কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে এক রাতে দুই বাড়ীতে ও এক দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ( ১৫ আগষ্ট) দিবাগত রাত ২টা থেকে রাত ৩ টা পর্যন্ত অস্ত্রধারী ১০-১৫ জনের একটি সঙ্গবদ্ধ ডাকাত দল উপজেলার লক্ষ্মীপুর দেনাতমুন্সীর বাড়ীর মৃত কালাচাঁন ভূইয়ার ছেলে ব্যবসায়ী তৌফিক মিয়া (৪৫) ও মৃত: ইসমাইল মিয়ার ছেলে ‘স’ মিল মালিক মো. শাহাব উদ্দিন (৬০) এবং লক্ষ্মীপুর মধ্যপাড়া গাবতলি মোড়ে হোসেন মিয়ার মুদির দোকানে এসব ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ব্যবসায়ী তৌফিক মিয়ার স্ত্রী দৌলেনা আক্তার (৩২) বলেন, শনিবার দিবাগত রাত ২-৩ টার মধ্যে ৮-১০ জন অস্ত্রধারী একদল ডাকাত তাদের বসত ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘরে থাকা স্টীলের আলমীরা ভেঙ্গে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল সেট, চার্জ লাইটসহ আসবাবপত্র লুট-পাট করে নিয়ে যায়। ‘স’ মিল ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দিনের স্ত্রী জাহানারা (৫৫) ও ছেলে সাইমন (২৪) বলেন, একই সময়ে ৫-৬ জন অস্ত্রধারী ডাকাত তাদের ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ঘরে থাকা স্টীলের আলমীরা ও সুকেশ ভেঙে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ আসবারপত্র লুট-পাট করে নিয়ে যায়। দোকান মালিক হোসেন মিয়া (৩০) বলেন, ওই রাতে সে দোকানে ছিলোনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার দোকানের দরজার তালা ভেঙ্গে কারা যেন নগদ টাকা ও মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। লুট-পাটকৃত মালামাল বেলাবো থানা পুলিশ উদ্ধার করে তাকে নিয়ে দেখালে সে ওইসব মালামাল তার দোকানের বলে সনাক্ত করেন। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে রোববার সকালে ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রেজওয়ান দীপু ও কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম সুলতান মাহমুদ ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন। এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম সুলতান মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এসব ঘটনায় মামলা রুজু করা হবে। এব্যাপারে স্থানীয় গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড সদস্য সাইদুজ্জামান জানান, এ সব ঘটনায় কুলিয়ারচর থানা পুলিশ একটি ডাকাতি ও একটি চুরি মামলা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জানা যায়, ওই রাতে ডাকাতরা কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায় ডাকাতি শেষে সিএনজি যোগে পার্শবর্তী বেলাবো উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চরকাশিমনগর ৭নং রোডের কাছে এসে পূণরায় ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়ার সময় জনতা টের পেয়ে যায়। এ সময় চরকাশিমনগর গ্রামের বিভিন্ন মসজিদে গ্রামে ডাকাত ঢুকার খবর প্রচার করলে মূহুর্তেই এলাকাবাসী তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলে। পরে জনতার গণপিটুনী ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ডাকাত দলের সদস্য সাইয়েদুল ইসলাম সাইক্কা (৩০) ঘটনাস্থলে মারা যায় এবং হেলিম নামে আরেক ডাকাত গুরুতর আহত হয়। এ সময় জনতার হাতে আটক হয় ডাকাত দলের আরো ৩ সদস্য । এ ঘটনায় রোববার (১৬ আগষ্ট) সকালে নরসিংদী শিবপুর সার্কেল মো. মেজবাহ উদ্দিন, বেলাবো থানার ওসি মো. সাফায়েত হোসেন পলাশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহত ডাকাতের লাশ উদ্ধার ও আহত ডাকাতকে চিকিৎসার জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। নিহত ডাকাত সাইয়েদুল ইসলাম সাইক্কা (৩০) কুলিয়ারচর উপজেলার সালুয়া গ্রামের নুরু মিয়া ছেলে। আটককৃত ডাকাত দলের সদস্য মো. হেলিম (৩৫) নরসিংদী উপজেলার সল্লাবাদ গ্রামের মৃত করম আলীর ছেলে, মো. বাবু (১৯) একই উপজেলার চরকাশিনগর গ্রামের আকাশ মিয়ার ছেলে ও মো. রাব্বি (১৯) চরবাঘবের ঝালুকান্দা গ্রামের ওমর ফারুকের ছেলে এবং হযরত আলী (৩৫) কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ভাটিপাঁড়া গ্রামের মধু মিয়ার ছেলে বলে জানা যায়। বেলাবো থানার ওসি মো. সাফায়েত হোসেন পলাশ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন,খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে এক ডাকাতের লাশ উদ্ধার করি এবং আহত অবস্থায় আরেক ডাকাতকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করি। এসময়রএ ওই এলাকাবাসী আটককৃত বাকী তিন ডাকাতকে ধরে আমাদের হাতে সোপর্দ করে।