ঘর পেয়ে খুশি নন ভূমিহীনরা” কুলিয়ারচরে নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই ভেঙ্গে পরছে প্রধানমন্ত্রী’র দেওয়া উপহার ঘর

ঢাকা বিভাগ কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী’র দেওয়া উপহার দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণে নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভূমিহীনদের নামে দুই শতাংশ খাসজমি বরাদ্দ থেকে শুরু করে ঘর নির্মাণ কাজের প্রতিটি ধাপে অনিয়ম ও নিম্নমানের দ্রব্যাদী ব্যবহারের ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ। উপজেলার বাজরা ও জগৎচর এলাকায় তৈয়ারিকৃত ব্যারাকের সুবিধাভোগী ৪নম্বর ঘরের মালিক মো. বাচ্চু মিয়া, ৭নং ঘরের মালিক মোছা. জহুরা বেগম, ৯নং ঘরের মালিক মো. সবুজ মিয়া ও ১১নং ঘরের মালিক মোছা. রোকিয়া বেগমের সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী’র উপহার ঘরের চাবি বুঝে পেলেও এখন পর্যন্ত ঘর বুঝে পাননি তারা। কারণ উল্লেখ করে তারা বলেন, ঘর নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। এছাড়া তারাসহ এলাকার মো. চান্দু মিয়া (৪৫), মো. মিজান (৩৫), মো. মাসুদ মিয়া (৪৫) ও মো. ফারুক মিয়া (৫০) অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী’র দেওয়া নির্মাণাধীন উপহার ঘর নির্মানে নিম্নমানের ইট, বালু, কাঠ, টিন ও প্রয়োজনের তুলনায় সিমেন্ট কম ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে দেয়াল থেকে আস্তর ধসে পরছে। ভেঙ্গে পড়ছে দেয়াল ও ফিলার। সৌন্দর্যের জন্য দেয়ালে ব্যবহার করা রং একেবারেই নিম্ন মানের হওয়ায় রং লাগানোর পর পরই ডিস কালার হয়ে সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে বিশ্রী দেখাচ্ছে। নির্মানকৃত ঘর কোনটা উচু আবার কোনটা নীচু হওয়ার কারনে মনে হচ্ছে কোনটায় ইট কম ব্যবহার করা হয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ হওয়া প্রধানমন্ত্রী’র দেওয়া উপহার ঘর পেয়েও বিপদের আশংকা রয়েছে মনে করে খুশি হতে পারেনি অনেকেই। শুধু তাই নয়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিকে ম্যানেজ করে বাজিতপুর উপজেলার বিত্তবান লোকসহ জায়গা জমি আছে এমন সচ্ছ ব্যক্তিরাও প্রধানমন্ত্রী’র দেওয়া উপহার ঘরের মালিক হয়েছে। অথচ এদের চেয়ে অসচ্ছ ব্যক্তি থাকলেও তারা এ ঘর পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এমনকি সুবিধাভোগীদের নিকট থেকে টাকা পয়সা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী’র অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় এ উপজেলায় ২০টি ভূমিহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে একটি করে সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। যার প্রতিটি ঘর নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন কাজের দেখভাল করছেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। এ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ বাস্তবায়নে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়াৎ ফেরদৌসী এবং ঘর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছেন প্রকল্পের সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোসা. খাদিজা আক্তার। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোসা. খাদিজা আক্তার কাজের তদারকি করছেন বলে তার অফিস সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনিই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় উপজেলার দ্বাড়িয়াকান্দি এলাকার সালাহউদ্দিন নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে এসব ঘর নির্মাণ করেছেন বলে জানা যায়। ভূমিহীনদের মাঝে ২শতাংশ করে খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সারমিনা সাত্তার। তিনিও বিভিন্ন ইউনিয়নের নায়েবদের সহযোগীতায় প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে সরকারি খাস জমির দলিল রেজিষ্ট্রি করে না দিয়ে জমি ও গৃহ আছে এমন সচ্ছ ব্যক্তিদের মাঝে ২শতাংশ করে ভূমি রেজিষ্ট্রি করে দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন। এলাকাবাসীর ধারণা কোন লাভ ছাড়া তিনি এ কাজগুলো করেন নি। গত ২৩ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘর উদ্বোধন করলেও এখন পর্যন্ত ঘর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় ভূমিহীনদের মাঝে এসব ঘর বুঝিয়ে দিতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। বুধবার (১০ফেব্রুয়ারি) ও বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঘর নির্মাণে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করে ও সিমেন্ট কম দিয়ে মিস্ত্রিরা কোনোরকমে ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। দেয়ালে হাত দেওয়ার সাথে সাথে দেয়াল থেকে আস্তর খসে পড়ছে। যে কোন মূহুর্তে এসব ঘর ধ্বসে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। হালকা বাতাস কিংবা ঝড় তোফান এলে ঘরের চালার টিন, দরজা, জানালা ছিড়ে তছনছ হয়ে মারাত্মক ভাবে দূর্ঘটনার শিকার হতে পারে সুবিধাভোগীরা। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে ঘর তৈরি করায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা সরকারের কাছে টেকসই মজবুত ঘর নির্মাণের জন্য দাবি জানান। এব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোসা. খাদিজা আক্তারের নিকট ঘর নির্মাণের ওয়ার্ক ওয়াডার দেখতে চাইলে তিনি বিষয়টি এরিয়ে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এব্যাপারে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলুন। ঘর নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজ হওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়াৎ ফেরদৌসী ক্ষেপে গিয়ে সাংবাদিককে বলেন, কে অভিযোগ করেছে? তাকে আমার অফিসে নিয়ে আসেন এবং লিখিত অভিযোগ করুন। এব্যাপারে উপজেলা পরিষদের কর্ণধার ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইয়াছির মিয়া’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র দেওয়া উপহার ঘর নির্মাণে কোন রকম দূর্নীতি সহ্য করা হবেনা। যদি কেউ নিম্নমানের দ্রব্য সামগ্রী দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার ঘর নির্মাণ করে সরকারের এ মহৎ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন করে তা হলে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে দূর্নীতি মুক্ত শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্টা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন সোনার বাংলা বাস্তবায়িত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *