বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও শনাক্তের সংখ্যা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন ও কৌতুহলের পর এবারে সরাসরি করোনাভাইরাসের পরীক্ষা বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার আইইডিসিআরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের বরাত দিয়ে বলা হয়, আজকের মধ্যে প্রত্যেকটি উপজেলা থেকে অন্তত দুটো করে নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানাচ্ছে, আজকের মধ্যে এক হাজার নমুনা সংগ্রহ করা হবে এবং সেগুলো আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে পরীক্ষা করা হবে।
এতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ নমুনা পরীক্ষা করা হয়ে আসছিল, তা কখনোই দুইশ অতিক্রম করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, নিয়মিত পরীক্ষা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। ঢাকায় এখন ছয়টি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা হচ্ছে এবং ঢাকার বাইরে চারটি প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে পরীক্ষা করা শুরু করেছে।
ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় মার্চ মাসের আট তারিখ। সেদিন থেকে নানা উপায়ে পরীক্ষার কথা বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইইডিসিআর।
এবারে ঘরে ঘরে গিয়ে নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ পেয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
নমুনা সংগ্রহের যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া সেটাই অনুসরণ করা হবে বলে জানাচ্ছেন, ভান্ডারিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এইচ এম জহিরুল ইসলাম।
মানুষের বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হবে, এক্ষেত্রে উপসর্গ আছে কি নেই সেটাই হবে মুখ্য বিষয়।
আইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গের তালিকা তৈরি করেছে, যেটাকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার একটা মাণদন্ড হিসেবে ধরছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মীরা।
কেরানীগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর মোবারক হোসেন বলেন, সেখানে মেডিকেটেড ল্যাব আছে, কর্মীদের আলাদা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
যারা উপসর্গ নিয়ে সন্দিহান কিন্তু পরীক্ষা করতে পারছেন না তারা কী করবেন?
ড. মোবারক হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকেরা তাদের দেখেন ও প্রাথমিক ঔষধ দেন।
“এরপর আবার যোগাযোগ করা হয় তার সাথে যদি দেখা যায় উপসর্গ বেড়েছে তাহলে আমরা তাকে আলাদা করে ফেলি ও নমুনা সংগ্রহ করি”।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার আগেই দুটো নমুনা সংগ্রহ করে ফেলে।
তারা একদিন আগেই কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
মিটফোর্ড হাসপাতালের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, এতোদিন শুধু বিদেশ থেকে কেউ এলে বা তার সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদেরই পরীক্ষা করা হয়েছে।
তিনি আশা করছেন এবার এই ধারণা থেকে সরে আসবে যারা পরীক্ষা করছেন।
ফেব্রুয়ারি মাসের এক তারিখ থেকে মার্চের ২২ তারিখ পর্যন্ত ২২ হাজার লোক বিদেশ থেকে এসেছিল, এদের তালিকা সরকার উপজেলায় দিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু এখন যখন আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে কম্যুনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে, তখন এই নমুনা সংগ্রহ বিস্তৃত হয়ে গেছে।
এখন শুষ্ক কাশি, ঠান্ডা জ্বর বা গলাব্যথা হলেও নমুনা সংগ্রহ করা হবে, এর সাথে যদি শ্বাসকষ্ট থাকে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়তি গুরুত্ব পাবেন বলে জানিয়েছেন এই দায়িত্বশীল স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।ঙ