জেনে নিন কলা কখন উপকারী আর কখন ক্ষতিকর।

স্বাস্থ্য

ডাঃ দীনেশ দেবনাথ,

কলা ফল হিসেবে বহুল সমাদৃত এবং বারমাসি একটি ফল। পৃথিবীর ১০৭টি দেশে এটি উৎপাদিত হয় এবং এটি বিশ্বের চতুর্থ অর্থকরী ফসল। অন্য যে কোন ফলের তুলনায় কলা সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করা হয়। এই লেখাটিতে জানতে পারবেন কলা আপনার জন্য কতটা উপকারী এবং এর পুষ্টিগুণের ব্যপকতা, পাশাপাশি কোন কোন শারীরিক অবস্থায় কলা খাওয়া যাবেনা সে নিয়েও সামান্য আলোকপাত করা হয়েছে।

কলাতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সুষম উপস্থিতির কারনে একে ‘সুপার ফ্রুট’ বলা হয়। একটি মাঝারি আকৃতির (১২৬গ্রাম) কলা থেকে ১১০ ক্যালরি পাওয়া যায়। এতে ৩০গ্রাম কার্বহাইড্রেট, ১গ্রাম প্রোটিন থাকে, তবে কলাতে কোন ফ্যাট থাকেনা। কলাতে উচ্চ মাত্রায় পটাসিয়াম আছে যা দিয়ে দৈনিক চাহিদার প্রায় ২৩% পূরণ করা সম্ভব। এছাড়াও ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক ইত্যাদি খনিজ উপাদানের আধার বলা যায় কলাকে। কলাতে আছে পর্যাপ্ত পরিমানে খাদ্যআঁশ, দৈনিক চাহিদার ১৬% পরিমাণ যোগান দেয়। এতসব খাদ্য উপাদান কলাতে আছে বলে একে প্রাকৃতিক মাল্টিভিটামিনও বলা হয়।

পুষ্টি উপাদান-কলা (১২৬গ্রাম) পরিমাণ
পটাসিয়াম ৪৫০ মিলি গ্রাম
আয়রন বা লৌহ ০.৩ মিলি গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ৩৪.০ মিলি গ্রাম
ম্যাংগানিজ ০.৩ মিলি গ্রাম
ভিটামিন বি-৬ ০.৫ মিলি গ্রাম
ভিটামিন সি ৯.০ মিলি গ্রাম
রিবোফ্লাভিন ০.১ মিলি গ্রাম
নায়াসিন ০.৮ মিলি গ্রাম
ভিটামিন এ ৮১.০ আই.ইউ
ফোলেট ২৫.০ মাইক্রো গ্রাম
আঁশ ৩.০ গ্রাম

কলার উপকারিতাঃ আসুন দেখি কলা কিভাবে আমাদের উপকারে আসে-

১. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনেঃ

কলা পটাসিয়ামের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। আর এ পটাসিয়াম দেহের অম্ল-ক্ষার ভারসাম্য রক্ষায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সহায়ক। এছাড়াও পটাসিয়াম এর ঘাটতি থাকলে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন দেখা যায়। এ ঘাটতি পূরণ করতে গবেষকেরা প্রতিদিন কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন।

২. স্ট্রোক এর ঝুঁকি হ্রাসেঃ

বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে পটাসিয়াম লেভেল কমে গেলে হৃদস্পন্দনের হার অস্বাভাবিক হয়ে যায় যা স্ট্রোক এর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। কলাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে পটাসিয়াম। The Author নামক একটি প্রসিদ্ধ neurology journal এ গবেষকেরা উল্লেখ করেছেন যে, প্রতিদিন একটি করে কলা সেবন করলে তা স্ট্রোক এর ঝুঁকি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৩. প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিডঃ

The Journal of Nutritional Biochemistry এর একটি গবেষণায় উঠে এসেছে কলার আলসার বিরোধী ভূমিকার কথা। কলা গ্যাস্ট্রিক জুস এর এসিডিটি নিষ্ক্রিয় করার ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করে। এটি পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ দেয়ালে একটি আবরণ সৃষ্টি করে আলসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং কোলেস্টেরল এর মাত্রা স্বাভাবিক রাখতেঃ

কলায় যে খাদ্য আঁশ আছে তা শরীর থেকে ফ্যাট শোষণ করে ব্যক্তির ওজন কমাতে সাহায্য করে। কলাতে কোলেস্টেরল নেই বললেই চলে। তাছাড়া কলায় আছে খাদ্যআঁশ যা রক্তের কোলেস্টেরল এর মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক।

৫. স্ট্রেস ও ইন্সমনিয়া হ্রাসেঃ

কলাতে রয়েছে ট্রিপ্টোফ্যান নামক উপাদান যা দেহে গিয়ে সেরাটোনিন নামক হরমোনে পরিবর্তিত হয়। এ হরমোন মানুষকে হাসি–খুশি ও প্রানবন্ত রাখতে কাজ করে। ফলে, অতিরিক্ত চাপ কমে ও আরামদায়ক ঘুম হয়। তাই এখন থেকে মন খারাপ হলে ঝটপট একটি কলা খেয়ে নিতে পারেন, আপনার মন ভাল হয়ে যাবে।

৬. শিশুদের ব্লাড ক্যান্সার নিরাময়েঃ
American Journal of Epidemiology এর গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে প্রতিদিন নিয়ম করে একটি কলা সেবন ০-২ বছর বয়সের বাচ্চাদের লিউকেমিয়া নামক ব্লাড ক্যান্সার নিরাময়ে সহায়ক।

৭. শিশুদের শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধেঃ European Respiratory Journal প্রায় ২৬৪০ জন প্রাথমিক স্কুলগামী বাচ্চাদের উপর একটি গবেষণা করে দেখে যে প্রতিদিন একটি করে কলা খাওয়ার মাধ্যমে বাচ্চাদের অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।

৮. ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রেঃ কলার গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ৫১। অর্থাৎ, কলাতে যে সামান্য পরিমান কার্বোহাইড্রেট আছে তা রক্তের শর্করা মন্থরভাবে বৃদ্ধি করে। আর তাই ডায়াবেটিক রোগীরা অনেকটাই নিশ্চিন্তে দৈনিক কলা খেতে পারে, যেখানে অন্যান্য ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বাঁধা থেকে থাকে।

৯. অন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়া রক্ষায়ঃ কলাতে আছে সেলুলোজ, হেমি-সেলুলোজ, আলফা-গ্লুকানের মত খাদ্যআঁশ যা অন্ত্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া উভয় নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। কলাতে বিদ্যমান উপাদান প্রচুর পরিমানে পানি শোষণ করে অন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়া বজায় রাখে। কলাতে রয়েছে fructo-oligo-saccharide নামক উপাদান, যা অন্ত্রে বিদ্যমান অক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়ার পুষ্টির যোগান দেয়। এ ব্যাক্টেরিয়া অন্ত্রে ভিটামিন সংশ্লেষ করে এবং খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে।

১০. স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষায়ঃ Cornell University এর একটি গবেষণায় দেখা যায় যে কলায় উপস্থিত ফেনলিক ফাইটোকেমিক্যাল স্নায়ু কোষের বিষাক্ততা দূর করতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও প্রতিদিন নিয়মিত কলা খেলে তাস্নায়ুকোষ এর চাপ কমাতে সাহায্য করেযা আলঝেইমার এর মত স্নায়বিক রোগের বিপরীতে কাজ করে।

১১. বাচ্চাদের সুষম খাবারঃ বাচ্চারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঠিকমতো খেতে চায় না। ফলে ওদের দেহ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান এর ঘাটতি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে কলা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। কেননা কলাতে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। তাছাড়া কলা সহজে হজমযোগ্য হওয়ায় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তা কোন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে না।

১২. পেশীতে খিঁচ ধরা রোধেঃ অনেক সময়েই দেখা যায় যে ঘুমের মধ্যে অথবা খেলতে গেলে পায়ের মাংসপেশিতে খিঁচ ধরে বা রগে টান ধরে। এ সমস্যা সমাধানে কলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেননা কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম।পটাসিয়ামের অভাবে সাধারণত এ সমস্যার উদ্ভব ঘটে।

১৩. রক্তস্বল্পতার ক্ষেত্রেঃ কলাতে আছে পর্যাপ্ত পরিমানে আয়রন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.