ইংলিশরাও বলছে, বাংলাদেশ ভালো করবে

খেলাধুলা

সোফিয়া গার্ডেনসের বাইরে আইসিসির নির্ধারিত বুথ থেকে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড নিয়ে বের হতেই হঠাৎ পথ আগলে ধরল এক পুলিশ সদস্য, ‘আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।’ আমার জন্য! কিছুই বুঝতে পারছি না। বাংলাদেশের জন্য ভীষণ পয়মন্ত কার্ডিফের এই মাঠে প্রথম এলাম। এসে কী এমন করলাম যে পুলিশ খুঁজছে!

ঘাবড়ে যাওয়ার মতোই ব্যাপার। বিষয়টা বুঝতে পেরে পুলিশ অবশ্য কণ্ঠ যতটা সম্ভব নরম করে নির্দেশ দিলেন, ‘আপনার মোবাইল ফোনটা বের করুন। আপনি বোধ হয় খানিক আগে বাচ্চাদের ছবি তুলেছেন কিংবা ভিডিও করেছেন। ওসব মুছে ফেলতে হবে।’ এবার পরিষ্কার, ঘটনাটা আসলে কী।

কাল সোফিয়া গার্ডেনসে দলে দলে কার্ডিফের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা এসেছে শ্রীলঙ্কা-দক্ষিণ আফ্রিকার প্রস্তুতি ম্যাচ দেখতে। শিশুরা সার বেঁধে স্কুলের শিক্ষকের পেছন পেছন সুশৃঙ্খলভাবে স্টেডিয়ামে ঢুকছে, দৃশ্যটা এতটাই অনিন্দ্য, ক্যামেরাবন্দী না করার লোভ সামলানো যায় না! কিন্তু হঠাৎ এক শিক্ষক এসে বাগড়া দিয়ে বসলেন, ‘প্লিজ বাচ্চাদের ছবি তুলবেন না!’

‘না’ যখন করেছেন, তখন তো আর ছবি তোলা যায় না। ছবি-ভিডিও বাদ দিয়ে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড সংগ্রহে ব্যস্ত হতে হলো। আর তখনই পুলিশ হাজির, ‘এক শিক্ষক জানিয়েছেন, আপনি বাচ্চাদের ছবি তুলেছেন। ওরা যেহেতু আপত্তি করছে, প্লিজ মুছে ফেলুন।’ বাচ্চাদের ছবি তোলা যে নিষেধ, এ নির্দেশনা অবশ্য কোথাও চোখে পড়ল না। তবুও আপত্তি যখন করেছে, পুলিশের নির্দেশ মানতেই হবে। বাচ্চাদের ছবি-টবি ‘ডিলিট’ করেই পুলিশকে অনুরোধ, ‘এবার তাহলে আপনিই আমার ছবি তুলে দিন, সোফিয়া গার্ডেনসকে ব্যাকগ্রাউন্ড করে।’

বেচারা পুলিশ সদস্য এমন অনুরোধ শুনবেন, বোধ হয় তাঁর কল্পনাতেও ছিল না! অগত্যা ব্যস্ততা ফেলে নিজের আলোকচিত্রী প্রতিভা প্রকাশে প্রাণান্তকর চেষ্টাটাই করলেন। ‘সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ছবি পোস্ট করলে আশা করি ভালো সাড়া পাবেন!’—থমথমে মুখে পুলিশের রসিকতা।

সোফিয়া গার্ডেনসে পা রেখেই চোখে ভেসে উঠল বাংলাদেশ ক্রিকেটের আর্কাইভে ভীষণ উজ্জ্বল হয়ে থাকা সেই দুটি ম্যাচ। ২০০৫ সালে রিকি পন্টিংয়ের মহাপরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারানো আর ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালের চাবি পেয়ে যাওয়া এ কার্ডিফেই। ইংল্যান্ডের এ ভেন্যুতে বাংলাদেশ অপরাজেয়। বাংলাদেশ কার্ডিফে, অথচ সোফিয়া গার্ডেনসে কালও পা রাখার সুযোগ হয়নি তাদের। মাশরাফিদের কাছে ভীষণ পয়মন্ত এই মাঠে কাল শ্রীলঙ্কা-দক্ষিণ আফ্রিকার প্রস্তুতি ম্যাচ হয়েছে বলে বাংলাদেশকে অনুশীলন সারতে হয়েছে শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুলের মাঠে।

বাংলাদেশের জন্য ভীষণ পয়া সোফিয়া গার্ডেনস। ছবি: প্রথম আলো

আলোকার্ডিফ শহরে পা রেখে বিশ্বকাপের উত্তাপ টের পাওয়া না গেলেও স্টেডিয়ামে এসে বোঝা গেল, মানুষের আগ্রহে কমতি নেই। এই প্রস্তুতি ম্যাচ দেখতে সোয়ানসি থেকে যেমন এসেছেন তিন বন্ধু। পরে জানা গেল, তিন বন্ধুর দুজনের নাম অ্যান্ড্রে। আরেকজন টম। তাঁদের কথাবার্তায় মনে হলো, ক্রিকেটের খবরাখবর খুব ভালো রাখেন। আমলা-ফাফ ডু প্লেসিরা যখন শ্রীলঙ্কান বোলারদের অনায়াসে খেলছেন, তাঁদের পর্যবেক্ষণ, এবারের বিশ্বকাপটা আসলেই ব্যাটসম্যানদের খেলা হবে। নিয়মিত ৩০০ রানের ওপর স্কোর হবে। প্রায় প্রতি ম্যাচেই বোলারদের দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা। নীরব শ্রোতা হিসেবে যখন তাঁদের কথা শুনছি, হঠাৎ কানে এল বাংলাদেশের নাম। সোফিয়া গার্ডেনসে ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ আছে, ম্যাচ দুটি দেখবেন কি না, এটা নিয়ে একজন দ্বিধায় আছেন। আরেকজন পরামর্শ, বাংলাদেশ দুর্দান্ত দল হয়ে উঠেছে, ভালো ম্যাচই হবে, কাজেই দেখা যায়।

তিন বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর প্রথমে যে প্রশ্নটা করা হলো তাঁদের, এ বিশ্বকাপ কে জিততে পারে? তিনজনের তিন উত্তর: ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত। দ্বিতীয় প্রশ্ন, বাংলাদেশ কত দূর যেতে পারে? তিনজনই সমস্বরে বললেন, ‘শেষ চার যাওয়ার সামর্থ্য তাদের আছে। এর পরের ধাপে তারা যেতে পারলেও অবাক হব না। বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে দারুণ এক দল।’

ইংলিশরা বাংলাদেশকে এখন অন্য চোখেই দেখে। মাশরাফিদের বড় চ্যালেঞ্জ এটাই, তাঁদের নিয়ে যে ধারণটা তৈরি হয়েছে, সেটির প্রতিফলন ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চেও থাকতে হবে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ আরও পরে। তবে কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে তাঁদের ব্যাটে-বলের লড়াই। লড়াইয়ের শুরুটা ভিভ রিচার্ডস, ওয়াকার ইউনিস, রবি শাস্ত্রীদের স্মৃতিধন্য গ্লামারগন কাউন্টির দলের হোম গ্রাউন্ড আর বাংলাদেশের ভীষণ পয়া কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনস থেকে।সূ্ত্র:- প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *