ইফতার কেমন হওয়া উচিত

স্বাস্থ্য

রমজান মাসের রোজা যেহেতু ফরজ ইবাদত, মুসলিম দেশগুলোতে রমজান মাস এলে সবাই রোজা রাখার প্রস্তুতি নেয় এবং নিজেদের দৈনন্দিন কার্যাবলীর সময়সূচির মধ্যেও পরিবর্তন নিয়ে আসে। রমজান এলে বিকাল বেলা থেকেই ইফতারের জন্য বিভিন্ন প্রকার খাবার আয়োজনের ব্যস্ততা শুরু হয়। বিশেষ করে বাসাবাড়িতে নানা রকম সুস্বাদু ও মুখরোচক খাবারের আইটেম তৈরি করার প্রবণতা দেখা যায়।

মানুষের এই প্রবণতাকে কেন্দ্র করে, হরেক রকম ইফতারের পসরা সাজিয়ে দোকানিরা রাস্তার ধারে, ফুটপাতে, অলিতে-গলিতে বসে যায়। এ ইফতার সামগ্রীর মধ্যে যেগুলো থাকবেই তার মধ্যে রয়েছে খোলা খেজুর, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনী, ছোলা, মুড়ি, ডাল বড়া, সবজি বড়া, হালিম, বিভিন্ন ধরণের কাবাব, জিলাপি ইত্যাদি। এছাড়াও আছে বিভিন্ন ফল ও ফলের রস, আখের গুড়ের শরবত, বিভিন্ন রঙ মিশ্রিত বাহারি শরবত। আর হালের চিকেন ফ্রাই, বারবিকিউ এর পাশাপাশি চিরায়ত মুখরোচক খাবার-বিরিয়ানি, তেহারি ও ভুনা খিচুড়ি তো আছেই।

এখন প্রশ্ন হলো, এ সমস্ত মুখরোচক খাবার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে কিনা? আমাদের দেশের অধিকাংশ জায়গায় এসব মুখরোচক ভাজা খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ভেজাল তেল, বেসন ও কৃত্রিম রঙ। এছাড়াও একই তেল বারবার ব্যবহারের ফলে তেলের মধ্যে যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয় তা জেনে না জেনে সবাই একই তেল ব্যবহারের কাজটি করে যাচ্ছে।

একই তেল বারবার ব্যবহারে পলি নিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয় যার মধ্যে আছে বেনজা পাইরিন নামক ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ। তদুপরি, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ইফতার তৈরির ফলে ইফতার বিভিন্ন জীবাণু দিয়ে দূষিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যা পেটের পিঁড়ার কারণ হতে পারে।

ইফতারের সামগ্রীগুলো স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে না ভেজে বেশি তেলে ভাজা হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে ফল সংরক্ষণে ফরমালিনের ব্যবহার যে পরিমাণ বেড়েছে তাতে ভেজাল মুক্ত টাটকা ফল পাওয়া দুষ্কর। ফল কিনে এক ঘণ্টা ভিনেগারযুক্ত পানিতে ভিজিয়ে রাখলে কিছুটা ফরমালিন মুক্ত করা যায়। কিন্তু রাস্তা ঘাটে যে রকমারি শরবত বিক্রয় হয় সেগুলো আদৌ বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি হয় কিনা তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

একজন রোজাদার ইফতারিতে কি খাবেন তা নির্ভর করবে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বয়সের উপর। পারতপক্ষে দোকানের তৈরি ইফতার ও সেহরির খাবার না খাওয়াই ভালো। সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান রোজাদারের জন্য ইফতারে খেজুর বা খুরমা, ঘরের তৈরি বিশুদ্ধ শরবত, কচি শশা, ফরমালিন বা ক্যালসিয়াম কার্বাইডমুক্ত সতেজ মৌসুমী ফল, ভেজানো চিড়া থাকা ভালো।

এছাড়াও বাসায় তৈরি পরিমাণ মত বিশুদ্ধ তেলে ভাজা পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনী, জিলাপি এবং বুট ও মুড়ি রাখা যেতে পারে। অনেকে খাবারের আইটেমে ভিন্নতা আনতে নুডুলস, সেমাই, তেহারি, হালিম ইত্যাদি রাখেন। এ খাবারগুলো দোকান থেকে কেনার চেয়ে বাসায় তৈরি করে নেয়া উচিৎ।

আরো পড়ুন: সোনারগায়ে মেঘনা- নদীতে

মূলত, ইফতার হতে হবে এমন কতগুলো খাবারের মিশ্রণ, যেন তা খাদ্যের উপাদানগুলোকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করতে পারে। সারাদিন না খেয়ে থাকায় দিন শেষে রক্তে গ্লুকোজ কমে যায়। আর গ্লুকোজ হল মস্তিষ্কের খাদ্য। এ কারণে ইফতারে এমন আইটেম থাকা উচিৎ যা দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ করতে পারে।

ফল, ফলের রসের জুস এবং শরবত এ প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে এবং পাশাপাশি ভিটামিন ও খনিজ উপাদানও সরবরাহ করে। এগুলোর সাথে এমন কিছু উপাদান থাকা দরকার যা হজম হতে সময় নেয়। চিড়া, মুড়ি, আলুর চপ, ভাত, রুটি, তেহারি ইত্যাদি খাবার শরীরে হজম হতে সময় নেয়। এশা ও তারাবি নামাজের পর নিয়মিত অভ্যাস অনুযায়ী ভাত, মাছ, মুরগী বা মাংস, ডাল ও সবজি খাবেন।সূত্রে: ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.