করোনায় গোটা দেশ বিপর্যন্ত, বিপর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এ
ভাইরাসের সংক্রমন রোধে মানুষকে ঘরে রাখার জন্য গত ২৬ মার্চ তারিখ থেকে
সরকার সাধারণ ছুটি বন্ধ ঘোষনা করায় সকল অফিস, আদালত, মার্কেট,
বিপণীবিতান সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে।
গোপালগঞ্জ সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের কাযক্রমও বন্ধ, চারিদিকে সুনসান নিরবতা,
দলিল লেখার সাথে সংশ্লিষ্ট দলিল লেখক ও তাদের সহকারীদের দৌড়াদৌড়ি নেই, কেমন
যেন নিথর নিরব হয়ে পড়ে আছে তাদের ব্যবহৃত চেয়ার টেবিলগুলো। বেকার হয়ে ঘরে
বসে দিনাতিপাত করছেন তারা। সাধারণ ছুটির মেয়াদও বাড়ছেদফায় দফায় ।
কোনোরকমে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের।
বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতি, গোপালগঞ্জ জেলা শাখা সূত্রে জানা যায়, সদর
উপজেলায় ৭০ জন, টুংগীপাড়ায় ৩১ জন, কোটালীপাড়ায় ৭০ জন, কাশিয়ানী ও
রামদিয়ায় ৮৪ জন এবং মুকসুদপুরে৬০ জন, জেলায় মোট ৩১৫ জন দলিল লেখক ও
তাদের সহকারী হিসেবে ৩১৫ জন কাজ দলিল লেখা কাজের সাথে কর্মরত। এদের মধ্যে
২০-২৫ জন ভালো আছেন, বাকিরা সকলেই হতদরিদ্র – একদিন আয় বন্ধ থাকলে অন্যের
কাছে হাত পাতা ছাড়া যাদের কোনো গতি থাকেনা। সরকারের লাইসেন্স প্রাপ্ত
এসকল দলিল লেখকদের জন্য সরকারি কোনো ভাতার ব্যবস্থা নেই দলিল লিখেই আয় করতে
হয়, দলিল হলে আয় আছে, না হলে নেই।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দলিল লেখক ই¯্রাফিল মোল্লা জানান, “শহরের মিয়াপাড়ায়
একটা ভাড়া বাসায় থাকি, নিজের কোনো জমিজমা নেই, সংসারে মা, স্ত্রী ও
তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে দলিল লেখার কাজ করে খারাপ চলছিলো না, তিন ছেলেমেয়েই
পড়াশুনা করে, কিন্তু হঠাৎ করোনার ঝড়ে আমার সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে,
কাজ বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে চরম বিপাকে পড়েছি, সংসারের চাকা আর চলছে না,
এ অবস্থা দীর্ঘ হলে করোনা ভাইরাসে মরার দরকার হবেনা, না খেয়েই মরতে হবে
আমাদের মতো দলিল লেখক ও সহকারীদের।”
বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতি, গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক
সালাউদ্দিন খান বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব আসে এই
দলিল লেখকদের হাত দিয়েই, অথচ তারাই আজ দিশেহারা হয়ে অনিশ্চিয়তার
জীবনযাপন করছেন। অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল, মানবতার নেত্রী, মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে গোপালগঞ্জের সকল ঘরবন্দী অসহায়দলিল
লেকক ও তাদের সহকারীদের জন্য প্রনোদনা প্রাপ্তির দাবি করছি।”
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকার প্রধানের কাছে ই¯্রাফিল
মোল্লাদের মতো অসহায় দলিল লেখক ও তাদের সহকারীদের করুন আর্জি, করোনা
মহামারীর এই দু:সময়ে সরকার তাদের বেঁচে থাকার জন্য কিছু একটা করুক।