আসছে ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট

বাংলাদেশ

অবশেষে ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট (ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট) দেওয়া শুরু হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২২ জানুয়ারি এই কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকার আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী এবং উত্তরা পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট বিতরণ করা হবে। যদিও এর আগে দুই দফায় দিনক্ষণ ঠিক করেও ই–পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি।

ই–পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি ও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে জানানো হবে। ই–পাসপোর্ট ব্যবহারের জন্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বয়ংক্রিয় গেটও এর মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বন্দরে এই গেট চালু করা হবে। এ সময়ে ই–পাসপোর্টের পাশাপাশি মেশিন রিডেবল পাসপোর্টও চালু থাকবে।

সাধারণ পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্টের পার্থক্য হলো, এতে মোবাইল ফোনের সিমের মতো ছোট ও পাতলা আকারের ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ যুক্ত থাকবে। এই চিপ পাসপোর্টের একটি বিশেষ পাতার ভেতরে থাকবে। এই পাতা সাধারণ পাতার চেয়ে মোটা হবে। চিপে সংরক্ষিত বায়োমেট্রিক তথ্য বিশ্লেষণ করে পাসপোর্ট বহনকারীর পরিচয় শনাক্ত করা যাবে। এতে করে একজনের নাম–পরিচয় দিয়ে অন্য নামে পাসপোর্ট কেউ করতে পারবে না। এই পাসপোর্ট নকল হওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না। সাধারণ পাসপোর্টের তুলনায় ই–পাসপোর্টে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যও থাকছে বেশি। এতে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে, যার অনেক বৈশিষ্ট্য থাকবে লুকানো অবস্থায়। ই–পাসপোর্ট করার সময় মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) ডেটাবেইসে পাওয়া তথ্যগুলো ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে।

সাধারণ পাসপোর্টের মতো ই–পাসপোর্টের আবেদনও অনলাইনে পাওয়া যাবে। চাইলে পিডিএফ ফরম ডাইনলোড করে হাতেও পূরণ করা যাবে। ফরম পূরণের সময় ছবি ও সত্যায়ন করা লাগবে না। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবেদনপত্র গ্রহণের সময় আবেদনকারীর ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি নেওয়া হবে। সেই সব তথ্য চিপে যুক্ত হবে। ইমিগ্রেশন পুলিশ বিশেষ যন্ত্রের সামনে পাসপোর্টের পাতাটি ধরতেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

ই–পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সূত্র জানায়, ই–পাসপোর্ট হবে দুই ধরনের। একটি ৪৮ পাতার, অন্যটি ৬৪ পাতার। সাধারণ, জরুরি ও অতি জরুরির জন্য ফি হবে তিন ধরনের। এবার দুই দিনের মধ্যে পাসপোর্ট দেওয়ার নিয়ম চালু হচ্ছে। এ জন্য ফিও বেশি গুনতে হবে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে দেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বিতরণ শুরু হয়। ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ই-পাসপোর্ট প্রদানের ঘোষণা দেন। এ জন্য জার্মানির প্রতিষ্ঠান ভেরিডসের সঙ্গে চুক্তি করে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। চুক্তি অনুসারে ৩ কোটি ই–পাসপোর্ট সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। যার মধ্যে ২০ লাখ জার্মানি থেকে তৈরি হয়ে আসবে, আর বাকি ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বই মুদ্রণের জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করবে। এই বই ছাপার যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ই-পাসপোর্ট গত বছরের ১ জুলাই থেকে চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে সেই তারিখ পিছিয়ে যায়। পরে ২৮ নভেম্বর থেকে ই-পাসপোর্ট চালুর কথা বলা থাকলেও তা–ও সম্ভব হয়নি।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পাসপোর্ট পাওয়া নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই। দেখা গেছে, জরুরি ফি দেওয়ার পরও সময়মতো পাসপোর্ট মিলছে না। কেন সহজে পাসপোর্ট পাওয়া যায় না, তা নিয়েও কেউ কোনো কথা বলতে চান না। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সামনে প্রতিদিনই মানুষের ভিড় দেখা যায়। ভুক্তভোগী মানুষের প্রত্যাশা, ই–পাসপোর্ট প্রাপ্তি যেন সহজে হয়।

*শুধু রি–ইস্যুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য

*শুধু রি–ইস্যুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *