স্মার্টফোনে আসক্তি কমাতে কাজ করছে অ্যাপল

তথ্যপ্রযুক্তি

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক

স্মার্টফোনে আসক্তি এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এর ভয়াবহতা পরিবার কিংবা সামাজিক পরিসর ছাড়িয়ে কর্মক্ষেত্রেও সমস্যা হয়ে উঠেছে। ব্যক্তিজীবনে তো বটেই, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কাজের আলাপচারিতার সময়ও কারো কারো চোখ পড়ে থাকে স্মার্টফোনে! চারপাশে কী হচ্ছে, সেসবে যেন খেয়াল করেন না তারা। সম্প্রতি নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ‘টাইম ১০০ সামিট’-এ নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক অনুদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুক। এ সামিটেই তিনি বলেন, আমরা চাই না মানুষ সার্বক্ষণিক বা আসক্ত হয়ে ফোন ব্যবহার করুক।

হাসিমুখে টিম কুকের এমন বক্তব্যের আড়ালে অনেকে তার চৌকস বুদ্ধিমত্তার বহিঃপ্রকাশ দেখছেন। অনেকে বলছেন, অবশ্যই তিনি চৌকস বুদ্ধিসম্পন্ন একজন সিইও। তবে তিনি যা-ই করুন বা বলুন না কেন, এর পেছনে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য আছে নিশ্চয়। তিনি সামিটে গোপনীয়তা ও ডিজিটাল ডিভাইসের স্ক্রিন টাইম বিষয়ে অ্যাপল অন্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে কীভাবে আলাদা, সে বিষয়ে কথা বলেন।

টিম কুক বলেন, বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে। দৈনিক জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সহজ করেছে স্মার্টফোন। এ ডিজিটাল অনুষঙ্গের নেতিবাচক দিক হলো, অনেক মানুষ আসক্ত হয়ে পড়েছে। আমরা চাই না মানুষ আসক্ত হয়ে স্মার্টফোন ব্যবহার করুক। এটা আমাদের উদ্দেশ্য না।

তিনি দাবি করেন, অ্যাপল ডিভাইসে বেশি সময় কাটানোর জন্য মানুষকে চাপ প্রয়োগ করা আমাদের উদ্দেশ্য না। টিম কুক আক্ষেপ করে বলেন, মানুষের ডিজিটাল ডিভাইসে স্ক্রিন টাইম নিয়ে নিয়মিত হাজার হাজার নোটিফিকেশন পাই। ডিজিটাল ডিভাইসে মানুষ এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছে যে অন্য মানুষের চেহারার দিকে তাকানোরও সময় নেই অনেকের। এটা সত্যি উদ্বেগের বিষয়।

টিম কুক বলেন, আমরা কোনোভাবেই মানুষের স্ক্রিন টাইম বাড়ানোর পক্ষে নই। ব্যবসার দিক বিবেচনায় আমরা ডিজিটাল স্ক্রিনে আরো বেশি সময় কাটানোর জন্য মানুষকে উত্সাহিত করতে পারি না। এছাড়া স্ক্রিন টাইম বাড়লেও আমাদের ব্যবসায় তা বাড়তি যোগ্যতা যোগ করবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, ডিজিটাল স্ক্রিন টাইম নিয়ে অ্যাপল সিইওর বক্তব্য স্পষ্ট এবং বেশ উচ্চমার্গীয়। তবে অ্যাপল আইফোনের মতো জনপ্রিয় ডিভাইস এবং সংশ্লিষ্ট ইকোসিস্টেমের উদ্ভাবক। অথচ এ ধরনের ডিভাইসকেন্দ্রিক নোটিফিকেশন অপছন্দ করেন টিম কুক। সত্যিকার অর্থে এখনো আইফোন এবং আইফোনকেন্দ্রিক সংশ্লিষ্ট সেবা ইকোসিস্টেম থেকে অ্যাপলের রাজস্বের সিংহভাগ আসছে। অ্যাপ ক্রয় এবং ইন-অ্যাপ পেমেন্ট খাত থেকে বিপুল অর্থ উপার্জন করছে অ্যাপল। ২০১৮ সালে সেবা খাত থেকে অ্যাপলের রাজস্ব আয় এক বছর আগের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৭২০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

টিম কুক তার বক্তব্যে জানিয়েছেন, ডিজিটাল ডিভাইসে অর্থবহ এবং ক্ষমতায়নে সহায়তা করে, এমন সময় ব্যয় করুন। অর্থাত্ নিজেকে সমৃদ্ধ করে ততটুকু সময় ডিভাইস স্ক্রিনে ব্যয় করা উচিত। বাকি সময় অন্য মানুষের সঙ্গে কাটান, যা মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়াবে।

ডিভাইস নির্মাতাদের জন্য স্মার্টফোন আসক্তি মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা সামাল দিতে হচ্ছে। স্ক্রিন টাইম বিষয়ে বাকি ডিভাইস নির্মাতাদের চেয়ে অ্যাপলের উদ্যোগ এরই মধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে। মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি তাদের নতুন ডিভাইসগুলোতে স্ক্রিন টাইম কমানোর লক্ষ্যে একাধিক ফিচার এনেছে। সূত্র :ম্যাশেবল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.