জন-জটের কবলে পড়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। একসঙ্গে অনেক মানুষ পর্বতারোহণ করতে গিয়ে তীব্র সংকটের সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে এভারেস্টের চূড়া থেকে নামতে গিয়ে সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে আরো তিন পর্বতারোহীর।
এই নিয়ে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৭ জন পর্বতারোহী মারা গেছেন এভারেস্টের বুকে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) এভারেস্ট জয় করে নামার পথে এই তিন পর্বতারোহী মারা যান। মারা যাওয়া পর্বতারোহীদের মধ্যে দু’জন ভারতের ও একজন অস্ট্রিয়ার নাগরিক। নিহতরা হলেন- ভারতের কল্পনা দাস (৫২) ও নিহাল বাগওয়ান (২৭)। ৬৫ বছর বয়সী অস্ট্রিয়ান নাগরিকের পরিচয় সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভারতের দু’জন নেপালের দিক দিয়ে ও অস্ট্রিয়ার পর্বতারোহী উত্তর তিব্বতের দিক দিয়ে এভারেস্ট জয় করেছিলেন।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এভারেস্টের চূড়ায় প্রচণ্ড ভিড়ে আটকে অক্সিজেন সংকটে পড়ে মারা গেছেন এই পর্বতারোহীরা। এদিকে, স্থানীয় এক সংগঠক কেশব পাউডেল এএফপিকে জানিয়েছেন, ভিড়ের কারণে তারা এভারেস্টের চূড়ায় প্রায় ১২ ঘণ্টা আটকে ছিলেন। এরপর তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।
এর আগে গেল বুধবার বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়ায় প্রাণ হারিয়েছিলেন একজন ভারতীয় ও একজন মার্কিন নাগরিক। ছবি তোলার সময় চূড়া থেকে পড়ে প্রাণ হারান ৫৫ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক ডোনাল্ড লিন ক্যাশ। আর চূড়ায় পৌঁছে নেমে আসার সময় মারা যান ভারতীয় নাগরিক অঞ্জলী কুলকার্নি, তার বয়সও ৫৫ বছর।
যে সংস্থার সঙ্গে অঞ্জলী এ অভিযানে গিয়েছিল তারা বলছে, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে তার নামতে বেশি সময় লেগেছে। আর এতেই তার মৃত্যু হয়েছে। চূড়ায় উঠতে যাওয়ার সময়ও তাকে লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে, নামার সময়ও লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। নামার সময় সে নিজে আর চলতে পারছিল না। শেরপারা তাকে নামিয়ে আনছিলেন। তবে নামার আগেই মারা যান তিনি।
গত সপ্তাহে আরও এক ভারতীয়র প্রাণ গেছে। গেল ১৬ মে একজন আইরিশ অধ্যাপকও একইভাবে মারা যান।
বুধবার ভালো আবহাওয়ার সুবিধা নিয়ে চীন ও নেপাল দুই প্রান্ত থেকে ২০০-এর বেশি পর্বতারোহী এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার অভিযান শুরু করে। এর ফলে একবারে অনেক বেশি মানুষ হয়ে যাওয়ার কারণে চূড়ায় উঠতে ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার উচ্চতায় পর্বতারোহীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টার অপেক্ষা করে থাকতে হয়। এতে তাদের ফ্রস্টবাইট ও উচ্চতাজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এই মৌসুমে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্বতারোহী এভারেস্টে ওঠার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছেন। এরই মধ্যে নেপাল ৩৮১ জন পর্বতারোহীকে এভারেস্টে ওঠার অনুমতি দিয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এক বছরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পর্বতারোহীর এভারেস্টে ওঠার রেকর্ডটা এ বছর ভেঙে যেতে পারে। গেল বছর সর্বোচ্চ ৮০৭ জন পর্বতারোহী এভারেস্ট চূড়ায় উঠেছিলেন। এভারেস্টে উঠতে একজন পর্বতারোহীর খরচ পড়ে প্রায় ১১ হাজার ডলার বা ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
গেল এক সপ্তাহে এভারেস্টে যত জন পর্বতারোহীর মৃত্যু হয়েছে, গত বছর সব মিলিয়েও সেখানে মৃতের সংখ্যা এত ছিল না বলে জানিয়েছে বিবিসি। গেল বছর এভারেস্টে পাঁচজন পর্বতারোহী মারা গিয়েছিলেন।
প্রতি বছরই এভারেস্টে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়তে থাকায় এভারেস্টে উঠতে ইচ্ছুক পর্বতারোহীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গেল বছর এভারেস্ট জয় করা ব্রিটিশ টেলিভিশন উপস্থাপক বেন ফগেল এভারেস্টে ওঠার অনুমোদন দেয়ার ব্যাপারে লটারি ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দিয়েছেন।সময় টিভি