গোপালগঞ্জে মসজিদ কমিটি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের টেটার আঘাতে এক যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ওই
এলাকায় এখনো চলছে চরম উত্তেজনা। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন থাকলেও প্রতিপক্ষের লোকজন বাড়িরে ফিরতে পারছেন
না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার হত্যাকান্ডের পর চরবয়রা এলাকায় প্রথম দফায় প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা ও
লুটপাটের ঘটনা ঘটে। শনিবার লাশ দাফনের পর দ্বিতীয় দফার আবারও মিজান মোল্লা, জুয়েল মোল্লা, তমিজুল মোল্লা,
সাদিকুল মোল্লা, রফিকুল মোল্লা ও মহিবুর মোল্লাসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে নিহতের পক্ষের
লোকজন। ফলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অন্তত ২০ টি পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। চরবয়রা পশ্চিম
পাড়ার মহিবুর মোল্লা (৬৫) জানান, প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের বাড়ি-ঘরে হামলা ও ভাংচুর করে। তাদের তান্ডবে নারী ও
শিশুরাও রেহাই পায়নি। তিনি বলেন, এটা কোন পরিকল্পিত হত্যাকান্ড নয়। তাদের মধ্যে কোন পূর্ব শত্রæতা ছিলনা।
শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে চরপাড়া পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি পদ নিয়ে মিজান মোল্লা ও জাহিদ মোল্লার
লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। মসজিদ কমিটির লোকজনের সাথেকথা বলে জানা যায়,
সম্প্রতি মসজিদের জন্য সরকারি অনুদান এসেছে। জাহিদ মোল্লা আগে ওই মসজিদের সভাপতি ছিলেন। পরে তিনি নিজের
থেকেই অনেকটা দায়িত্ব থেকে তাকে গুটিয়ে নেন। এছাড়া কমিটির অন্যান্য সদস্যদের অভিযোগ জাহিদ মোল্লাকে সভাপতি
করলে তিনি ঠিক মতো ইমামের টাকা পরিশোধ করতে চান না। ফলে ইমাম সাহেবের সংসারে টানাপোড়েন লেগে থাকে।
ইমাম সাহেব মসজিদে থাকতে চাননা। ফলে কমিটির লোকজন জাহিদ মোল্লাকে বাদ দিয়ে মিজান মোল্লাকে সভাপতি করার
তার নাম প্রস্তাব করে। নিহত তুহিন মোল্লার পিতা আকরাম মোল্লা (৭৫) জানান, তার ছেলে ওই পাশ্ববর্তী চরবয়রা জামে
মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করেন। নামজ শেষে সে শুনতে পায় চরপাড়া পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদে তার পিতা
আকরাম শেখকে অপমান করা হয়েছে। এখবর শুনে তিনি তুহিন মোল্লা ৪-৫ জন যুবকসহ ওই মসজিদের দিকে যাওয়ার
সময় পূর্বেও থেকে ওৎ পেতে থাকা প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে টেটাবিদ্ধা করে হত্যা করে। তিনি তার পুত্র শোকে কাতর।
তিনি তার পুত্রের হত্যার বিচার চান। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জুম্মার নামাজ শেষে নিহত তুহিন মোল্লা
কয়েকজন যুবককে সাথে নিয়ে টেটা হাতে করে চরপাড়া পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের দিকে দৌড়ায় যাচ্ছিল। ওই সময়
প্রতিপক্ষের লোকজন তার হাত থেকে টেটা কেড়ে নিয়ে তুহিনকে আঘাত করে। এতেই তার মৃত্যু হয়। চর বয়রা
পশ্চিমপাড়ার নাম না প্রকাশের শর্তে এক গৃহবধূ বলেন, আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে সবকিছ’ নিয়ে গেছে
প্রতিপক্ষের লোকজন। আমরা এখন সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। জীবনের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পার্শ্ববতী জেলায় আত্মীয় স্বজনের
বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। করোনা দূর্য়োগের মধ্যে সন্তান-সন্ততি ও পরিবার পরিজন নিয়ে চরম দূরাবস্থার মধ্যে জীবন
কাটছে। মহিলারা বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাদেরকে এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছেনা। পুলিশের সামনে তাদের সাথে
দূর্ব্যবহার করা হচ্ছে।গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইসচার্জ মনিরুল ইসলাম বলেন, দুই পক্ষেরই মামলা হয়েছে।
ইতিমধ্যে আমরা দু’জনকে আটক করেছে। এলাকায় শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কেই পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।