ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘সতর্ক পাহারায়’ রয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঘটনার পর সোমবার (১৫ জুলাই) রাত ১০টার পর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন জানান, মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করা ও রাজাকারদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি ছিল। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল না; তারা হঠাৎ করেই ভোরে কর্মসূচি ঘোষণা করে।
সাদ্দাম অভিযোগ করেন, গত কয়েক দিন ধরে আন্দোলনের কারণে শাহবাগ অবরুদ্ধ হয়েছে ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল হওয়ার পরও আন্দোলনকারীরা মাঠে থেকে গেছে। ছাত্রলীগ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের জন্য কাজ করেছে এবং শিক্ষার্থীদের মতামত সংগ্রহ করেছে।
সাদ্দাম আরও বলেন, ছাত্রলীগ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। দুপুর ২টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল না। তবে দুপুর ২টার পর ঢাকার বাইরে থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছে। বিকেল ৩টায় ছাত্রলীগের কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আন্দোলনকারীরা রাজু ভাস্কর্য ছাড়েনি এবং কৃত্রিম পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জোর করে তাদের মিছিলে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসার সময় আন্দোলনকারীরা তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে এবং তাদের রুমের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। এ ধরনের আক্রমণের কারণে ছাত্রলীগের পাঁচ শতাধিক নেতা আহত হয়েছে বলে সাদ্দাম দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করছে এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রস্তুত রয়েছে।
শাহবাগ থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় রাত ১২টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি এবং কাউকে আটক করা হয়নি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, এদিন দুপুর ৩টার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ২৯৭ জন আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ১২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মাথায় ইট কিংবা লাঠির আঘাত রয়েছে এবং কেউ কেউ পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে।
সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ছয়জন আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন।