কুমিল্লার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৩ ডেঙ্গু রোগী।

কুমিল্লা

কুমিল্লায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে জেলা সিভিল সার্জন ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (কুমেক) পরিচালক জানিয়েছেন, তারা কেউ কুমিল্লায় থাকা অবস্থায় আক্রান্ত হয়নি। তাদের বেশিরভাগই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত কুমেকে নয়জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। অন্যান্য হাসপাতালে দুজন চিকিৎসকসহ আরও চার জনের ভর্তির খবর পাওয়া গেছে। কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. স্বপন কুমার অধিকারী জানান, যারা ভর্তি হচ্ছেন পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন। বুধবার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে দুজন হাসপাতাল থেকে বিদায় নিয়েছেন। ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। কুমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। ঢাকায় গত সোমবার জ্বরে আক্রান্ত হই। মঙ্গলবার কুমিল্লায় এসে বুধবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখন কিছুটা সুস্থবোধ করছি।’ কুমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যাদের জ্বর ১০৪ ডিগ্রির বেশি তাদের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু আক্রান্তের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়ে থাকি। ইনডোরে মেডিসিন বিভাগেও রোগী ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারবেন। জরুরি বিভাগ থেকেও ভর্তি হতে পারবেন।’ কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান জানান, কুমিল্লা সদর হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও জেলার বেসরকারি হাসপাতালে দুজন চিকিৎসকসহ মোট চারজন রোগীর খবর জানতে পেরেছি। তারা ইতোমধ্যে ঢাকায় রেফার হয়েছেন। এছাড়াও সদর ও উপজেলাগুলোর সব হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে যথাযথ সেবা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন ডেঙ্গু জ্বর: প্রতিরোধের উপায় ডেঙ্গুর কোনো ভ্যাক্সিন নেই। যেহেতু ডেঙ্গু ভাইরাস চার টাইপের, তাই এই চারটি ভাইরাসের প্রতিরোধে কাজ করে, এমন ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত হয়নি। তাই ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের মূলমন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং এই মশা যেন কামড়াতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে, এডিস একটি ভদ্র মশা, অভিজাত এলাকায় বড় বড় সুন্দর সুন্দর দালান কোঠায় এরা বাস করে। স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে এই মশা ডিম পাড়ে। ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানি এদের পছন্দসই নয়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং একই সাথে মশক নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো ব্যক্তিগত সতর্কতা এবং এডিস মশা প্রতিরোধ। ব্যক্তিগত সতর্কতা: ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সতর্কতার গুরুত্ব অপরিসীম। মনে রাখতে হবে এডিস মশা মূলত দিনের বেলা, সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়, তবে রাত্রে উজ্জ্বল আলোতেও কামড়াতে পারে। তাই… দিনের বেলা যথাসম্ভব শরীর ভালোভাবে কাপড়ে ঢেকে রাখতে হবে, পায়ে মোজা ব্যবহার করা যেতে পারে। বাচ্চাদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট বা পায়জামা পড়াতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য দিনে ও রাতে মশারী ব্যবহার করতে হবে। দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে। প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট, স্প্রে, লোশন বা ক্রিম, কয়েল, ম্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে। বসতবাড়ির মশা নিধন: যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন বস্তুর মধ্যে ডিম পাড়ে যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে, তাই- ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, বাড়িঘরে এবং আশপাশে যেকোনো পাত্র বা জায়গায় জমে থাকা পানি ৩ থেকে ৫ দিন পরপর ফেলে দিলে এডিস মশার লার্ভা মারা যাবে। পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি ঘষে পরিষ্কার করলে ভালো । ঘরের বাথরুমে কোথাও জমানো পানি ৫ দিনের বেশি যেন না থাকে। একুরিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনারের নিচে এবং মুখ খোলা পানির ট্যাংকে যেন পানি জমে না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়ির ছাদে অনেককে বাগান করতে দেখা যায়, সেখানে টবে বা পাত্রে যেনো জমা পানি ৫ দিনের বেশি না থাকে, সেদিকেও যত্নবান হতে হবে। বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বসতবাড়ির বাইরে মশার বংশ বিস্তার রোধ: এই কাজগুলোর দায়িত্ব বর্তায় প্রশাসনে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের। ঘরের বাইরে মাঝে মাঝে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হওয়ার ফলে পানি জমতে পারে। যেমন: ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, কন্টেইনার, মটকা, ব্যাটারির শেল, পলিথিন/চিপসের প্যাকেটে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করতে হবে। মশা নিধনের জন্য স্প্রে বা ফগিং করতে হবে। বিভিন্ন রাস্তার আইল্যান্ডে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ফুলের টব, গাছপালা, জলাধার ইত্যাদি দেখা যায়। এখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকতে পারে। সেগুলোতেও যেনো পানি জমে না থাকে, সে ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। পরিশেষে বলা যায়, ডেঙ্গু জ্বর হয়তোবা নির্মূল করা যাবেনা, এর কোনো ভ্যাক্সিন কিংবা কার্যকরী ওষুধও আবিষ্কৃত হয়নি। ডেঙ্গু জ্বরের মশাটি আমাদের দেশে আগেও ছিল, এখনও আছে, মশা প্রজননের এবং বংশবৃদ্ধির পরিবেশও আছে। তাই ডেঙ্গু জ্বর ভবিষ্যতেও থাকবে। একমাত্র সচেতনতা ও প্রতিরোধের মাধ্যমেই এর হাত থেকে মুক্তি সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.