বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘লাইফ লাইন’ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বহুল প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেতু দুটি চালুর ফলে এবারের ঈদে যানজট এড়িয়ে স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে পারবেন দক্ষিণের মানুষজন। নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় সাত মাস আগে দ্বিতীয় কাঁচপুরসহ এ নতুন দুটি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
শনিবার (২৫ মে) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু দুটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমান।
শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইয়াসু ইজুমি বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু দুটি ছাড়াও ঈদ উপহার হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা ফ্লাইওভার, কালিয়াকৈর, দেওহাটা, মির্জাপুর ও ঘারিন্দা আন্ডারপাস এবং কড্ডা ১ সেতু ও বাইমাইল সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থানীয় সূত্রমতে, জাতীয় এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে। গোমতী-মেঘনা এ দুই সেতুর টোলপ্লাজা অতিক্রম করতে গিয়ে যানজটের মুখোমুখি হতে হয় যাত্রীদের। নিত্যদিনের যানজটের কারণে মহাসড়কটি মহাভোগান্তিতে রূপ নিয়েছে। বিগত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে চলমান এ ভোগান্তির অবসানে ২০১৬ সালে দ্বিতীয় গোমতী-মেঘনা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার অর্থায়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে গোমতী নদীর ওপর ১৭টি স্প্যানের ১৪১০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থের দ্বিতীয় গোমতী সেতু এবং সাড়ে ১৭৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা নদীর ওপর ১২টি স্প্যানের ৯৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থের দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণ করা হয়। প্রায় সাড়ে ৩ বছর ধরে চলে ৪১তম মাসে এসে শেষ হয় সেতু দুটির নির্মাণ কাজ।
মেঘনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক শওকত আহমেদ মজুমদার জানান, দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা এবং দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণ এবং পুরনো তিনটি সেতুর সংস্কারসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়েছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। সাত মাস আগে নতুন তিনটি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো বড় প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হয়েছে। এটি একটি মাইফলক।
মেঘনা সেতুর আবাসিক প্রকৌশলী শেখ জহির উদ্দিন জানান, জাপানের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি এসপি এসপি ফাউন্ডেশন ও স্টিল কংক্রিট কম্পোজিটের ওপর এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে এই প্রথম এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। এতে করে একদিকে যেমন সরকারি টাকা সাশ্রয় হয়েছে, অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকদের যানজটের ভোগান্তি লাঘব হবে।