ছেলের নির্যাতনে খোলা আকাশের নিচে বাবা-মা !

বাংলাদেশ

মাত্র তিনকাঠা জমি। এর মধ্যে এককাঠা জমি বড় ছেলে হাসেম আলীর কাছে বিক্রি করে তার মা রওশন আরা। এই এক কাঠা জমি রেজিস্ট্রি করতে যেয়ে কৌশলে হাসেম আলী পুরাজমিটা নিজের নামে লিখে নেয়। এ ঘটনা তিন বছর আগের। এর পর থেকে বয়বৃদ্ধ মা রওশন আরা ও বাবা কাসেম আলীকে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে  হাসেম আলী ও তার বউ নাজমিন। বর্তমানে বৃদ্ধ স্বামী স্ত্রী খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে বসবাস করছে। ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামে। স্থানীয় গ্রামবাসী জানান গত তিন বছর আগে হাসেম আলী তার মাকে ফাঁকি দিয়ে তিনকাঠা জমি নিজের নামে লিখিয়ে নেন। এর পর ছেলে হাসেম আলী ও তার বৌও নাজমিন তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন করছে। এই বৃদ্ধ স্বামী স্ত্রীর যাবার কোন জায়গা না থাকায় তারা মুখ বুঝে নিরবে আত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছে। তাদের থাকার মাটির ঘরের পোতা কৌশলে কেটে ফেলা হয়েছে বর্ষা আসলে যেন তা ধ্বসে যায়। এ নিয়ে আমরাও ভিত এই ঘর ধ্বসে তাদের  না জানি কোন ক্ষয় ক্ষতি হয়। গ্রামবাসী  অভিযোগ করেন অভিযুক্ত হাসেম আলী ও তার স্ত্রীর সামনেই। এসময় হাসেম আলী ও তার স্ত্রী নিরব ছিলো।
গ্রামবাসীর আরো অভিযোগ  গত শুক্রবার কুলাঙ্গার ছেলে হাসেম বাবার হাতে ১শ টাকার নোট দিয়ে বলে বিষ কিনে খাও। সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষের কাছে ধর্না দিয়েও সুরাহা মেলেনি বাবা-মায়ের। মহাজনপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ৭নং ওয়ার্ড সদস্য সানোয়ার বেশ কয়েকবার তাদের সংসার ঠিক করে দিলেও একটুও কমেনি নির্যাতনের মাত্রা। বরং সমাজপতিদের কাছে যাওয়ার জন্য বাবা-মাকে মারধর করে না খেয়ে ফেলে রাখতো হাসেম ও তার স্ত্রী। বছর তিনেক আগে  হাসেমের বিচার করতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়েছিল। সেসময় হাসেম গ্রামবাসী ও মা-বাবার হাত-পা ধরে রক্ষা পায় । মা-বাবাকে দেখবে বলে কথা দিয়েছিলো কিন্তু সেকথা রাখেনি। আমরা গ্রামবাসী আবারও মোবাইল কোট চায়। হাসেমের মতো ছেলের বিচারে কঠোর হওয়া উচিৎ। আমরা সত্য বলবো, সঠিক ঘটনা তুলে ধরে স্বাক্ষী দেব। মা রওশন আরা বলেন,  আমাদের দুই ছেলে হাসেম ও মোসারেফ। একই গ্রামে মোসারেফ বিয়ে করে সেখানেই সংসার করে এবং বড় ছেলে হাসেম আমার নিজ বাড়িতেই থাকে। তিন বছর আগে হাসেমের নামে এক কাঠা জমি লিখে দিতে চায়। কিন্ত এই সুযোগে বউয়ের কথামত পুরো তিন কাঠা জমি কৌশলে নিজের নামে লিখে নেয় হাসেম। জমি রেজিস্ট্রির সময় আমাকে ভ্যানে করে রেজিস্ট্রি আফিসে নিয়ে যায়। ভ্যানে থেকে নামতে না দিয়ে তাড়াহুড়া করে ভ্যানের ওপরই দলিলে আমার সই নেন। তারপর থেকেই আমাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার নানান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হাসেম ও তার স্ত্রী নাজমিন। কি কারণে বাড়ি থেকে বরে করে দিতে চাই জানতে চাইলে বৃদ্ধ মা বলেন আমরা নাকি সংসারের বোঝা হয়ে গেছি, আমরা এই বাড়িতে থাকলে তাদের কোন উন্নতি হবে না। বৃদ্ধ পিতা কাসেম আলি বলেন আমাদের কষ্টের কথা বলতে সমাজের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেনি। ছোট ছেলে মোসারেফ সাহায্য করার জন্য আসলেও তাকেও শাসিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে হাসেম। এই ব্যাপারে ৭নং ইউপি সদস্য সানোয়া হোসেন বলেন আমি বিষয়টি মোটামুটি জানি আমরা অনেকবার চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারিনি। দুইকুল হারিয়ে কোন উপায় না পেয়ে দিশে হারা হয়ে পড়েছে বৃদ্ধ বাবা-মা। কষ্টের সাথে মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা। হাসেম আলী বলেন, আমার জমির সব কাগজ পত্র আছে।  অনেক জায়গায় বসাবসি হয়েছে । এখান কার চেয়ারম্যান মেম্বাররাও বসেছে। কেউ আমাকে হারাতে পারেনি। তিনি আরো বলেন আমার মেয়ে বড় হয়েছে তার বিয়ে দিতে হবে। বিয়ের জন্য পাকা ঘর করতে হবে। আর আমিতো তাদের নির্যাতন করিনা। গোয়াল ঘরের পাশে তাদের জন্য কুড়ে করে দেওয়া হচ্ছে সেখানে তারা অনায়াসে থাকতে পারবে। গ্রামবাসীর আভিযোগ সমন্ধে তিনি বলেন সাংবাদিকে এতো না জানলেও চলবে। আপনারা  নিউজ করার আগে চেয়ারম্যান মেম্বারের সাথে কথা বলে নিয়েন। আপনাদের সাথে লোক যোগাযোগ করবে তাদের কথা শুনবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.