অবশেষে চালু হচ্ছে ই-পাসপোর্ট

আন্তর্জাতিক

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন প্রথমেই ই-পাসপোর্ট পাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার পাঁচ ও ১০ বছর মেয়াদে ফি রাখা হচ্ছে তিন ক্যাটাগরিতে প্রকল্প ব্যয় ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা আগারগাঁও, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও সেনানিবাস অফিসে চালু

নানা জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে ই-পাসপোর্ট (ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট)। সম্ভাব্য ১৮ ডিসেম্বের ই-পাসপোর্ট সেবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, অনেক দিনের প্রত্যাশিত ই-পাসপোর্ট সেবা পাচ্ছে নাগরিকরা। এরই মধ্যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ ডিসেম্বর। এই দিন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পিকারের হাতে প্রথম ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে।ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এ পাসপোর্ট চালুর জন্য জার্মানির সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেরিডোজের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে অনেক আগেই। তাদের কারিগরি সহযোগিতায় ই-পাসপোর্ট চালু হতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকার আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা ও সেনানিবাস—এই চারটি অফিস থেকে ই-পাসপোর্টের সুবিধা পাবেন পাসপোর্ট গ্রহীতারা। পর্যায়ক্রমে এটির কার্যক্রম ঢাকার বাইরে আঞ্চলিক অফিসগুলোতে চালু হবে। এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশের প্রায় ৭০টি মিশনেও ই-পাসপোর্ট পর্যায়ক্রমে চালু হবে। দুই ক্যাটাগরির ই-পাসপোর্ট চার ধরনের ফি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে জরুরি ও অতি জরুরি। মেয়াদ পাঁচ ও ১০ বছর।

২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ই-পাসপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়। জার্মানির সরকারি ভেরিডোজ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বহিগর্মন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, জার্মান কোম্পানি ৩০ লাখ ই-পাসপোর্ট বই সরবরাহ করবে।

সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার কথা ছিল গত জুলাই মাসে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটি চালু করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই বর্তমানে প্রচলিত মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) বই সংকট দেখা দেয়। ফলে সারাদেশে জরুরি পাসপোর্ট পেতেও বিলম্ব হয়। পরবর্তীতে জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ এমআরপি বই আমদানি করে সেই সঙ্কট সামাল দেওয়া হয়।

 

গতকাল বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সোহায়েল খান বলেন, ‘আমরা ই-পাসপোর্ট চালু করার সব কাজ সম্পন্ন করেছি। ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন করার জন্য আগামী ১৬, ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বরের যে কোন একদিন তারিখ চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি। সে অনুযায়ী ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ই-পাসপোর্ট ও এমআরপি দুটিই চালু থাকবে। নাগরিকরা যে ধরনের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবে, তাদের সেই পাসপোর্টই সরবরাহ করা হবে।

বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ই-পাসপোর্টের আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়ন করতে হবে না। এমনকি ছবি সংযোজন ও তা সত্যায়ন করারও দরকার হবে না। তবে পাসপোর্ট পেতে জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি লাগবে।

ই-পাসপোর্টের আবেদন ফি

ই-পাসপোর্টের পৃষ্ঠাসংখ্যা, মেয়াদকাল, বিতরণের ধরন অনুসারে ভ্যাট ছাড়া সর্বনিন্ম ফি ৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ফি ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে পাসপোর্টের জরুরি ফি ভ্যাটসহ ৩ হাজার ৪৫০ টাকা এবং অতি জরুরি ফি ভ্যাটসহ ৬ হাজার ৯০০ টাকা। ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে পাঁচ ও ১০ বছর। পাসপোর্টের পৃষ্ঠাসংখ্যাও হবে দুই ধরনের, ৪৮ ও ৬৪ পৃষ্ঠা। নতুন আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট বিতরণের পদ্ধতি তিন ধরনের। সাধারণ, জরুরি ও অতি জরুরি। দেশের অভ্যন্তরে সাধারণ আবেদনের ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিলে এবং অন্যান্য তথ্য সঠিক থাকলে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে ২১ কর্মদিবসের মধ্যে। জরুরিভাবে পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিলে এবং অন্যান্য তথ্য ঠিক থাকলে সাত কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট দেওয়া হবে। অতি জরুরি পাসপোর্ট ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনের মধ্যে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে পাসপোর্টের আবেদনকারীকে নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ করে আবশ্যিকভাবে আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। তবে পুরনো অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে অতীব জরুরি পাসপোর্ট দুই দিনে, জরুরি পাসপোর্ট তিন দিনে এবং সাধারণ পাসপোর্ট সাত দিনের মধ্যে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশে আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৩ হাজার ৫০০ টাকা, জরুরি ফি ৫ হাজার ৫০০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি সাত হাজার ৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার টাকা, জরুরি ফি ৭ হাজার টাকা ও অতীব জরুরি ফি ৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, জরুরি ফি সাত হাজার ৫০০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১০ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৭ হাজার টাকা, জরুরি ফি ৯ হাজার টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১২ হাজার টাকা।

ই-পাসপোর্ট করতে যা লাগবে

ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ (বিআরসি) অনুযায়ী। অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮বছরের কম) আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তার মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.