নারায়ণগঞ্জে হুহু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত সন্ধ্যার ৬ টার পর বের হলেই গ্রেফতার

নারায়ণগঞ্জ

 

সারা দেশে সন্ধ্যা ৬টার পর বাইরে বের হওয়া যাবে না।বের হলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবার ১০ এপ্রিল এ নির্দেশনা সহকারে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রশমনে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতে অনুরোধ করা হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টার পর কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না। এই নির্দেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে সীমিত থাকবে। আর বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে।

একই প্রজ্ঞাপনে ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে ঘোষিত সাপ্তাহিক ছুটি ও সাধারণ ছুটির ধারাবাহিকতায় আগামী ১৫ ও ১৬ এপ্রিল এবং ১৯ থেকে ২৩ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই সাধারণ ছুটির সঙ্গে ১৭ ও ১৮ এপ্রিল এবং ২৪ ও ২৫ এপ্রিলের সাপ্তাহিক ছুটিও যোগ হবে।

ছুটির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জরুরি সেবার (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদি) ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে না। এ ছাড়া কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, জ্বালানি, সংবাদপত্র, খাদ্য, শিল্পপণ্য, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন এবং কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান ও হাসপাতাল এই ছুটির মধ্যে পড়বে না। জরুরি প্রয়োজনে অফিসগুলো খোলা রাখা যাবে। প্রয়োজনে ওষুধশিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা চালু রাখা যাবে। আর বিরাজমান পরিস্থিতি উন্নতি হলে মানুষের জীবন-জীবিকার স্বার্থে রিকশা-ভ্যানসহ যানবাহন, রেল, বাস পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে।

এ ছাড়া মানুষের প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দেবে।

করোনাভাইরাসের কারণে প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ছুটি বাড়িয়ে তা ১১ এপ্রিল করা হয়। ছুটি তৃতীয় দফা বাড়িয়ে করা হয় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এখন চতুর্থ দফায় ছুটি বাড়ল।

নারায়ণগঞ্জে গত ২৪ ঘন্টায় করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হিসেবে ১৬ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ। এ সময়ের মধ্যে জেলায় দুজন মৃত্যুবরণ করেছেন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে।

শুক্রবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে এ তথ্য জানান তিনি। এ সময়ের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির সুস্থ হবার সংবাদ নে॥ই বলেও জানান তিনি।

এ নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৭ জনে। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ জন ও মারা গেছেন ৯ জন।

এর আগে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ৭ এপ্রিল রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ‘করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে ৮ এপ্রিল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলাকে অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হলো। তবে জরুরী পরিসেবা যেমন চিকিৎসা, খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ ইত্যাদি এর আওতাবহির্ভূত থাকবে। অসামরিক প্রশাসন, সশন্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।’

৫ এপ্রিল রাতে জেলা প্রশাসনের জরুরী সভায় ৬ এপ্রিল থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা, বন্দর উপজেলা ও সদর উপজেলার এলাকায় লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পর থেকে কঠোর হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রচুর টহল ও কাজ করলেও জনগন সচেতন হচ্ছে না। যে সড়ক দিয়ে সেনাবাহিনী, র‌্যাব কিংবা পুলিশ টহল দেয় সেখানে লোকজন সরে গেলেও পরে আবার চলে আসে।

এরই মধ্যে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, আক্রান্তদের মধ্যে যাদের সাথে কথা হয়েছে তাদের প্রবাসীদের সংস্পর্শে আসার তথ্য আমরা তেমন একটা পাইনি। এখন এটি লোকাল কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে। এখন আর এ রোগ বিস্তারের জন্য প্রবাসীদের প্রয়োজন হচ্ছেনা। তাই সকলকে এখনি সচেতন হতে হবে, ঘরে অবস্থান করতে হবে। কোনভাবেই বাইরে বের হওয়া যাবেনা।

মরণঘাতী ভয়াবহ করোনা ভাইরাসে ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দারা। ঢাকার পরই রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা। এজন্য নারায়ণগঞ্জকে করোনার ক্লাস্টার বলছে আইইডিসিআর। পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সোমবার ব্রিফিংয়ে বলেন, “নারায়ণগঞ্জে ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করেছি, সেখানে বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে ওখান থেকে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে না পড়ে।”

ক্লাস্টার এলাকার বিষয়ে ফ্লোরা বলেন, “যদি কোথাও একই জায়গায় কম দূরত্বের মধ্যে একাধিক রোগী থাকে তখনই আমরা সেটাকে ক্লাস্টার হিসেবে আইডেন্টিফাই করে ইনভেস্টিগেশন করে থাকি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *