বিভিন্ন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বেশ কয়েক বছর ধরে জর্জরিত। রোগিদের সেবার মান, সময়মত চিকিৎসকের উপস্থিতি, রোগের পরীক্ষার যন্ত্রপাতির অভাব ইত্যাদি নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। শুক্রবার (১৬ আগষ্ট) সকালে কুমিল্লার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ইমদাদুল হক তালুকদার কুমেক হাসপাতাল নিয়ে তাঁর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন যা ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। আজকের কুমিল্লার অনলােইন পাঠকদের জন্য তা নিম্নে তুলে ধরা হল।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালঃ ভোর ৪ঃ৩০
—————————————————————
রাত ৩ঃ৩০। আমার স্ত্রীর হঠাৎ তীব্র পেট ব্যাথা। ও চিতকার করছিলো। খুব ঘাবড়ে গেলাম। ইমাজেন্সি এম্বুলেন্সের অনেকগুলো নম্বর নিয়ে কল করতে থাকলাম। কেউ কল ধরলনা। বড় বড় হাসপাতালের নম্বরে কল দিলাম। কেউ ধরলোনা। একজন দয়া করে এম্বুলেন্সের কল ধরে জানালেন তার এম্বুলেন্স ঢাকায়। পাওয়া গেলোনা। আমার মোটামুটি সব ড্রাইভারকে কল দিলাম। ধরলোনা। অসহায় অবস্থায় বাচ্চাকে ঘুম থেকে তুলে আমার স্ত্রীকে নিয়ে হাটা দিলাম ফাকা রাস্তায়। কিছুদূর গিয়ে একটা সিএনজি পেলাম। উনি যেতে রাজী হলেন। গেলাম কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ইমাজেন্সি তখন ঘুমোচ্ছে। অনেক কষ্ট করে ডিউটি ডাক্তার সাহেবের ঘুম ভাঙানো হলো। উনি কাগজে লিখে দিয়ে ৪ তলায় ৪১৭ নম্বর ওয়ারডে যেতে বললেন। গেলাম। ওখানে ১৫ মিনিট কাওকে পেলাম না। অবশেষে এক সিস্টার বা আয়া এমন কেউ এলেন। জানলাম ডাক্তার সাহেব ঘুমোচ্ছেন। পাক্কা আধা ঘন্টা ধরে দরজা নক করার পর উনি এলেন। দেখলেন। তারপর ব্যাবস্থাপত্র লিখতে গিয়ে দুটো কলমই কালি-শুন্য পেলেন। আবার গেলেন তার কক্ষে। গিয়ে ফিরলেন আরো ১০/১২ মিনিট পর। এদিকে বেশ কয়েকজন রোগী জমে গেছে। অবশেষে আমার স্ত্রীর ব্যাবস্থাপত্রে ওষুধ লিখলেন- এলজিন ইঞ্জেকশন, নরমাল স্যালাইন আর খাবার স্যালাইন। মজার বিষয় হলো ডাক্তার সাহেব সাথে অতিরিক্ত দুটো স্লিপ ধরিয়ে দিলেন। (ছবি সংযুক্ত)
স্লিপ-০১ঃ ৭টি টেস্টের নাম
স্লিপ-০২ঃ বাদুরতলার শেফা ও আজাদ ক্লিনিকের নাম।
মুখে বলে দিলেন এই টেস্টগুলো যেন ওখান থেকেই করাই। অনেকটা আদেশের মতো। আমি ভেজা বিড়ালের মতো বললাম, জি আচ্ছা।
এর মাঝে কথা হলো দেবিদার থেকে আসা এর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সজনের সাথে। তার মহিলা রোগীর প্লাটিলেট কমেই চলছে। এ নিয়ে উদবিগ্ন। কিন্তু মজার বিষয় হলো রোগীর ওয়াডে কোন ডাক্তার নেই। ডাক্তার আসবেন সকালে অথবা আরো পরে। (সেই লোকের ভিডিও ইন্টারভিউ সংযুক্ত)।
পরে আমার স্ত্রীকে নিয়ে চলে এলাম। ইঞ্জেকশনটা একটা বেসরকারী ক্লিনিকে গিয়ে পুশ করালাম।
উপলব্ধি-০১ঃ গরীবের জন্য কোন চিকিৎসা নেই
উপলব্ধি-০২ঃ ডেঙ্গু নিয়ে প্রান্তিক লেভেলে সরকারের নির্দেশনা কতটা ফলো করা হচ্ছে তা ভেবে দেখার আছে।
উপলব্ধি-০৩ঃ আমাদের স্বাস্থ্য সেবা ২৪ ঘন্টার নয়, বরং ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের (সরকারী/ বেসরকারী) দায়িত্বশীলদের মর্জি মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে।
উপলব্ধি-০৪ঃ অধিকাংশ বেসরকারী ক্লিনিক কেবল সকাল সন্ধ্যা দোকান খোলে। ব্যাবসা শেষে দোকান বন্ধ। রোগী জাহান্নামে যাক। যা আইনত দন্ডনীয়। ক্লিনিকে অবশ্যই ইমার্জেন্সি ডাক্তার থাকা বাধ্যতামূলক।
উপলব্ধি-০৫ঃ যত দায় আমাদের।
# রমজানে ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধ কর সকাল সন্ধ্যা
# রাত জেগে পাবলিক পরীক্ষার ব্যাবস্থাপনা কর
# ঘুম হারাম করে দূর্যোগ মোকাবেলা কর
# ইলেকশানে টানা রাত জেগে কাজ কর
# ঈদে নির্বিঘ্নে জনসাধারণের বাড়ী যাওয়া নিশ্চিত কর
# জাতীয় দিবসের প্রস্তুতিতে অঘুম রাত কাটাও
# বিশেষ সংকটে জেগে থাকো রাতের পর রাত আর খেটে যাও সংকট মোকাবেলায়।
মেডিকেল সেক্টরের জন্য করুণা। স্রষ্টা হেদায়েত দানব করুণ। আমিন।