কুুুুলিয়ারচরে কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে পীরের আস্তানা সহ একাধিক বাড়িতে আগুন।

বাংলাদেশ

শাহীন সুলতানা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে এক পীরের আস্তানাসহ পীরের ভক্তদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা ও এলাকার মুসল্লীরা।

মঙ্গলবার (১০ মার্চ) সকালে উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের হাঁপানিয়া গ্রামে কথিত পীর শফিকুল ইসলামের বাড়িতে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

জানা যায়, কথিত পীর শফিকুল ইসলাম তার নিজ বাড়িতে আস্তানা করে দীর্ঘদিন যাবৎ পীরালী করে আসছিলেন। এরই মাঝে সোমবার দিবাগত রাতে তার বাড়িতে বাউল গান অনুষ্ঠিত হয়। গান শুরু হওয়ার পর রাত ১টার দিকে ওই গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলাম ওরুফে সোনা মিয়ার ছেলে মোঃ সবুজ মিয়া ওরুফে সবুজ পাগলা (৪০) একটি কোরআন শরীর হাতে নিয়ে এসে ওই কোরআন শরীফকে মাটিতে একাধিকবার আছাড় মেরে ফেলে দেয়। ঘটনার পর রাতেই পীর শফিকুল ইসলাম এ ঘটনার জন্য সবুজ পাগলাকে সামাজিকভাবে বিচার করেন। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল হাই তালুকদার পুলিশ ফোর্স নিয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

কোরআন অবমাননার এ সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পরদিন মঙ্গলবার (১০মার্চ) সকাল ৭টার দিকে এলাকার কিছু মাজার বিরোধী লোকের ইন্দনে বিক্ষুব্ধ জনতা পীর শফিকুল ইসলামের আস্তানায় আগুন দিয়ে আস্তানা পুড়িয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনতা একই সময় সবুজ পাগলার বাড়িঘরও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।

এর কিছুক্ষণ পর সকাল ১১টার দিকে পার্শবর্তী মাটিকাটা গ্রামের বড় বাড়ির মাওলানা আব্দুল হক জালালির বাড়িঘর ভাংচুর করে মাটিকা টুটারকান্দা গ্রামের মুন্সিবাড়ির সোহাগের বাড়িতে হামলা করতে গেলে বিক্ষোভকারীদের সাথে এলাকাবাসীর দাওয়া-পাল্টা-দাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এ সংবাদ পেয়ে পূনরায় কুলিয়ারচর থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিন, ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার বাবুল, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, মাটিকা চকবাজার কমিটির সভাপতি সুরুজ মিয়া ও যুবলীগ নেতা লিটন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, পীর শফিকুল ইসলাম সোমবার দিবাগত রাতে তার বাড়িতে বাউল গানের আসর বসায়। গান শুরু হওয়ার পর রাত ১টার দিকে একই গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে সবুজ মিয়া ওরুফে সবুজ পাগলা একটি কোরআন শরীর হাতে নিয়ে এসে ওই কুরআন শরীফকে একাধিকবার মাটিতে আছাড় মেরে ফেলে দেয়। এই ঘটনার পর রাতেই পীর শফিকুল ইসলাম ঘটনার জন্য সবুজ পাগলাকে সামাজিকভাবে বিচার করেন। পরে মঙ্গলবার সকালে পার্শবর্তী মাটিকাটা গ্রামের মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে এমাদ মিয়া, হেলাল মিয়ার ছেলে সজিব ও মিটুন, দুলালের ছেলে মাহবুব, মৃত মালেক সরকারের ছেলে সাইফুল, রতন মিয়ার ছেলে জুবায়েদ, আব্দুল হামিদের ছেলে দেলোয়ার ও মৃত ওয়াছ মিয়ার ছেলে শরীফ, হাজারীনগর গ্রামের মৃত মালু মিয়ার ছেলে বিল্লাল মিয়া, মৃত আপ্তাব উদ্দিনের ছেলে দ্বীন ইসলাম ও ছায়েদ মিয়া সহ আরো কয়েকজনের নেতৃত্বে স্থানীয় কিছু মাজার বিরোধী ও পার্শবর্তী ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের কুমির মারা, আতকা পাড়া, ছিদ্দিরচর ও শ্রীমতিচরের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ওই এলাকায় এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়। পরে সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঘটনার সংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ভৈরব সার্কেলের এএসপি রেজওয়ান দ্বীপু।

এ ঘটনায় উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত তোতা মিয়ার ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৫০) বাদী হয়ে হাজারী নগর গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলাম ওরুফে সোনা মিয়ার ছেলে মোঃ সবুজ মিয়া ওরুফে সবুজ পাগলা সহ অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জনের নামে কুলিয়ারচর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করেন, হাঁপানিয়া গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে শফিকুল ইসলাম এর বাড়ির উঠানে কথিত মাজারের ভক্তগনের উপস্থিতিতে সন্ধ্যা রাত হইতে ইসলামী জলসায় পবিত্র কোরআন শরীফ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সবুজ পাগলা লোকজন নিয়ে ইসলামী জলসায় অনাধিকার প্রবেশ করে ইসলাম ধর্ম ও পবিত্র কোরআন শরীফের বিরুদ্ধে অপ্রীতিকর মন্তব্য সহ অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করিয়া ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এনে উপস্থিত ভক্তগণকে মারপিট করিয়া খুন যখম করার ভয়ভীতি ও হুমকী দেয়।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকায় পুলিশ মোতায়ন ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *