স্নাতক শেষ করতে পাঁচ বছর এবং স্নাতকোত্তর শেষ করতে সাত বছরের বেশি সময় লাগছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান সময়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ একাডেমিক রুটিন অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা নিতে শিক্ষকদের অনীহা ও স্বেচ্ছাচারিতা, নিজেদের মধ্যকার অন্তঃকোন্দল ও ক্লাসরুম সংকটের কারণে সেশনজট আরো তীব্র হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালুকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন নামে নতুন বিভাগটির অবস্থা সবচেয়ে বেশি নাজুক। বিভাগটির প্রথম ব্যাচ ২০১৫-১৬ ও দ্বিতীয় ব্যাচ ২০১৬-১৭  শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এক বছর পিছিয়ে ক্লাস করছেন। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এক সেমিস্টার পিছিয়ে থেকে ৪র্থ সেমিস্টারে ক্লাস করছেন। এদিকে পূর্ববর্তী সেমিস্টারের ভাইবা পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীদের নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগীয় চেয়ারম্যান ক্যাম্পাসে অনিয়মিত। বেশিরভাগ সময়ই তুচ্ছ অজুহাতে ক্লাস-পরীক্ষা নেন না শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলায় সেশন জটের অবস্থাও ভয়াবহ। এ নতুন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তা সংকটের কারণে শিক্ষার্থী সেশন জটে ভুগছেন। নবীন শিক্ষকরা পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যাবলী ও প্রশাসনিক কাজে দক্ষ না হওয়ায় বিভাগটির একাডেমিক কার্যক্রম ধীর গতিতে চলছে। নাট্যকলা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা দুই বছর পিছিয়ে থেকে স্নাতক পরিক্ষা দিয়েছে। এখনো তাদের ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ১৯ মাস পিছিয়ে ৭ম সেমিস্টার ও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ১৫ মাস পিছিয়ে ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে ক্লাস করছেন। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরাও ইতোমধ্যে ৯ মাস পিছিয়ে পড়েছে। ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীরা ৭ মাস পিছিয়ে মাত্র ৪র্থ সেমিস্টার শেষ করেছে। এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ছয় মাস মেয়াদি সেমিস্টার শেষ করতে ৯ মাস সময় লাগছে। ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা ১১ মাসে শেষ করেছে মাত্র এক সেমিস্টার। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সেমিস্টারের নির্ধারিত ক্রেডিট ক্লাস শেষ হলেও পরীক্ষার তারিখ ঘোষনা করা হচ্ছে না। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর কয়েকবার লিখিতভাবে জানাতে গেলেও বিভাগ থেকে বাধা দেয়া হয়। এছাড়া বিভাগটিতে ক্লাসরুম সঙ্কটের কারণে একব্যাচের পরীক্ষা হলে অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এজন্যও শিক্ষার্থীরা বিভাগটির সেশনজটের ভোগান্তিতে পড়ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ ২০১৪ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করলেও সাত বছরে মাত্র ২০১৩-১৪ সেশনের একটি ব্যাচ স্নাতক শেষ করেছে। এর পরবর্তী ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থীরা ৮ম সেমিস্টার ও ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থীরা ৭ম ব্যাচে ক্লাস করছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের এই দুই সেশনের শিক্ষার্থীরা স্নাতক শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নিয়েছে। এই বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীরা ৭ মাস পিছিয়ে ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে, ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীরা দুই মাস পিছিয়ে আছে। এই সেশনের শিক্ষার্থীরা এখনো ৩য় ও ৪র্থ সেমিস্টারের ফলাফল পায়নি। ২০১৮-১৯ সেশনের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ৩য় সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করলেও এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখনো ২য় সেমিস্টারের ফাইনাল পরিক্ষা দিতে পারেনি।
জবি ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ হালিম বলেন, আমাদের প্রথম থেকেই ক্লাসের সংকট ছিলো। এজন্য বিভাগে জট লেগে আছে। বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকরাও বিভাগের পুরোপুরি সবকিছু বুঝে না। আমাকে একাই সবদিক সামলাতে হয়। সেশনজট কমানোর জন্য আমি একনিষ্ঠভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিভাগে অনিয়মিত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি শারিরিক অসুস্থতার কারণে কিছুদিন বাসায় বিশ্রামে ছিলাম। ভাইবা ব্যতিত পরবর্তী সেমিস্টার শুরু করার বিষয়ে জানতে হলে তিনি বলেন, ভাইবার জন্য এক্সটার্নাল শিক্ষক সময় দিতে পারছেন না। শিক্ষক সময় দিলে আমরা ভাইবা নিয়ে নেবো। নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান মো. কামালউদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের সেশনজটের বিষয়ে উপাচার্য মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। আগামী মাসে সকল ব্যাচের পরীক্ষা নিয়ে সেশনজট কমিয়ে আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *