জ‌বি‌তে একা‌ধিক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অ‌ভি‌যোগ সাজ্জা‌দের বিরু‌দ্ধে

বাংলাদেশ
ইমরান হুসাইন, জগন্নাথ বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য় প্রতিনিধি, 
জগন্নাথ বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ে (জবি)  সাংবা‌দিক ও একা‌ধিক নারী শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে লাঞ্চনা ও হেনস্তার অ‌ভি‌যোগ উ‌ঠে‌ছে বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক শিক্ষার্থীর বিরু‌দ্ধে। এছাড়াও চাঁদাবাজি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটিরিয়ায় ফ্রি খাওয়ার অভিযোগও উঠেছে ঐ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টার অফিসে বিভিন্ন সময়ের অ‌ভি‌যোগ পত্র‌ থে‌কে জানা যায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী হলেন, সাজ্জাদ হোস‌েন এহসান । সে নাট্যকলা বিভা‌গের ১২তম আবর্তনের (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী। এছাড়াও সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা বিষয়ক সম্পাদক।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী সাজ্জাদ দীর্ঘদিন ধরেই বিশবিদ্যাল‌য়ের উপাচার্য ও প্রক্ট‌রের কা‌ছের মানুষ ব‌লে নিজেকে দাবি করে এসব অপরাধ করত ব‌লে এসমস্ত অ‌ভি‌যোগ পত্র থে‌কে জানা যায়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও আশেপাশের বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসমস্ত ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের মাইম্যান দাবি করে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি করায় তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেওয়ার সাহস পাইনি অনেকেই।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা মৌখিক অভিযোগ দিলেও লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে এতদিন ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) প্রক্টর অ‌ফিসে এক সাংবা‌দি‌কের অ‌ভি‌যোগ পত্র থে‌কে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ ভব‌নে ৪ তলায় অবস্থিত সাংস্কৃ‌তিক কেন্দ্রে কিছু ছে‌লে মে‌য়ে রাত ৭টা পর্যন্ত অবস্থান কর‌ছে এমন বিষয় সাংস্কৃ‌তিক কে‌ন্দ্রের সভাপ‌তি ফাইয়াজ হো‌সেন কে জানা‌নো হ‌লে সাজ্জাদ হোসেন এবং শিক্ষা ও গ‌বেষণা ই‌নিস্টি‌টিউ‌টের ১২ তম আবর্তনের সাইদুল ইসলাম সাইদ না‌মের দুজন জগন্নাথ বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের প্রেসক্লাব এর রু‌মে এ‌সে সেই  সাংবা‌দিক‌কে শাসাতে থাকে এবং এক পর্যায়ে গা‌য়ে হাত দেয়। এসময় সেই  সাংবা‌দিক‌কে অকথ্য ভাষায় গা‌লিগালাজ কর‌তে থা‌কে এবং ফোন কে‌ড়ে নেয়।
এ‌দি‌কে অ‌ভিযুক্ত সাজ্জাদ হো‌সে‌নের বিরু‌দ্ধে এর আগেও ইসলা‌মিক স্টা‌ডিজ এর ক‌য়েকজন নারী শিক্ষার্থীর গা‌য়ে হাত তোলার অ‌ভি‌যোগ অ‌া‌ছে।
প্রক্টর অ‌ফিস সূত্রে জানা যায়, কিছু‌দিন আগে ম্যানেজমেন্ট বিভা‌গের ১৩ তম আবর্তনের এক নারী শিক্ষার্থীকে ডে‌কে নানা ভা‌বে কুপ্রস্তাব দেয় সাজ্জাদ । ‌এক পর্যায়ে ওই নারী শিক্ষার্থী তৎকালীন সহকারী প্রক্টর কাজী না‌সির উ‌দ্দি‌নের কা‌ছে অ‌ভি‌যোগ দেন। অ‌ভি‌যোগ দেয়ার কার‌ণে সেই নারী শিক্ষার্থী‌কে হুম‌কি ধামকি দিয়ে হেনস্তা করে সে।
এ‌দি‌কে মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের  ক্যা‌ফেটি‌রিয়ায় ফ্রি খে‌তে না দেয়ায় এক কর্মচারী‌কে মারধর ক‌রে এবং ঐ কর্মচারীর মোবাইল কে‌ড়ে নেয়।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিষয়ে জানতে চাইলে নাট্যকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো: কামাল উদ্দিন বলেন, ঐ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে প্রক্টরিয়াল বডি থেকে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে আমাকে জানানো হয়েছে। তখন তাকে অামি এসমস্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে শাসিয়েছিও ।
এছাড়াও তার বিরু‌দ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম উপেক্ষা করে অ‌বৈধভা‌বে কু‌মিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ স‌মি‌তির সভাপ‌তি হওয়ার অভিযোগ রয়েছে । য‌দিও বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ে সকল ধর‌নের আঞ্চলিক সংগঠন কার্যক্রম সম্পূৃর্ণ নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন।
অভিযুক্ত ব্যক্তি কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের নেতা হয় জানতে চাইলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান উপদেষ্টা ড. বজলুর রশীদ খান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। এটা ছাত্রদের সংগঠন, ছাত্ররা নির্বাচনের মাধ্যমে পোস্টেড করে।
সাজ্জা‌দের বিষ‌য়ে জানতে চাই‌লে জ‌বি প্রক্টর ড.‌মোস্তফা কামাল ব‌লেন, তার বিরু‌দ্ধে ‌বেশক‌য়েক‌টি অ‌ভি‌যোগ আমরা লি‌খিত ও মৌ‌খিক ভা‌বে পে‌য়ে‌ছি। অ‌ভি‌যোগ তদন্ত ক‌রে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
এত অপরাধের পরও কেনো তাকে পূর্বেই শাস্তি দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কোনো লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এক নারী শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে তখন সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিলো, এধরণের ঘটনা যাতে আর না করে। অভিযুক্ত সাজ্জাদ হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে বারবার ফোন দিলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.