ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার ক্ষমতা নেই বাংলাদেশের

খেলাধুলা

রশিদ খানের বলে সৌম্য সরকার ক্যাচ দিয়ে ফিরতেই বাংলাদেশের হারে শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম টেস্ট। ব্যাট-বলের লড়াইয়ের বাইরে ক্রিকেটীয় জ্ঞান বলেও যে একটা কথা আছে, সেখানেও তো নবীন আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরে গেছেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়েরা। ভুল সিদ্ধান্তে ‘রিভিউ’র কোটা নষ্ট করে ফেলা যার একটি। সে ভুল না হলে বৃষ্টির এনে দেওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে হারের হাত থেকে রক্ষা পেতেও পারত বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে খুব প্রচলিত কথা, হার থেকে পাওয়া শিক্ষা। গত ২০ বছরের প্রত্যেক হারের পরই শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন সবাই। মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে আসা আফগানদের কাছে হারের পর অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছেন, ২০ বছরে এসে আর শিক্ষা নেওয়ার কথা মানায় না। সংবাদ সম্মেলনেও মত বদলাননি সাকিব। এমন হার থেকে বাংলাদেশ কোনো শিক্ষা পেল কি না? এমন প্রশ্নে সরাসরি উত্তর দিয়েছেন, ‘ফলাফল যদি দেখেন, আমি বলব অবশ্যই নিই। কারণ যদি আমাদের সেই যোগ্যতা থাকত, আমরা আরও ভালো কিছু দেখাতে পারতাম। তাইজুলেরটা ধরেন ব্যাট-প্যাড ছিল। যে এক দিন ক্রিকেট খেলেছে, তারও বোঝা উচিত ছিল এটা আউট (মিরাজের আউট)। স্বাভাবিকভাবে সে যদি রিভিউটা না নিত, তাহলে তাইজুল নিতে পারত।’

চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের দুটি রিভিউ নষ্ট হয়েছে মুশফিকুর রহিম ও মেহেদি হাসান মিরাজের সুবাদে। এর মধ্যে মিরাজের ভুলটা একদম শেষ মুহূর্তে হওয়ায় সেটাই বেশি চোখে লেগেছে। চতুর্থ দিনে রশিদ খানের বলে এলবিডব্লুর শিকার হন মুশফিক। ওই মুহূর্তেই আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই সঠিক বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানান মুশফিক। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেছে, ওই বল স্টাম্পে না লাগার কোনো সম্ভাবনা ছিল না, উল্টো মিডল স্টাম্পেই লাগত। ফলে নষ্ট হয় বাংলাদেশের একটি রিভিউ। এ নিয়ে কাল প্রশ্ন করা হলেও সরাসরি কোনো উত্তর দেননি সাকিব।

আজ অন্তিম মুহূর্তে দ্বিতীয় রিভিউটি নষ্ট করে আইসিইউতে থাকা রোগীর মুখ থেকে অক্সিজেন নল খুলে নেওয়ার মতো কাজটি করেছেন মিরাজ। রশিদের বলে মুশফিকের মতো একই ভঙ্গিতে এলবিডব্লু  হয়েছিলেন মিরাজ। এবারও পরিষ্কার আউট ছিল, তবু কী বুঝে রিভিউ নিয়েছেন মিরাজ। কিন্তু রিভিউ নিয়ে তো পরিষ্কার আউটকে নট আউট করা সম্ভব নয়। ফলে নিজে তো আউট হয়েছেনই, দলকে মহাবিপদে ফেলে গেছেন রিভিউ শেষ করে।

একটু পরই মিরাজের সিদ্ধান্তটা দলের জন্য কত ক্ষতিকর ছিল, সেটা প্রমাণিত হয়েছে। কোটা নষ্ট করে ফেলায় প্রয়োজনীয় সময়ে রিভিউ নিতে পারেননি তাইজুল ইসলাম। আফগান অধিনায়ক রশিদের বল তাইজুলের প্যাডে লাগলে এলবিডব্লু  দেন আম্পায়ার। সে সিদ্ধান্ত বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তাইজুল। কিন্তু রিভিউ নিয়ে সিদ্ধান্ত বদলাতে গিয়ে জানলেন রিভিউর কোটা শেষ। রিপ্লেতেও দেখা যায় প্যাডে লাগার আগে বল ব্যাটে লেগেছিল। আবার তাইজুল কিংবা নাঈমকে নিয়ে টেল এন্ডারদের নিয়ে ব্যাট করার নিয়ম মেনে চলেননি সৌম্য। সংবাদ সম্মেলনে স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধির এ ব্যাপারগুলো নিয়ে সরাসরি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন সাকিব, ‘তাইজুল আগের ইনিংসেও ভালো ব্যাটিং করেছিল। অনেকক্ষণ ডিফেন্স করেছিল। এই ধরনের ভুল (মিরাজের রিভিউ নেওয়া) হয়। সৌম্যও রান (ওভারের শুরুতে) নিয়ে মাথায় হাত দিয়েছে। ও আসলে বুঝতে পারছে না ওর ভূমিকাটা কী, ওর কী করা উচিত। এই জিনিসগুলো থেকে অনেক কিছু শেখার আছে, বোঝার আছে। কত দিন যে লাগবে শিখতে, এটা বড় ব্যাপার।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.