আসছে ২শ’ কিমি গতির ইলেকট্রিক ট্রেন।

বাংলাদেশ

রেলপথে গতি আনতে ও যাত্রী সুবিধার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশে এই প্রথম চালু হতে যাচ্ছে ঘণ্টায় ২শ’ কিলোমিটার গতিবেগের ইলেকট্রিক ট্রেন। এ ট্রেনে দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর পাশাপাশি জ্বালানি খরচও হবে অনেক কম। রেলপথ সংলগ্ন বিদ্যুতের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকবে লোকোমেটিভের।

ঢাকা: রেলপথে গতি আনতে ও যাত্রী সুবিধার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশে এই প্রথম চালু হতে যাচ্ছে ঘণ্টায় ২শ’ কিলোমিটার গতিবেগের ইলেকট্রিক ট্রেন।

এ ট্রেনে দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর পাশাপাশি জ্বালানি খরচও হবে অনেক কম। রেলপথ সংলগ্ন বিদ্যুতের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকবে লোকোমেটিভের। এছাড়া দুইশ কিলোমিটার গতিবেগের ইলেকট্রিক ট্রেন চলার লক্ষ্য নিয়ে রেলপথ ও লোকোমেটিভসহ অন্যান্য অবকাঠামো ঢেলে সাজানো হবে।

রেল মন্ত্রণালয় সূত্র বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, লোড শেডিংয়ের কথা মাথায় রেখে বিদ্যুতের পাশাপাশি ডিজেলে চলাচলেরও ব্যবস্থা রাখা হবে। যাতে করে চলার পথে কোনো বিঘ্ন না ঘটে। সেই ক্ষেত্রে গতি কমে আসবে। প্রাথমিক ভাবে ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করতে প্রস্তাবিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫৮ কোটি টাকা।

রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম সেকশনে রেলওয়ে ইলেকট্রিফিকেশন করা হলে ঘণ্টায় ২শ’ কিলোমিটার রাস্তা অনায়াসে পাড়ি দেওয়া যাবে। যা রেলওয়ের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এর ফলে সেকশনে ‍হাই স্পিড ইলেকট্রিক ট্রেনের পাশাপাশি ভ্রমণ সময় ও অপারেশনাল কস্ট কমে আসবে এবং যাত্রীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ দেশের অন্যতম প্রধান এবং কেন্দ্রীয় শিল্প-ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্র। চট্টগ্রামের প্রধান সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ৩০ শতাংশ জনসংখ্যা নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাস করে। এছাড়া এই অঞ্চলে সহজেই বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে যে কারণে এই অঞ্চল দিয়ে চালু হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম ইলেকট্রিক ট্রেন।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দেশে এবার প্রথম চালু করতে যাচ্ছি ইলেকট্রিক ট্রেন। যা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি মাইল ফলক। জ্বালানি খরচ অনেকাংশে কমে আসবে। আমরা দেখেছি বিশ্বের অনেক দেশ ইলেকট্রিক ট্রেনে ঝুঁকছে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেড়শ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালাতে পারবো। পুরোপুরি ইলেকট্রিফিকেশন করা হলে গতি আরও বাড়বে। জনসংখ্যা ও গুরুত্বের কথা চিন্তা করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম রুটে এই ট্রেন চালু করা হবে। এই অঞ্চলে ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করা হলে পরিবহণ সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, ইলেকট্রিক ট্রেন সর্বোচ্চ লোড ক্যাপাসিটি এবং এনভায়রনমেন্টাল ফ্রেন্ডলি ট্রান্সপোর্ট সেবার পাশাপাশি এই ট্রেনগুলোর পরিবহণ ব্যয়ও কম। মাত্র চার ইউনিট বিদ্যুতে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারবে। প্রতি ইউনিট খরচ ১০ টাকা হলে এক কিলোমিটারে খরচ হবে মাত্র ৪০ টাকা। যেখানে ডিজেল চালিত ট্রেনে প্রতি কিলোমিটার জ্বালানি খরচ‍ হাজার টাকারও অধিক।

সচিব বলেন, প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির কাজ ইতোমধেই সফলভাবে শেষ হয়েছে। ‘নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় এই কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ৯৫৮ কোটি টাকা।

ইতোমধেই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পের সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে ৩১ জানুয়ারি সকাল ১০টায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করতে যাচ্ছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এর পরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় প্রকল্পটি  অনুমোদনের পরে টেন্ডারের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) শশী কুমার সিংহ বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পিইসি সভা হবে। এর পরে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টেন্ডার আহ্বান করবো। ইলেকট্রিক ট্রেন এবারই প্রথম বাংলাদেশে হতে যাচ্ছে। ইলেকট্রিক ট্রেন চালু হলে জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি যাত্রী দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারবেন ।’

এছাড়া প্রকল্পের ফিজিবিলি স্ট্যাডির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কার্যক্রম লক্ষ্য করা গেছে। সব প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে। প্রথমে ন্যাশনাল পাওয়ার গার্ড লাইন, গার্ড স্টেশনের নিকটবর্তী স্থানে ইলেকট্রিক্যাল সাব-স্টেশনগুলো স্থাপনের উপযুক্ত এলাকা নির্বাচন করা হবে। তবে ট্র্যাকশন রিকোয়্যারমেন্টের জন্য ইলেকট্রিক পাওয়ার সাপ্লাইয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)’র ইতিবাচক মতামত পাওয়া গেছে।

ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেমের জন্য আধুনিক পদ্ধতি অনুসন্ধান করা হবে। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে ৭ জন আন্তর্জাতিক ও ৯ জন দেশিয় পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি সার্ভে অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন করা হবে। প্রয়োজনীয় অফিস ইক্যুইপমেন্ট কেনা হবে। সব কিছুই করা হবে প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। সূত্র বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.