আপনারা রোগী ফিরিয়ে দিয়েন না : ডাক্তারদের ব্যারিস্টার সুমন

জাতীয়

এবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে মারা যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা মো. আলমাস উদ্দিনের করুণ মৃত্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) বিকেলে লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে শুধু মুক্তিযোদ্ধা নয়, দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি আরও সদয় হওয়ার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। দেশের ক্রান্তি ও দুর্যোগের সময় তাদের আরও মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান এই আইনজীবী।

তিনি আরও বলেন, আপনারা দেশের ক্রান্তিকালে ডাক্তার হিসেবে মানবসেবার দায়িত্ব নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ালে দেশের সূর্যসন্তান হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। দেশের সূর্যসৈনিক হিসেবে নাম লেখাতে পারেন। দেশের এই পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে হাসপাতালে গেলে ডাক্তাররা না দেখলে তারা যাবেন কোথায়?

ডাক্তাররা যেন রাজাকারের মতো আচরণ না করেন সেই অনুরোধ করেন পেশাদার এই আইনজীবী। তিনি বলেন, শুধু মুক্তিযোদ্ধা না সাধারণ মানুষের চিকিৎসা দেয়া আপনাদের কাজ।

ফেসবুক লাইভের শুরুতেই ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করলাম। আজ অত্যন্ত কষ্ট নিয়ে কথা বলা শুরু করছি। একজন মুক্তিযোদ্ধা যিনি ৬টি হাসপাতালে গেছেন চিকিৎসা পাননি। ডাক্তাররা ওনার চিকিৎসা দেননি। মনে হয়েছে এ রকম যদি হয় তাহলে যত না রোগী মারা যাবে অসুস্থতায় তার চেয়ে বেশি লোক মারা যাবে বিনা চিকিৎসায়।

ডাক্তারদের উদ্দেশে সুমন বলেন, আপনারা যদি পালিয়ে যান তাহলে আপনাদের মানুষ রাজাকারের চেয়ে নিকৃষ্ট মনে করবে। আপনারা কি মনে করেন আপনাদের (ডাক্তারদের) মানুষ রাজাকারের মতো ঘৃণা করুক। কিন্তু এখনই সময় নিজেকে সূর্যসন্তান হিসেবে পরিচিত হওয়ার।

বিনা চিকিৎসায় মুক্তিযোদ্ধার মারা যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে যে পরিমাণ মানুষ মরবে তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যাবে বিনা চিকিৎসায়। দেশের ডাক্তাররা বুঝতে পারে না আপনারা একটা মহান পেশায় নিয়োজিত আছেন। কোনো কারণে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে যদি আপনারা দেরি করেন, আপনারা যদি চিকিৎসা দিতে রাজি না থাকেন! আপনারা যদি ভয়ে কাজ থেকে বিরত থাকেন, আপনারা কি কোনোভাবে আপনাদের বিবেকের মুখোমুখি হতে পারবেন?

বিদেশি ডাক্তারদের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বিদেশে যেখানে ডাক্তাররা রিটায়ারমেন্ট চলে গেছে তারাও সরকারের কাছে আবার এসে বলছে দেশের ক্রান্তিকালে আমাদের আবার নেন মানুষের চিকিৎসা দিতে। আর আপনারা নিজের সুবিধামতো চললে হবে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা নিজের সুবিধার জন্য দেশের মানুষের বিরোধিতা করেছে। আপনারা কি চান মানুষ তাদের মতো আপনাদেরও ঘৃণা করুক।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আপনার বিবেক যদি বাধা দেয়, যদি আপনি চাকরিতে থাকেন আপনি চিকিৎসা দিতে বাধ্য। আপনি জানেন কিনা যেকোনো মানুষের চিকিৎসা দেয়ার দায়িত্ব ছিল আপনার। চিকিৎসা না দিলে আপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন যেকোনো মানুষ।

তিনি বলেন, এই দায়িত্ব অবহেলার কারণে আপনার কি তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আজ আমি আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলছি না, ডাক্তারের মহান পেশার বিষয়ে আপনাদের অনুরোধ করছি।

সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী আরও বলেন, আমি জানি না বাংলাদেশের মানুষ একটা জিনিস জানে কিনা, আমি সাধারণ মানুষ হিসেবে আপনাদের উদ্দেশে বলছি যে, থাকা অবস্থায় কোনো ডাক্তার যদি আপনাকে না দেখেন আপনি যেকোনো কারণে আপনি নিতে পারেন। আজকের আমি কাউকে চাই না আমি শুধু এই কথাটা বলতে চাই এ রকম দুঃসময়ে জাতির ক্রান্তিলগ্নে সুবিধাবাদের মতো আচরণ করবে এই সবগুলা, আমি শুধু এই কথাটা বলতে চাই যারা সুবিধাবাদের মতো আচরণ করবেন।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত বলতে চাই ৭১ সালে যারা সুবিধাবাদী ছিল তারা নিজের সুবিধার কারণে দেশের মানুষদের পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছে তুলে দিয়েছে। তারা রাজাকার। আপনারা রাজাকারের চেয়ে নিকৃষ্ট হবেন না, এখন পর্যন্ত আমি যেটা বলতে চাই আপনারা ডাক্তাররা আজকের সূর্যসন্তান হওয়ার সুযোগ আছে।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে এমন সুযোগ আর পাবেন কিনা আমি জানি না, আমি আপনাদের অনুরোধ করছি। আপনারা কোনো রোগী ফিরিয়ে দিয়েন না। কারণ নরমাল সর্দি, জ্বর কাশি অনেক সমস্যা আছে। তারা সমস্যা নিয়ে যায় সবাই যদি মনে করেন আল্লার ওয়াস্তে কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দিয়েন না। কারণ কারও কোনো সমস্যা নিয়ে যদি কোনো মানুষ মারাও যায় তাদের আর যাওয়ার জায়গা থাকবে না।

তিনি ডাক্তারদের উদ্দেশে আরও বলেন, আপনারা জানেন বাংলাদেশের মানুষ মারা যাবে আপনারা যদি ফিরাইয়া দেন তাহলে এই মানুষগুলোর আর যাওয়ার জায়গা থাকবে না।

উল্লেখ্য, করোনা সন্দেহে চিকিৎসা না পেয়ে মো. আলমাস উদ্দিন নামে এক মুক্তিযোদ্ধার করুণ মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে রোববার সকালে তার মৃত্যু হয়। ৬৮ বছর বয়সী আলমাসের মৃত্যুর আগে তার পরিবার চার হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু করোনা সন্দেহে কোনো হাসপাতালই তাকে ভর্তি করেনি।

আলমাস উদ্দিনের বড় ছেলে আরিফ হাসানের অভিযোগ, শনিবার ভোরে তার বাবা বাসাবোর নিজ বাসায় ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এরপর তাকে বারডেম হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পপুলার হাসপাতাল ও কুয়েতমৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হলে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কোনো হাসপাতালই ভর্তি করতে রাজি হয়নি।

পরে রাত ১২টায় মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব হলেও ততক্ষণে তার শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি ঘটে। এ অবস্থায় রোববার সকালে সেখানেই মারা যান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.