ব্রাহ্মণপাড়ায় সালিসকারীকে হত্যার দায়ে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১০ জনের যাবজ্জীবন

কুমিল্লা

কুমিল্লায় সালিসকারীকে হত্যার ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং প্রত্যককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে এই রায় দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাকির হোসেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মো. মাছুম (৩৫), তাজুল ইসলাম (৩২), মো. মোস্তফা (২৪), মো. কাইয়ুম (২৫), মো. কাইয়ুম (২৮), মো. তবদুল হোসেন (৪০)। তাঁদের মধ্যে রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন মো. কাইয়ুম ও মো. তবদুল হোসেন। যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন মো. নানু মিয়া (৪০), মতিন মিয়া (৪০), সাইদুল ইসলাম (২৪), বাবুল মিয়া (২৫), সফিকুল ইসলাম (৩৫), মো. সফিকুল ইসলাম (২৮), মোসলেম মিয়া (৪৫), মো. হেলাল মিয়া (২৫), বিল্লাল হোসেন (৩০) ও আবদুল আউয়াল (৩০)। রায় ঘোষণার সময় মো. নানু মিয়া, মতিন মিয়া, বাবুল মিয়া, সফিকুল ইসলাম, মো. সফিকুল ইসলাম, মোসলেম মিয়া , মো. হেলাল মিয়া, আবদুল আউয়াল উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এই মামলার দুই আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন হিরণ মিয়া ও মনিরুল ইসলাম। এ ছাড়া মামলা চলাকালী ফুল মিয়া ও সেলিম নামের দুই আসামির মৃত্যু হলে আদালত মামলা থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেয়।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ছোট দুশিয়া এলাকার ফরিদ মিয়ার সঙ্গে একই এলাকার মাছুমের দীর্ঘদিনের সম্পত্তি নিয়া বিরোধ ছিল। এ ঘটনায় নুরুল হকের নেতৃত্বে কয়েকবার সালিস বৈঠক হয়। সালিস বৈঠকে ফরিদ মিয়ার ভিটাবাড়ি মাছুম মিয়ার দখল থেকে ফরিদ মিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তিনি রায় দেন। এরপর থেকেই আসামিরা বিভিন্ন সময়ে তাঁকে ভয়-ভীতিসহ হুমকি দিচ্ছিলেন। এ ঘটনার কিছুদিন পর ২০১১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি কুমিল্লা শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে সবজুপাড়া শিদলাই রোড এলাকায় মাছুমের পক্ষের লোকজন তাঁর ওপর হামলা করে। মাছুমের লোহার বল্লম দিয়ে নুরুল হকের বুকে চারটি আঘাত করেন। এ ছাড়াও ঘটনাস্থলে উপস্থিত মাছুমের পক্ষের লোকজন নুরুল হকের শরীরে বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরদিন তাঁর ছেলে মো. শরিফুল ইসলাম ব্রাহ্মণপাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন। আজ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

আইনজীবী মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, সালিসকারী নুরুল হক হত্যা মামলায় মোট ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার বিচার চলাকালীন দুই আসামি মারা যান। দুজনকে খালাস প্রদান করেছেন বিচারক। রায়ে সময় আদালতের এজলাসে ১০ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন। অপর ৬ আসামি পলাতক রয়েছে। এ মামলায় মোট ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসামি পক্ষের আইনজীবী আবদুল মুমিন ফেরদৌস জানান, তাঁরা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। এ দিকে রায় শেষে আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক মুজিবুর রহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.